ভাড়া বাড়ল ভারতীয় রেলের। নতুন নিয়ম অনুযায়ী, দূরপাল্লার এসি এবং নন-এসি ট্রেনে প্রতি কিলোমিটারে ন্যূনতম আধ পয়সা থেকে সর্বোচ্চ দু’পয়সা ভাড়া বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে শহরতলির টিকিট এবং সিজ়ন টিকিটের পাশাপাশি ভাড়া বাড়ছে না ৫০০ কিলোমিটার পর্যন্ত সাধারণ দ্বিতীয় শ্রেণির টিকিটেরও। সর্বশেষ ভাড়া সংশোধন করা হয়েছিল ২০২০ সালের জানুয়ারিতে। গত বছর ডিসেম্বরে মন্ত্রকের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির রিপোর্টে রেলের আয় বাড়াতে যাত্রী-ভাড়া বাড়ানোর উপরেই জোর দেওয়া হয়েছিল। তবে সেখানে সাধারণ শ্রেণিতে হাত না দিয়ে বাতানুকূল শ্রেণিতে ভাড়া বাড়ানোর মতো সংস্কারমুখী পদক্ষেপের কথা বলা হয়। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সাম্প্রতিক পদক্ষেপে রেলের বাড়তি ১৫০০ কোটি টাকা আয় হলেও আগামী দিনে তাতেও রেলের দৈন্যদশা কাটবে কি না, প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।
লক্ষণীয়, রেলের আর্থিক স্থায়িত্বের একটি গুরুত্বপূর্ণ সূচক হল ‘অপারেটিং রেশিয়ো’। এই অনুপাত দেখায় প্রতি ১০০ টাকা আয় করতে কত খরচ করতে হয় রেলকে। ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষে তা ছিল ৯৮.৩২। তার আগের বছরে ছিল ৯৮.৪৩। এর ফলে রেলের হাতে উদ্বৃত্ত অর্থ থাকে যৎসামান্যই। এ দিকে প্রতিটি যাত্রী-টিকিটে ৪৬ শতাংশ ছাড় দেওয়া হয়ে থাকে রেলের তরফে। এর ফলে ফি বছর যাত্রী-খাতে ৫৫,০০০ কোটি টাকার বেশি ভর্তুকি দিতে হয় রেলকে, দাবি খোদ রেলমন্ত্রীরই। সহজেই অনুমেয়, এই ভর্তুকি দিতে গিয়েই রেলের কোষাগার কার্যত শূন্য হয়ে পড়ে। সেই সঙ্গে রয়েছে রেলের দৈনন্দিন কাজ, বার্ধক্য ভাতা, জ্বালানির মতো অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ খরচও। এমতাবস্থায় নতুন প্রকল্পের জন্য অর্থবরাদ্দ করতে স্বাভাবিক ভাবেই প্রবল সমস্যায় পড়তে হয় রেল কর্তৃপক্ষকে। এর প্রভাব পড়ছে রেলের সামগ্রিক পরিষেবার উপরেও। পরিকাঠামোগত উন্নয়নে ফাঁক থেকে যাচ্ছে। নিয়োগের বিভিন্ন ক্ষেত্রে, বিশেষত নিরাপত্তা বিভাগে পদ থেকে যাচ্ছে শূন্য। ফলে সাম্প্রতিক কালে রেলের সময়ানুবর্তিতা, পর্যাপ্ত ট্রেন বা কামরার অভাব, যাত্রী-সুরক্ষা এমনকি যাত্রী-স্বাচ্ছন্দ্য নিয়েও অভিযোগ উঠছে অহরহ।
কিছু সময় অন্তর ভাড়া বৃদ্ধি অবশ্যই রেলের ক্ষতি পূরণের একটি পথ হতে পারে। বিশেষত আজকের দিনে, যেখানে অন্যান্য পরিবহণের তুলনায় রেল পরিবহণ তুলনায় সস্তা। তৎসত্ত্বেও কেন ভাড়া বাড়াতে পারে না রেল? কারণ, যে কোনও ভাড়া বৃদ্ধিই শেষ পর্যন্ত রাজনীতির বিষয়ে পরিণত হয়। ‘জনদরদি’ ভাবমূর্তি অক্ষুণ্ণ রাখতেই এ-হেন পদক্ষেপ থেকে পিছু হটতে হয় সরকারকে। প্রশ্ন হল, দেশে গণপরিবহণের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যমটি কেন রাজনৈতিক তরজার জেরে প্রতিনিয়ত ক্ষতিগ্রস্ত হবে? বরং জনদরদি পদক্ষেপ থেকে সরে এসে ভারতীয় রেলকে লাভজনক করে তুলতে কৌশলগত বিনিয়োগ, পরিচালন দক্ষতা এবং রাজস্ব বৈচিত্রের সমন্বয়ের উপরে আরও মনোনিবেশ করুক সরকার। তা ছাড়া, ভাড়া বাড়ানোর সময়ে লক্ষ রাখা উচিত বর্ধিত ভাড়া যেন কোনও শ্রেণির উপরেই অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি না করে। একই সঙ্গে বর্ধিত ভাড়ার সাপেক্ষে পরিষেবার মানটি যেন উন্নততর হয়, নজর রাখতে হবে সে দিকেও। সরকারের ভোলা উচিত নয়, জনসাধারণের স্বার্থ যেখানে জড়িয়ে, সেখানে আপস চলে না।
প্রতিদিন ২০০’রও বেশি এমন প্রিমিয়াম খবর
সঙ্গে আনন্দবাজার পত্রিকার ই -পেপার পড়ার সুযোগ
সময়মতো পড়ুন, ‘সেভ আর্টিকল-এ ক্লিক করে