যুদ্ধের প্রস্তুতি ভাল, পরিকল্পনা নয়

ভারত এবং চিন, দু’পক্ষই সম্যক ওয়াকিবহাল সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কে। তাই সীমান্তে চোয়াল শক্ত করা অবস্থানের পাশাপাশি কূটনৈতিক পথগুলোও খোলা হয়েছে। সে এক আশার আলো বটে।

Advertisement

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৪ জুলাই ২০১৭ ০৫:৩১
Share:

ডোকা লা-তে আরও সেনা মোতায়েন করছে ভারত।—ফাইল চিত্র।

হুঙ্কার আসছে। পাল্টা সতর্কবার্তা যাচ্ছে। সীমান্ত ক্রমশ উত্তপ্ত। সিকিমের প্রান্তে ভারত-চিন সীমায় যতটা সময় ধরে পরস্পরের চোখে চোখ রেখে অবস্থান করছে দুই প্রতিবেশীর সশস্ত্র বাহিনী, ততটা সময় ধরে এ রকম একটানা যুযুধান বিন্যাস এই দুই প্রতিবেশীর দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ইতিহাসে আগে কখনও দেখা যায়নি। জল যে দিশায় গড়াচ্ছে, তাতে যুদ্ধ অসম্ভব নয়। যদি যুদ্ধ হয়, তা হলে ভারতের বা চিনের কোনও লাভ হবে কি না, তা এই মুহূর্তে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে না। কিন্তু দু’পক্ষই যে বিপুল ক্ষয়ক্ষতির মুখ দেখবে, তা খুব হলফ করেই বলে দেওয়া যাচ্ছে।

Advertisement

ভারত এবং চিন, দু’পক্ষই সম্যক ওয়াকিবহাল সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কে। তাই সীমান্তে চোয়াল শক্ত করা অবস্থানের পাশাপাশি কূটনৈতিক পথগুলোও খোলা হয়েছে। সে এক আশার আলো বটে। কিন্তু অনেকটা সময় কেটে যাওয়া সত্ত্বেও যে কূটনৈতিক পথে কোনও সমাধান খুঁজে পাওয়া গেল না, তাতে উদ্বিগ্ন হওয়ার যথেষ্ট কারণও রয়েছে।

পশ্চিম সীমান্তে অস্বস্তি দীর্ঘ দিনের। বিদ্বেষভাবাপন্ন প্রতিবেশী পাকিস্তানের সঙ্গে যেন অনন্ত উত্তেজনা সেখানে। রয়েছে জঙ্গি অনুপ্রবেশের বিরুদ্ধে নিরন্তর লড়াইও। আর এক প্রতিবেশী নেপালের সঙ্গেও কূটনৈতিক টানাপড়েন এখন চোখে পড়ার মতো। দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের বসন্ত যেন উধাও। এমন এক পরিস্থিতিতে নতুন এক রণাঙ্গনের উদ্বোধন ঘটিয়ে উত্তর প্রান্তে বিপুল অস্তিত্ব নিয়ে অবস্থানরত প্রতিবেশীকে সঙ্ঘাতে আহ্বান করা বুদ্ধিমত্তার পরিচায়ক হবে না। সেনাপ্রধান বলেছেন, একটি নয়, দু’টি নয়, এক সঙ্গে আড়াইটি রণাঙ্গনে লড়তে প্রস্তুত ভারত। ভাল কথা। এমন সক্ষমতা বা এমন প্রস্তুতি থাকা নিঃসন্দেহে ভাল কথা। পারিপার্শ্বিকতায় যে পরিমাণ বৈরিতা নিয়ে পথ চলতে হয় ভারতকে, তাতে একাধিক রণাঙ্গনকে একসঙ্গে সামাল দেওয়ার প্রস্তুতি থাকা জরুরিও। কিন্তু প্রস্তুতি থাকলেই যে তার প্রয়োগও জরুরি, তেমন নয় একেবারেই। বরং প্রয়োগ এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টাই কাম্য। শুধু ভারতের তরফে নয়, অন্য যে কোনও তরফেই কাম্য।

Advertisement

দুই পরমাণু শক্তিধর রাষ্ট্রের মধ্যে সঙ্ঘাতের পরিণতি কী হতে পারে, তা বোঝার মতো পরিণত মস্তিষ্ক দু’দেশেই রয়েছে বলে আশা করা যায়। তা সত্ত্বেও চিন ভারতকে মনে করিয়ে দিতে চায়, ১৯৬২ সালে কী হয়েছিল। ভারত চিনকে মনে করিয়ে দেয়, এটা ২০১৭ সাল। যুদ্ধ এড়ানোর জন্য কার বার্তা অধিকতর কার্যকরী হতে পারে, বলা খুব শক্ত। কিন্তু ভারত এবং চিনকে যে নিজেদের স্বার্থেই পারস্পরিক সঙ্ঘাত এড়াতে হবে, তা বুঝে নেওয়া একেবারেই শক্ত নয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন