Editorial News

ঘটমান উপন্যাস হয়ে উঠেছে যেন তাঁর জীবন

এই অবস্থা থেকে মুক্তি চেয়েছেন হাদিয়া। তিনি স্বাধীনতা চেয়েছেন। যাঁকে তিনি ভালবাসেন, দীর্ঘ দিন সেই মানুষের থেকে দূরে রাখা হয়েছে তাঁকে, অভিযোগ করেছেন হাদিয়া। ভালবাসার মানুষের কাছে ফিরতে চেয়ে আকুল আর্তি জানিয়েছেন। আদালতের পরামর্শ অনুযায়ী ফের লেখাপড়া শুরু করতেও তিনি রাজি হয়েছেন।

Advertisement

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৪ ডিসেম্বর ২০১৭ ০০:৫৩
Share:

অনেক সময় উপন্যাসের চেয়েও অবাস্তব মনে হয় বাস্তবকে। তেমনই এক পরিস্থিতির মুখোমুখি এই তরুণী। ঠিক উপন্যাসের মতো দেখাচ্ছে তাঁর জীবনটাকে এখন।

Advertisement

কলকাতায় চার বছরের শিশুর উপর যৌন নির্যাতনের ঘটনাকে ঘিরে উদ্বেগ, গুজরাতে নির্বাচনী উত্তাপ, আই লিগ ডার্বির উন্মাদনা, বিরাট কোহালির অনবদ্য ক্রিকেট— এত সবের ভিড়ে একটু যেন হারিয়েই যাচ্ছে হাদিয়ার আর্তিটা। কিন্তু হাদিয়ার ‘কল্যাণার্থে’ রাষ্ট্র যা কিছু করছে এবং তাতে ঐ তরুণীর যে রকম হাঁসফাঁস অবস্থা হচ্ছে, তা উপন্যাসের চেয়ে কোনও অংশে কম নয়।

হাদিয়া জানাচ্ছেন, তিনি স্বেচ্ছায় বিয়ে করেছেন, কোনও চাপ ছিল না, কেউ ধর্ম পরিবর্তনে বাধ্য করেননি। কিন্তু হাদিয়ার বাবা এ কথা মানতে নারাজ। তিনি ‘লভ জিহাদ’ তত্ত্বেই বিশ্বাস রাখছেন। মেয়েকে ফুঁসলে ধর্ম বদলানো হয়েছে বলে দাবি করছেন। হাদিয়ার ধর্মান্তরিত হওয়া এবং মুসলিম যুবককে বিয়ে করা কোনও বৃহত্তর চক্রান্তের অঙ্গ কি না, খতিয়ে দেখছে আদালত।বাবা-মায়ের কাছে থাকবেন হাদিয়া, নাকি স্বামীর কাছে থাকবেন, নাকি সব কিছু থেকে দূরে গিয়ে আপাতত পড়াশোনায় মন দেবেন শুধু, সেও আদালতেরই বিচারাধীন।

Advertisement

আরও পড়ুন

‘বোনের’ হেনস্থায় সরব দিদিরা

এই অবস্থা থেকে মুক্তি চেয়েছেন হাদিয়া। তিনি স্বাধীনতা চেয়েছেন। যাঁকে তিনি ভালবাসেন, দীর্ঘ দিন সেই মানুষের থেকে দূরে রাখা হয়েছে তাঁকে, অভিযোগ করেছেন হাদিয়া। ভালবাসার মানুষের কাছে ফিরতে চেয়ে আকুল আর্তি জানিয়েছেন। আদালতের পরামর্শ অনুযায়ী ফের লেখাপড়া শুরু করতেও তিনি রাজি হয়েছেন। কিন্তু স্বামীর তত্ত্বাবধানে তা করতে চেয়েছেন।

রায় কী হয়েছে? বাবা-মায়ের কাছে হাদিয়াকে পাঠায়নি আদালত। কিন্তু স্বামীর কাছেও যেতে দেয়নি। কলেজে ফিরে গিয়ে নতুন করে পড়াশোনা শুরুর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। বাড়িতে বা শ্বশুরবাড়িতে নয়, হস্টেলে থাকতে বলা হয়েছে। বাবা-মা বা স্বামীর অভিভাবকত্বে নয়, কলেজের ডিনের স্থানীয় অভিভাবকত্বে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে বলা হয়েছে।

মেনে নেওয়া যাক, মামলা অত্যন্ত স্পর্শকাতর, তাই রাষ্ট্র তথা রাষ্ট্রের বিচার বিভাগ অত্যন্ত সাবধানে পা ফেলতে চাইছে। কিন্তু নাগরিকের বুনিয়াদি অধিকারগুলোর কী হবে? সংবিধান যে মৌলিক অধিকার দিয়েছে ভারতীয় নাগরিককে, যে ব্যক্তিস্বাধীনতা দিয়েছে, হাদিয়ার ক্ষেত্রে সে সব কোথায় যাচ্ছে?

‘স্বাধীনতা’ চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু এখনও ‘মুক্ত’ নন। গভীর আক্ষেপ নিয়ে বলছেন হাদিয়া। তাঁর ব্যক্তিজীবনকে ঘিরে, তাঁর ভালবাসাকে ঘিরে, তাঁর ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দকে ঘিরে এক নিদারুণ টানাপড়েন আজ। এই টানাপড়েনের এক প্রান্তে তাঁর স্বামী, এক প্রান্তে বাবা-মা, এক প্রান্তে ‘লভ জিহাদ’, এক প্রান্তে জাতি তথা জাতীয় নিরাপত্তা, এক প্রান্তে আদালত। গোটা পর্বটাই মঞ্চস্থ হচ্ছে রাষ্ট্রের ‘রঙ্গমঞ্চে’। আর হাদিয়া হাঁসফাঁস করছেন যেন। আকুল হয়ে ফিরতে চাইছেন নিজের ভালবাসার কাছে। কিন্তু কিছুতেই পারছেন না।

ঠিক উপন্যাসের মতো দেখাচ্ছে হাদিয়ার জীবনটাকে এখন। উপন্যাসের চেয়েও অবাস্তব ঠেকছে। অনেক সময় বাস্তবটা সত্যিই উপন্যাসের চেয়েও অবাস্তব ঠেকে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন