Assembly Election 2025

বিহারের শিক্ষা

পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনে লক্ষ্মীর ভান্ডার প্রকল্পটি প্রভাব ফেলবে, তা নিশ্চিত। এবং, এই জাতীয় প্রকল্পের ক্ষেত্রে বিরোধীদের প্রতিশ্রুতির চেয়ে ক্ষমতাসীন দলের কর্মসূচির উপরে মানুষের আস্থা বেশি থাকে, তা-ও কার্যত নিশ্চিত।

শেষ আপডেট: ২৭ নভেম্বর ২০২৫ ০৫:৩৫
Share:

বিহারের বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে যত কাটাছেঁড়া গত দু’সপ্তাহে হয়েছে, তার একটি উল্লেখযোগ্য অভিমুখ পশ্চিমবঙ্গের আসন্ন নির্বাচন। সেই আলোচনা নিতান্ত অনর্থক নয়। বিহারের ফল দেখে ভাবা প্রয়োজন, পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনে কোন প্রশ্নগুলি চালিকাশক্তি হতে পারে। প্রথমত, বিহারে পুরুষদের তুলনায় মহিলারা ভোট দিয়েছেন বেশি; এবং সব পর্যবেক্ষণই বলছে যে, সেই ভোটের সুফল পেয়েছে প্রধানত এনডিএ। নীতীশ কুমার তাঁর মুখ্যমন্ত্রিত্বের সূচনালগ্ন থেকেই মহিলাদের একটি পৃথক এবং গুরুত্বপূর্ণ ভোটব্যাঙ্ক হিসাবে বিবেচনা করেছেন। মেয়েদের জন্য সাইকেলের ব্যবস্থা করা থেকে তাঁদের দাবি মেনে রাজ্যে মদ নিষিদ্ধ করা, এগুলি নিশ্চয়ই মহিলা ভোটারদের তাঁর প্রতি ইতিবাচক করেছে। তবে, নির্বাচনের ঠিক আগে মুখ্যমন্ত্রী মহিলা রোজগার যোজনার অধীনে এক কোটি মহিলার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে দশ হাজার টাকা পাঠানো সম্ভবত সবচেয়ে বেশি কার্যকর হয়েছে। এ টাকা মহিলাদের নিজস্ব ব্যবসা করার জন্য— এবং, ছ’মাস পরে ব্যবসায়িক অগ্রগতির উপরে নির্ভর করে আরও ঋণ দেওয়ারও প্রতিশ্রুতি রয়েছে। এ ক্ষেত্রে লক্ষণীয় হল, বিরোধীশাসিত রাজ্যে বিজেপি যাকে ‘রেউড়ি রাজনীতি’ বলে অভিহিত করে, নিজেরা ক্ষমতায় থাকলে তাকেই উন্নয়ন নীতির তকমা দেয়। সে যা-ই হোক, পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনে লক্ষ্মীর ভান্ডার প্রকল্পটি প্রভাব ফেলবে, তা নিশ্চিত। এবং, এই জাতীয় প্রকল্পের ক্ষেত্রে বিরোধীদের প্রতিশ্রুতির চেয়ে ক্ষমতাসীন দলের কর্মসূচির উপরে মানুষের আস্থা বেশি থাকে, তা-ও কার্যত নিশ্চিত। এখন দেখার যে, পশ্চিমবঙ্গের রাজকোষের দীনদশার কথা মাথায় রেখে কোন পক্ষ তাদের প্রতিশ্রুতিকে কোন মাত্রায় নিয়ে যায়।

বিহারের নির্বাচনী ফলাফল বিশ্লেষণ করলে দেখা যাচ্ছে, বিজয়ী এনডিএ-র সমর্থক-ভিত্তি গোটা রাজ্য জুড়ে অধিকতর সুষম ভাবে বণ্টিত— এমনকি যে আসনগুলি বিরোধীপক্ষের ঘাঁটি হিসাবে পরিচিত, সেখানেও এনডিএ জোটের যথেষ্ট ভোট রয়েছে। অন্য দিকে, মহাগঠবন্ধনের দলগুলির ক্ষেত্রে সমর্থক-ভিত্তি বিক্ষিপ্ত— যেখানে সমর্থন আছে, সেখানে বিপুল সমর্থন; যেখানে নেই, সেখানে হাঁড়ির হাল। পরিসংখ্যান বলছে, সমর্থক-ভিত্তির বণ্টন সুষম হলে কঠিনতর লড়াইগুলি বার করে আনা তুলনায় সহজ হয়। সে ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেস অপেক্ষাকৃত সুবিধাজনক অবস্থানে থাকবে। অন্য দিকে, বিহারে জাতের ভিত্তিতে ভোটের পুরনো প্রবণতাটি অব্যাহত; উন্নয়নের ঘাটতিও শাসক দলের বিপক্ষে যায়নি বলেই অনুমান করা চলে। এই প্রবণতাগুলি দীর্ঘমেয়াদে নিশ্চিত ভাবেই নাগরিক-স্বার্থের পরিপন্থী। কিন্তু, ভারতীয় রাজনীতি বর্তমানে যে ধারায় প্রবাহিত, তাতে ভোটাররাও দীর্ঘমেয়াদি স্বার্থ নিয়ে সম্ভবত বিশেষ ভাবিত নন।

এসআইআর কি ভোটের ফলাফলে প্রভাব ফেলতে পারে? যদি কেবলমাত্র বিহারের ফলাফলের উপরে ভিত্তি করে এই প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়, তা হলে বলতে হবে যে, অন্তত এই ক্ষেত্রে ভোটার তালিকার নিবিড় সংশোধন ভোটের ফলাফলকে প্রবল ভাবে প্রভাবিত করতে পারেনি। কিন্তু, বিভিন্ন সূত্র থেকে যে অভিযোগগুলি শোনা যাচ্ছে, সেগুলিকে গুরুত্ব দিলে প্রশ্নের উত্তর পাল্টাবে। কাদের নাম বাদ পড়ল, সে কথার মতোই গুরুত্বপূর্ণ হল কাদের নাম নতুন করে তালিকাভুক্ত হল। আবার, গোটা রাজ্যে এসআইআর-এ কত নাম কাটা গেল বা ঢুকল, সে প্রশ্নটি তুলনায় কম গুরুত্বপূর্ণ। তার চেয়ে অনেক বেশি জরুরি আসনভিত্তিক হিসাব; আরও জরুরি একেবারে ব্লকভিত্তিক হিসাব। কারণ, যেখানে খুব কম ভোটের ব্যবধানে ফয়সালা হয়, সেখানে সামান্য অদলবদলই খেলা ঘুরিয়ে দিতে পারে। অতএব, এসআইআর-এর কাজে ঠিক কোন স্তরে নজরদারি প্রয়োজন, পশ্চিমবঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলিকে তা সচেতন ভাবে বুঝে নিতে হবে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন

এটি একটি প্রিমিয়াম খবর…

  • প্রতিদিন ২০০’রও বেশি এমন প্রিমিয়াম খবর

  • সঙ্গে আনন্দবাজার পত্রিকার ই -পেপার পড়ার সুযোগ

  • সময়মতো পড়ুন, ‘সেভ আর্টিকল-এ ক্লিক করে

সাবস্ক্রাইব করুন