Putin

বিধির বাঁধন

বাঁধন যত কঠিন হয়, মানুষের ক্ষোভও ততই বহুমুখী ধারায় প্রবাহিত হইতে থাকে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০২:১৬
Share:

আলেক্সেই নাভালনি

খানিক রসিকতার সুরেই বলা হয়, রাশিয়ায় বিরোধী রাজনৈতিক নেতারা হয় গ্রেফতার হন, নয়তো খুন। বিগত ১৯ অগস্ট এই প্রসঙ্গ লইয়া ঠাট্টা করিয়াছিলেন বর্তমান বিরোধী নেতা আলেক্সেই নাভালনি। পরের দিনই বিষের প্রকোপে মৃত্যুর দ্বারপ্রান্তে উপনীত হন তিনি। মাসাধিক কাল জার্মানিতে চিকিৎসাধীন থাকিবার পর সুস্থ হইয়াছেন নাভালনি, তাঁহার শরীরে নোভিচোক নামক নার্ভ এজেন্ট প্রয়োগ করিবার অভিযোগ উঠিয়াছে ক্রেমলিনের বিরুদ্ধে। শাসকের তরফে স্বভাবতই এই অভিযোগ অস্বীকার করা হইতেছে। ইতিমধ্যেই শাসকদের পক্ষে অধিকতর অস্বস্তির উপাদান উপস্থিত হইয়াছে। তোমস্ক আইনসভায়— যে শহরে আক্রান্ত হইয়াছিলেন নাভালনি— অধিকাংশ আসনে পরাজিত হইয়াছে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের দল ইউনাইটেড রাশিয়া। রাশিয়ার তৃতীয় বৃহত্তম শহর তথা তোমস্কের প্রতিবেশী নভসিবিরস্ক-এও নাভালনির সমর্থকদের নিকট সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারাইয়াছে তাহারা। বস্তুত, কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণের সুযোগ না থাকায় মিউনিসিপ্যাল স্তরের এই নির্বাচনে দেশের সর্বত্রই সাফল্য লাভ করিয়াছেন বিরোধী প্রার্থীরা। আবার, আঞ্চলিক নেতা নির্বাচনের পদ্ধতিটি সম্পূর্ণ বিপরীত। যেখানে ক্রেমলিনের সম্মতি ব্যতীত পাতাটি নড়ে না, সেখানে ৮০ শতাংশের অধিক ভোটে জয়যুক্ত হইয়াছেন শাসকের অনুগামীবৃন্দ। ভোট-পর্যবেক্ষক গোষ্ঠীর একাংশের অভিযোগ, এই দফার নির্বাচনে ব্যালটে কারচুপি হইতে ভুয়া প্রার্থী দাঁড় করানো, তূণের কোনও বাণই অবশিষ্ট রাখে নাই শাসক দল। তবুও যেখানে যেটুকু মতপ্রকাশের সুযোগ মিলিয়াছে, জনতা বুঝাইয়া দিয়াছে যে, স্রোত এক্ষণে বিপরীতমুখী।

Advertisement

বেশ কিছু দিন যাবৎ পুতিনের জনপ্রিয়তা নিম্নগামী। সাম্প্রতিক সমীক্ষা বলিতেছে, গত বারের তুলনায় তাঁহার প্রতি জনতার ভরসা হ্রাস পাইয়াছে ২৩ শতাংশ। পর্যবেক্ষকদের মত, তাঁহার প্রশাসনের কর্তৃত্ববাদী নিয়ন্ত্রণ যত বৃদ্ধি পাইতেছে, তৃণমূল স্তরে সরকার-বিরোধী রাজনৈতিক সংহতি তত পোক্ত হইতেছে। বিশেষত, দেশের যুবসমাজে পুতিনের শাসন লইয়া অসন্তোষ সর্বাধিক। ইহার কারণ, সম্পূর্ণ একটি প্রজন্ম পুতিন ব্যতীত অপর কোনও নেতাকে দেখে নাই; স্থবিরতা তাহাদের ক্লান্ত করিয়াছে। এই সূত্রে সোভিয়েট ইউনিয়নের লিয়োনিদ ব্রেজনেভের আমল স্মরণে আসিতে পারে, যাঁহার ‘স্থবিরতার যুগ’ কমিউনিস্ট জমানার পতন সূচিত করিয়াছিল।

অনেকের আশঙ্কা, কৌশল কার্যকর হইবে না বুঝিলে আইনসভার নির্বাচন আগাইয়া আনিতে পারেন পুতিন, যদিও সূচি পরিবর্তন বিগত বৎসরের মস্কো নির্বাচনে তাঁহার দলের পরাজয় ঠেকাইতে পারে নাই। সাম্প্রতিক প্রবণতা অনুসারে, রুশ যুব সম্প্রদায় আরও বেশি করিয়া রাজনীতিতে যুক্ত হইতেছে। বেলারুসের আন্দোলন শিখাইতেছে, ব্যালট বাক্সে মতপ্রকাশ করিবার সুযোগ না থাকিলে, জনতা ভিন্নতর পথ খুঁজিয়া লয়। বজ্রমুষ্টিতে শাসন করিবার নীতিটি পুতিনকে শেষ অবধি রাজনৈতিক বিপদে ফেলিবে কি না, সেই প্রশ্ন প্রকট। বস্তুত, প্রশ্নটি শুধু রাশিয়ার নহে, গোটা দুনিয়ার কঠোর শাসকদের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। বাঁধন যত কঠিন হয়, মানুষের ক্ষোভও ততই বহুমুখী ধারায় প্রবাহিত হইতে থাকে। ইহাই গণতন্ত্রের জোর।

Advertisement
(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন