উল্টা ফল

এই প্যারাডক্স যে আবিষ্কারের পথ প্রশস্ত করে, তাহা বিশেষ আপেক্ষিকবাদ।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৩ নভেম্বর ২০১৯ ০০:২০
Share:

প্রতীকী চিত্র।

ইংরাজি ‘প্যারাডক্স’ শব্দটির অর্থ বৈপরীত্য করা যাইতে পারে। অসামঞ্জস্য অথবা উল্টা ফলও ধরা যাইতে পারে। প্রাতঃস্মরণীয় বিজ্ঞানী নিলস বোর প্যারাডক্স খুব ভালবাসিতেন। গবেষণায় প্যারাডক্স উপস্থিত হইলে যৎপরোনাস্তি উৎসাহিত হইয়া উঠিতেন। এই কারণে যে, তাঁহার মনে হইত, গবেষণায় ফল অসমঞ্জস হইলে অগ্রগতির পথ প্রশস্ত হয়। ধারণাটি যে মিথ্যা নহে, তৎস্বপক্ষে প্রভূত উদাহরণ বিদ্যমান। অতীতে বিশ্বাস করা হইত, শব্দের ন্যায় আলোকও কোনও মাধ্যমে সন্তরণ কাটিয়া অগ্রসর হয়। বায়ুমাধ্যম না থাকিলে যে শব্দ বিস্তার লাভ করিতে পারে না, তাহা জানা ছিল। ওই জ্ঞান হইতে এবম্বিধ ধারণার উৎপত্তি যে, আলোকের বিস্তার লাভের নিমিত্তও একটি মাধ্যম আবশ্যক।

Advertisement

দূর-দূরান্ত হইতে নক্ষত্রের আলো পৃথিবীতে আসিয়া পৌঁছাইতেছে। মহাবিশ্বের সর্বত্রই তাহা হইলে একটি মাধ্যম বিরাজমান থাকিতে হয়। তেমন কোনও মাধ্যম খুঁজিয়া পাওয়া না গেলেও উক্ত বিশ্বাস অটুট ছিল। এমত ধারণা ছিল যে, সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম পরীক্ষায় যথা কালে ওই রূপ মাধ্যমের অস্তিত্ব আবিষ্কৃত হইবে। ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষ পাদে জটিল পরীক্ষা প্রমাণ করে উক্ত মাধ্যম অলীক। এই প্যারাডক্স যে আবিষ্কারের পথ প্রশস্ত করে, তাহা বিশেষ আপেক্ষিকবাদ। আলবার্ট আইনস্টাইন তাঁহার আবিষ্কৃত ওই তত্ত্বে অলীক মাধ্যমটির অনস্তিত্ব কাজে লাগান। এই রূপ আর একটি প্যারাডক্সও পদার্থবিদদের ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষে বিভ্রান্ত করে। উত্তপ্ত বস্তুর যে ভাবে তাপ বিকিরণ করার কথা, সেই ভাবে বিকিরণ করে না। ইহাও প্যারাডক্স হিসাবে গবেষকদিগের সম্মুখে মূর্তিমান ছিল। অবশেষে সেই ধাঁধার সমাধান করেন জার্মান বিজ্ঞানী ম্যাক্স প্লাঙ্ক। তাহা করিতে গিয়া তিনি পদার্থবিদ্যার একটি নূতন শাখা খুলিয়া দেন। শাখাটির নাম কোয়ান্টাম মেকানিক্স।

জ্যোতির্বিজ্ঞানে দুইটি সাম্প্রতিক আবিষ্কার প্যারাডক্স হিসাবে প্রতীয়মান। আবিষ্কার দুইটির একটি নক্ষত্র ও অপরটি গ্রহ। নক্ষত্রটি পৃথিবী হইতে ৪,৬০০ আলোকবর্ষ দূরবর্তী। উহার নাম ধার্য হইয়াছে জে০৭৪০+৬৬২০। আমেরিকায় ন্যানোগ্র্যাভ ফিজ়িক্স ফ্রন্টিয়ারস সেন্টার-এর গবেষকরা গ্রিন ব্যাঙ্ক টেলিস্কোপে উহার সন্ধান পাইয়াছেন। নক্ষত্রটি সূর্যের তুলনায় ২.১৭ গুণ ভারী, তথাপি উহার ব্যাস মাত্র ৩০ কিলোমিটার। ইহার অর্থ এই যে, উক্ত নক্ষত্রের এক শুগার কিউব আয়তনের ওজন হইবে প্রায় দশ কোটি টন। পদার্থ ওই নক্ষত্রে চরম নিষ্পেষিত অবস্থায় বিদ্যমান। নক্ষত্রটি এক্ষণে মৃত। উহাতে অগ্নিকুণ্ড নির্বাপিত। অগ্নি প্রজ্বলন অন্তে বিস্ফোরণও ঘটিয়াছিল এই নক্ষত্রটির ক্ষেত্রে। তাই ইহা মৃত। এত ভারী নক্ষত্রের ব্ল্যাক হোল বনিবার কথা। তথাপি জ্যোতির্বিজ্ঞানীগণ দেখিয়াছেন উক্ত নক্ষত্রটি ব্ল্যাক হোলে পরিণত হয় নাই। কেন? প্যারাডক্স দেখিয়া জ্যোতির্বিজ্ঞানীগণ যারপরনাই চিন্তিত। দ্বিতীয় যে পর্যবেক্ষণে তাঁহারা কিংকর্তব্যবিমূঢ়, তাহা এক গ্রহের আবিষ্কার। স্পেন দেশের দক্ষিণাঞ্চলে সমুদ্রপৃষ্ঠ হইতে ২,১০০ মিটার উচ্চতায় নির্মিত কালার অল্টো অবজ়ারভেটরির জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা পৃথিবী হইতে ৩০ আলোকবর্ষ দূরবর্তী একটি গ্রহের সন্ধান পাইয়াছেন। গ্রহটিকে তাঁহারা জিজে৩৫১২বি নামে অভিহিত করিয়াছেন। ওই জিজে৩৫১২বি এক মূর্তিমান প্যারাডক্স। এই কারণে যে, গ্রহটি যে নক্ষত্রকে আবর্তনরত, তাহা নিতান্তই ক্ষুদ্র, ভর সূর্যের এক দশমাংশমাত্র। অথচ, জিজে৩৫১২বি গ্রহ হিসাবে অতিকায়, ভর প্রায় বৃহস্পতির অর্ধেক পরিমাণ। ক্ষুদ্র নক্ষত্রের চারিপার্শ্বে অতিকায় একটি গ্রহ কেমন করিয়া ঘুরিতেছে— ভাবিয়া বিজ্ঞানীদের মস্তক ঘূর্ণমান!

Advertisement

আরও পড়ুন: আপত্তি কেন

প্যারাডক্স যুগল কি নূতন জ্ঞানের সন্ধান দিবে? সে সম্ভাবনা বিশেষজ্ঞগণ উড়াইয়া দিতেছেন না। অগ্নি প্রজ্বলন অন্তে নক্ষত্রের দশা স্থির হয় অভিকর্ষ বলের দ্বারা। সেই রূপ গ্রহের কলেবরও নির্ধারিত হয় উক্ত বলের ক্রিয়ায়। প্রাকৃতিক ঘটনার মূলে বিজ্ঞানীগণ চারটি বলের ভূমিকা আবিষ্কার করিয়াছেন। তড়িচ্চুম্বকীয় (যাহার ক্রিয়ায় ফ্যান ঘুরে), মৃদু (যাহা তেজস্ক্রিয়তা ঘটায়), দৃঢ় (যাহা পরমাণুর কেন্দ্রে উপাদানগুলিকে আষ্টেপৃষ্ঠে বাঁধিয়া রাখে) বল এবং অভিকর্ষ (যাহা বৃক্ষের আপেলকে ভূপৃষ্ঠে টানিয়া আনে)। প্রথম তিনটির চরিত্র বুঝা গেলেও, অভিকর্ষের রহস্য বিজ্ঞানীরা সমাধান করিতে পারেন নাই। অতিকায় নক্ষত্র এবং গ্রহের জনক যে হেতু মূলত অভিকর্ষ, সেই হেতু প্যারাডক্স যুগল হয়তো উক্ত বলের সুলুক-সন্ধানে বিজ্ঞানীদিগকে সাহায্য করিবে। প্যারাডক্স পুনর্বার বিজ্ঞান জগতে সাফল্য আনিবে।

যৎকিঞ্চিৎ

পুরীর পর এ বার দিঘাতেও হোটেলে চুরি। ঘরে ঘুমের ওষুধ ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। এ বার বরং বেড়াতে গিয়ে সারা দিনটা ঘুমিয়ে কাটান, রাতে ঠায় জেগে পাহারা দিন। চোর জানালায় উঁকি দিলেই বলুন, ‘রুম সার্ভিস?’ পছন্দ হল না? বেশ, অনিদ্রা রোগী ঠাম্মাকে ভ্রমণকালে আত্মীয়ের বাড়ি চালান না করে, সঙ্গে নিয়ে যান। রাতে জানালার সামনে বসিয়ে রেখে বলুন, ঠাকুর দেখা দেবেন, তক্ষুনি আমাদের ডেকো। যদি তিনিও চোরের ওষুধে ঘুমিয়ে পড়েন? ভাল তো, অনিদ্রা সেরে গেল!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন