hindi Imposition

শেখার ভাষা

ইংরেজি ভাষাশিক্ষার বইয়ে এমনও দেখা যাচ্ছে যে, রোমান লিপিতে লেখা হয়েছে হিন্দি ও সংস্কৃত শব্দ/বাক্য; অথর্ববেদের সংস্কৃত শ্লোকাংশ বা ‘মেরা দেশ হুয়া রে রোশন লে কুরবান কিয়া তুঝ হি পে ইয়ে তন মন...’ ইত্যাদি।

শেষ আপডেট: ২৫ জুলাই ২০২৫ ০৫:২৫
Share:

বিদ্যালয় স্তরে পাঠ্যবইয়ের কাজ কী? এক-একটি বিষয়ের সঙ্গে বনিয়াদি স্তরে পড়ুয়াদের পরিচয় করিয়ে দেওয়া, তাদের আগ্রহ উস্কে দেওয়া, যাতে আর একটু বেশি জানার আগ্রহ জাগে। বিষয়টি যদি হয় ভাষাশিক্ষা, তবে পাঠ্যবইকেও হয়ে উঠতে হয় ছোটদের মতোই সহজ-সরল; নয়তো কঠিন শব্দ ও জটিল বাক্যবিন্যাসে অল্পবয়সিরা মুখ ফিরিয়ে নিতে পারে। এনসিইআরটি-র অষ্টম শ্রেণির ইংরেজি বই দেখলে এই আশঙ্কাই জাগতে বাধ্য— সেখানে এক-একটি অধ্যায়ে এমন সব ইংরেজি শব্দ এবং দীর্ঘ, জটিল বাক্য লেখা, ভাষাশিক্ষা-বিশারদদের মতে যা বড়দের জন্যও উপযুক্ত নয়। এখানেই শেষ নয়, ইংরেজি ভাষাশিক্ষার বইয়ে এমনও দেখা যাচ্ছে যে, রোমান লিপিতে লেখা হয়েছে হিন্দি ও সংস্কৃত শব্দ/বাক্য; অথর্ববেদের সংস্কৃত শ্লোকাংশ বা ‘মেরা দেশ হুয়া রে রোশন লে কুরবান কিয়া তুঝ হি পে ইয়ে তন মন...’ ইত্যাদি। পাঠ-নির্বাচন নিয়েও প্রশ্ন উঠতে পারে, এক কবির এমন একটি কবিতা বাছা হয়েছে যেখানে কৃষকেরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছেন ‘ব্রহ্মা’র প্রতি, ফসল ফলানোর জন্য তাঁদের ঘাম ঝরানোর বাস্তব ছবিটি সেখানে অনুপস্থিত।

বুঝতে অসুবিধা হয় না, এ ধরনের বই নিয়ে সমস্যা রয়েছে। সমস্যা আসলে বইয়ের নয়, যাঁরা এই বই ভেবেছেন তাঁদের ভাবনার: ভাষাশিক্ষার মৌলিক শর্ত ও প্রয়োজনীয়তা বুঝতে তাঁরা ব্যর্থ। স্কুলপড়ুয়াদের মাতৃভাষা বা তার চার পাশের প্রধান ভাষাটির বাইরে অন্য কোনও ভাষা বইয়ের মাধ্যমে শেখাতে গেলে দরকার সহজ শব্দ ও বাক্যবিন্যাস, যাতে তারা ভয় না পায়। অনেক সময় পড়ুয়ারা কোনও একটি পাঠের প্রেক্ষিত থেকেই অচেনা শব্দের অর্থ আন্দাজ করে নেয়। বইয়ের শব্দ-বাক্য জটিল ও দুর্বোধ্য হলে কল্পনা ও বাস্তবের সেই সেতুটি গড়া যায় না, কঠিন জিনিস পড়তে হবে এই ভয়ে ছোটরা পাঠ্যবইয়ের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলে, ভাষাটাই ভাল করে শেখা হয় না। এনসিইআরটি-র কর্তারা পড়ুয়াদের দিক থেকে বিষয়টি ভাবেননি; তাঁরা ভেবেছেন, একুশ শতকে কঠিন কঠিন শব্দ ও বাক্য বইয়ের মধ্য দিয়ে গিলিয়ে দিলেই পড়ুয়ারা ইংরেজি শিখে যাবে। গুণমানের স্বীকৃতিতে এনসিইআরটি-র বই দেশ জুড়ে বিপুল সংখ্যক স্কুলে পড়ানো হয়। কিন্তু এ রকম বই পড়ে সত্যিই ছোটরা ইংরেজি শিখছে কি না, কে তার হিসাব রাখছে!

এহ বাহ্য। এর থেকেও বড় সমস্যাটি বইয়ের নানা নমুনায় স্পষ্ট— স্কুলপড়ুয়াদের ঘুরপথে দেশপ্রেম ও জাতীয়তাবাদের রাষ্ট্রীয় বয়ানটি শেখানোর চেষ্টা। তা না হলে অষ্টম শ্রেণির ইংরেজি ভাষাশিক্ষার বইয়ে কেনই বা সংস্কৃত শাস্ত্রের শ্লোকাংশ বা হিন্দি বাক্যাবলি রোমান লিপিতে ঢুকে পড়বে, কোন বিবেচনায়? কেন্দ্রীয় সরকার যে ভাবে ক্রমাগত ‘এক দেশ, এক ভাষা’ বলে আগাগোড়া হিন্দির এবং সনাতন ভারতীয় ভাষা বলে কিছুটা সংস্কৃতেরও প্রচার-প্রসার করতে চাইছে, এনসিইআরটি-কর্তৃপক্ষও তা-ই চান বলে আশঙ্কা হয়। শুধু হিন্দি আর সংস্কৃতের অনধিকার প্রবেশেই নয়, ইংরেজি বইয়ের কবিতা নির্বাচনেও বর্তমান ভারতরাষ্ট্রের ‘সনাতন’ রূপটি ফুটে উঠছে, কৃষিজীবী মানুষের শ্রমের ‘এজেন্সি’ কেড়ে নিয়ে ছোটদের কাছে তাঁদের তুলে ধরা হচ্ছে শুধুই দেবনির্ভর নিয়তিবাদী রূপে। ভাষা শেখানোর প্রকৃত ভাষা এ নয়, এ হল স্কুলপড়ুয়াদের মগজধোলাইয়ের কৌশল। পাঠ্যবইকে এ ভাবে রাষ্ট্রীয় বয়ানের ধারক-বাহক করে তোলার সিদ্ধান্তকে প্রশ্ন করতেই হবে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন

এটি একটি প্রিমিয়াম খবর…

  • প্রতিদিন ২০০’রও বেশি এমন প্রিমিয়াম খবর

  • সঙ্গে আনন্দবাজার পত্রিকার ই -পেপার পড়ার সুযোগ

  • সময়মতো পড়ুন, ‘সেভ আর্টিকল-এ ক্লিক করে

সাবস্ক্রাইব করুন