Death

অবিবেচক

মানুষের মন তবু বয়সের মধ্যে উত্তর খোঁজে, গতায়ু মানুষটি অল্পবয়সি হলে শোকের ভার দুর্বহ হয়, আঘাতের অনুভব হয় অসহনীয়।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৬ মে ২০২২ ০৫:০৩
Share:

যে কোনও মৃত্যুই দুঃখের। মানুষের মন তবু বয়সের মধ্যে উত্তর খোঁজে, গতায়ু মানুষটি অল্পবয়সি হলে শোকের ভার দুর্বহ হয়, আঘাতের অনুভব হয় অসহনীয়। রবীন্দ্র সরোবরের জলে ঝড়বৃষ্টিতে রোয়িং-এর নৌকা উল্টে দুই স্কুলপড়ুয়া কিশোরের মৃত্যু এই কারণেই এত দুঃখজনক। দুর্ভাগ্যজনকও। সকালে স্বাভাবিক আবহাওয়ায় আন্তঃস্কুল রোয়িং প্রতিযোগিতায় সেমিফাইনালে উঠেছিল যে কিশোর দল, তাদের দু’জন বিকালে অনুশীলনের সময় ভয়ঙ্কর কালবৈশাখী ও তুমুল বৃষ্টিতে সরোবরের জলে তলিয়ে গেল, এই দুর্ঘটনার কোনও সান্ত্বনা হয় না। সম্ভাবনাময় দু’টি জীবনের গতি অকালে রুদ্ধ হল, এই আক্ষেপও মর্মভেদী।

Advertisement

বয়স, এবং তার সঙ্গে জড়িয়ে থাকা বিবেচনাবোধের ধারণাটি এই পরিপ্রেক্ষিতে বিশেষ উল্লেখের দাবি রাখে। দুর্ঘটনায় মৃতেরা ছিল কিশোর তথা নাবালক, প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত স্তরে ওঠার উত্তেজনা ও উদ্যম তাদের চালিত করেছিল বিকালের অনুশীলনে। এই সিদ্ধান্ত তাৎক্ষণিক ভাবে নিশ্চয়ই তাদের, কিন্তু সম্পূর্ণত তাদেরই কি? ছেলেদের অভিভাবকেরা, স্কুল কর্তৃপক্ষ, লেক কর্তৃপক্ষের অনুমোদনও এই সিদ্ধান্তের সঙ্গে জড়িয়ে, এর একটিরও অন্যথা হলে তারা বিকালে অনুশীলন করতে পারত না। এখন দুর্ঘটনা ও মৃত্যুর পরে কথা উঠেছে উদ্ধারকারী নৌকার গতিমন্থরতা, লেকে রোয়িং-এ নজরদারির লোকের অভাব, রোয়িং-চর্চাকারীরা প্রশিক্ষিত সাঁতারু ছিল কি না তা নিশ্চিত না করেই তাদের জলে নামতে দেওয়া— ইত্যাদি নিয়ে। এই সমস্ত বিবেচনাই কি অনেক আগে অন্যদের, বড়দের করা উচিত ছিল না? স্কুলপড়ুয়া কিশোরদের এ সব মাথায় আসার কথা নয়, তাদের বয়স কম বলেই তাদের কাছে তা সর্বদা প্রত্যাশিতও নয়। কিন্তু যে খেলার সঙ্গে জড়িয়ে আছে জল, বিস্তৃত ও গভীর জলাশয়ে দীর্ঘ কাল অতিবাহন এবং সর্বোপরি কিছু অল্পবয়সি জীবন— তাতে যে প্রাণের ঝুঁকি আছে, এবং খেলাটিকে সম্পূর্ণ ঝুঁকিমুক্ত করতে কয়েকটি জিনিস নিশ্চিত করা দরকার, বড়রা তা ভাববেন না? ঝড়বৃষ্টির পূর্বাভাস আজ প্রযুক্তির কল্যাণে হাতের মুঠোয়, অভিভাবকেরা তা দেখবেন না? রোয়িং প্রতিযোগিতাটি ছিল আন্তঃস্কুল উদ্যোগ; শুধু প্রতিযোগিতার সময়েই নয়, অনুশীলনের সময়ও যেন শিক্ষকেরা অল্পবয়সি ছাত্রদের চোখে চোখে রাখেন, সেই দায়িত্ব কি সংশ্লিষ্ট স্কুল কর্তৃপক্ষের, শিক্ষককুলের নয়?

এ বার— দু’টি কিশোর প্রাণের মূল্যে— হয়তো রবীন্দ্র সরোবরে নজরদারি জোরদার হবে, রোয়িং-এর পরিকাঠামো উন্নত হবে। পুলিশ, কেএমডিএ ও ক্লাব কর্তৃপক্ষের আলোচনায় এই প্রসঙ্গগুলিই উঠে আসার কথা। ক্লাব কর্তৃপক্ষের গাফিলতি বা অব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে, সেগুলি নির্মূল হলে, রোয়িং-এর উপযোগী আধুনিক পরিকাঠামো ও নজরদারি-বন্দোবস্ত হলে খুবই ভাল। কিন্তু তা যদি না হয়, বা সাময়িক কড়াকড়ি যদি গতানুগতিক ঢিলেমিতে পর্যবসিত হয়, তা হলে এগিয়ে আসতে হবে স্কুল কর্তৃপক্ষ, অভিভাবকমণ্ডলী, নাগরিক-গোষ্ঠী, পরিবেশকর্মী, সবাইকে। চাই সকলের প্রতিনিধিত্ব ও অংশগ্রহণে নিয়ম করে আলোচনা, পরিদর্শন, পরিস্থিতির মূল্যায়ন, সমস্যার আগাম সমাধানসূত্র। পুলিশ, প্রশাসন, ক্লাব কর্তৃপক্ষ অবিবেচনার পরিচয় দিলেও, এঁদের বিবেচনাবোধ যেন অপরিণত না হয়।

Advertisement
(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন