নরেন্দ্র মোদী। —ফাইল চিত্র।
অন্ধকারের কোনও শ্রেণি হয় না, ভেদাভেদ করা যায় না। অন্ধকার সর্বদাই নেতির প্রতীক। ভাল আঁধার বা খারাপ আঁধার বলে কিছু হয় না। তাই অন্ধকার থেকে আলোয় আসার আহ্বান যদি জানাতেই হয়, তাহলে সে আহ্বান অন্ধকারে পড়ে থাকা প্রত্যেকের উদ্দেশেই হওয়া উচিত। কোনও নির্দিষ্ট অংশের প্রতি এমন আহ্বান জানানো হলে বিভ্রান্তি তৈরি হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
ইসলামের এ কাল- সে কাল সংক্রান্ত এক আলোচনায় অংশ নিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। আধুনিকতাকে আলিঙ্গন করা কতটা জরুরি, তা ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করলেন। ধর্মতত্ত্বকে ঠিকমতো বোঝার পরামর্শ দিলেন। ধর্মের সঙ্গে আধুনিকতার কোনও বিরোধ যে নেই, আরও অনেকের মতো নরেন্দ্র মোদীও তা বললেন। দেশের মুসলিম যুবসমাজকে ধর্মের নামে বিভ্রান্ত না হওয়ার পরামর্শ দিলেন। ধর্মের মানবিক মুখটাকে দেখার চেষ্টা করতে হবে এবং ধর্মের নামে যে গোঁড়ামির চর্চা হয়, তাকে বিসর্জন দিতে হবে— এমন এক বার্তা দিলেন।
এ নিয়ে কোনও সংশয় নেই যে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর এই বার্তা ইতিবাচক। কিন্তু শুধুমাত্র মুসলিম যুবসমাজকে বিভ্রান্ত না হওয়ার পরামর্শ দেওয়া বর্তমান পরিস্থিতি ও প্রেক্ষাপটে খুব বিবেচকের কাজ নয়। এতে অন্য রকমের বিভ্রান্তি ছড়াতে পারে। যাঁরা বিভ্রান্ত নন, তাঁদের অনেকে আচমকা বিভ্রান্ত হয়ে পড়তে পারেন।
সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন
এক হাতে কোরান থাক, অসুবিধা নেই, অন্য হাতে কম্পিউটারটা উঠুক— মুসলিম যুবসমাজের জন্য প্রধানমন্ত্রীর বার্তা অনেকটা এ রকমই। ধর্মতত্ত্ব যেন বিভ্রান্ত না করে, ধর্মীয় কারণে যেন মুসলিম যুবসমাজ বিচ্ছিন্ন হয়ে না পড়ে মূল স্রোত থেকে— প্রধানমন্ত্রীর বার্তা সম্ভবত এমনই। যে মুসলিম যুবা বিভ্রান্ত নন, মূল স্রোত থেকে বিচ্ছিন্ন নন, তিনি প্রশ্ন তুলতেই পারেন, এক হাতে কোরান থাকলে অন্য হাতে কম্পিউটার না থাকার আশঙ্কা রয়েছে, এমনটা প্রধানমন্ত্রীর মনে হল কেন? আবার কোনও অমুসলিম যুবার মনে হতে পারে, কোরান কোথাও সম্ভবত আধুনিকতার বিরোধী এবং সে তত্ত্বকে প্রধানমন্ত্রীও প্রকারান্তরে স্বীকৃতি দিলেন।
আরও পড়ুন: ধর্ম নয়, নিশানায় সন্ত্রাস, বার্তা মোদীর
আবার বলছি, প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্য নিয়ে সংশয় প্রকাশ করা এ নিবন্ধের উদ্দেশ্য নয়। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর যে আরও সতর্ক হয়ে মন্তব্য করা উচিত ছিল এ বিষয়ে, তা তো মানতেই হবে। অত্যন্ত সংবেদনশীল একটি বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। কথা বলেছেন এক নিদারুণ স্পর্শকাতর সময়ে দাঁড়িয়ে। যে সময়ে সন্ত্রাস ও বিচ্ছিন্নতাবাদের সঙ্গে মুসলিম সমাজের নামটা সামগ্রিকভাবে জড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে, প্রধানমন্ত্রী মোদী এমনই একটা সময়ে এ মন্তব্য করেছেন। বিভ্রান্তি ছড়ানোর আশঙ্কা অতএব কতটা প্রবল, তা প্রধানমন্ত্রীর বোঝা উচিত। প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্য মুসলিম সমাজ সম্পর্কে আর কোনও বিভ্রান্তিমূলক ধারণা চারিয়ে যাতে না দেয়, সে দায় কিন্তু সরকারকেই নিতে হবে।