Editorial News

আশঙ্কা যে অমূলক, স্পষ্ট করে বুঝিয়ে দেওয়ার দায় সরকারেরই

কেন্দ্রের নির্দেশ মেনে আধার সংযুক্তিকরণ করা উচিত? নাকি ঘোর অনুচিত? গোটা দেশে অত্যন্ত গুরুতর প্রশ্ন আজ। পরিচয়পঞ্জি হোক বা ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট, ফোন পরিষেবা হোক বা প্রাপ্য সরকারি সুযোগ-সুবিধা— সবেতেই আধার সংযুক্তিকরণ চাইছে সরকার।

Advertisement

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২১ নভেম্বর ২০১৭ ০০:৫২
Share:

ছবি: সংগৃহীত।

এই চরম বিভ্রান্তির মধ্যে আর কত দিন থাকতে হবে? কোনও গুরুতর বিষয় নিয়ে যখন সংশয়ের পরিসর প্রশস্ত হয় ক্রমশ, তখন মহাজ্ঞানীদের দিকেই চেয়ে থাকেন সাধারণ নাগরিকরা। কোনটা ঠিক, কোনটা ভুল, কোন পথে সত্য রয়েছে, মিথ্যাচার কোথায়— সংশয়ের অন্ধকারে যখন এ সব ঠাহর করা যায় না, তখন মহাজনের দেখানো পথেই তাঁরা হাঁটতে চান। কিন্তু মহাজ্ঞানী বা মহাজনরা পথ দেখাতে পারছেন না এখানে। আধার সংযুক্তিকরণ নিয়ে বিভ্রান্তি ক্রমশ বেড়েই চলেছে গোটা দেশে। গভীর সংশয় থেকে মুক্তি মিলবে কোন পথে, স্পষ্ট উত্তর নেই।

Advertisement

কেন্দ্রের নির্দেশ মেনে আধার সংযুক্তিকরণ করা উচিত? নাকি ঘোর অনুচিত? গোটা দেশে অত্যন্ত গুরুতর প্রশ্ন আজ। পরিচয়পঞ্জি হোক বা ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট, ফোন পরিষেবা হোক বা প্রাপ্য সরকারি সুযোগ-সুবিধা— সবেতেই আধার সংযুক্তিকরণ চাইছে সরকার। আর বিরোধী দলগুলি সারাক্ষণ এই নির্দেশিকার ঘোর বিরোধিতা করে চলেছে। আধার সংযুক্তিকরণের মাধ্যমে নাগরিকের জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপকে নখদর্পণে রাখতে চায় সরকার, বলছে বিরোধী দলগুলি। নাগরিকের জীবনের নিতান্ত ব্যক্তিগত বা গোপনীয় বিষয় ফাঁস হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে আধার সংযুক্তিকরণ বাধ্যতামূলক হলে। দাবি রাজনৈতিক রথী-মহারথীদের। সরকার বলছে, এ সব আশঙ্কা অমূলক, নজরদারিও চালানো হবে না, তথ্য ফাঁসেরও প্রশ্ন নেই। আধার সংযুক্তিকরণ বরং স্বচ্ছতা আনবে গোটা দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থায়। কিন্তু বিরোধী শিবিরের নেতা-নেত্রীরা সরকারের কথায় বিশ্বাস রাখতে নারাজ। তাঁরা আধার সংযুক্তিকরণের বিরোধিতা করে চলেছেন। ফোন পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থাকে আধার নম্বর না দেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন। আধার ইস্যুতে সরকারের সঙ্গে অসহযোগিতায় যাওয়ার ডাকও দিচ্ছেন। নাগরিকের মধ্যে চরম বিভ্রান্তি তৈরি হওয়াই স্বাভাবিক।

আরও পড়ুন

Advertisement

আধার কতটা সুরক্ষিত সংশয়ে বিরোধীরা

এক অভূতপূর্ব পরিস্থিতির মুখোমুখি গোটা দেশ। ভারতের মতো গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় রাজনীতিকরা সর্বদাই অত্যন্ত প্রভাবশালী, রাজনীতিকরাই মহাজ্ঞানী-মহাজন হিসেবে বিবেচিত। কিন্তু গুরুতর একটি বিষয়ে এই রাজনীতিকরাই ধারাবাহিক ভাবে দু’রকম কথা বলে চলেছেন। প্রধানমন্ত্রী বলছেন, আধার সংযুক্তিকরণ করা হোক। মুখ্যমন্ত্রীর আহ্বান, আধার সংক্রান্ত নির্দেশিকা পুরোপুরি অগ্রাহ্য করা হোক। শেষ ভরসা ছিল আদালত। সেখান থেকেও খুব স্পষ্ট মতামত এখনও আসছে না। আধার মামলা বিচারাধীন। আধার সংযুক্তিকরণের জেরে নাগরিকের গোপনীয়তা ফাঁস হয় কি না, আধার সংযুক্তিকরণের মাধ্যমে নাগরিকের উপর সরকার সব রকম ভাবে নজরদারি চালাতে পারবে কি না, এ নিয়ে আদালত চূড়ান্ত মতামত এখনও জানাতে পারেনি। কেন্দ্রের আধার নির্দেশিকার সম্পূর্ণ বিরোধিতা আদালত করেনি। কিন্তু এ বিষয়ে আদালত এখনও কোন স্থির-নিশ্চিত অবস্থানেও পৌঁছতে পারেনি। নাগরিকের বিভ্রান্তি আরও বাড়া স্বাভাবিক এই অবস্থায়।

দায়টা কিন্তু সরকারেরই এই পরিস্থিতিতে। যে সব আশঙ্কা প্রকাশ করা হচ্ছে, তার কতটা সত্য? খুব স্পষ্ট ব্যাখ্যা দেওয়া উচিত সরকারের। আধার সংক্রান্ত তথ্য সরকারি সংস্থার কাছ থেকেই ফাঁস হয়েছে, এমন দৃষ্টান্তও তৈরি হয়ে গিয়েছে ইতিমধ্যেই। তা হলে বেসরকারি ফোন পরিষেবা সংস্থাকে আধার সংক্রান্ত তথ্য দিয়ে নাগরিক নিশ্চিন্ত হবেন কী ভাবে? এই প্রশ্ন ওঠা তো স্বাভাবিক। সরকারকে এর জবাব দিতেই হবে। বিরোধী শিবির থেকে যে সব সংশয় প্রকাশ করা হচ্ছে, সে সব যদি সম্পূর্ণ অমূলকই হয়, তা হলে সরকার সেটাই স্পষ্ট করে জানাক। বিশদ ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণে বুঝিয়ে দিক, আশঙ্কা বা সংশয়ের কোনও অবকাশ কেন নেই। সব কিছুতেই আধার জুড়ে দিয়ে সরকার ঠিক কোন লক্ষ্যে পৌঁছতে চাইছে, এতে ঠিক কী লাভ হবে দেশের ও দশের, তাও বুঝিয়ে দেওয়া হোক নাগরিককে। তা হলেই ধন্দের নিরসন হয়। কিন্তু সে উদ্যোগ সরকারের তরফে নেই। পরিস্থিতি আরও জটিল হচ্ছে সেই কারণেই।

ধরে নিচ্ছি, আধার সংযুক্তিকরণের নীতি বৃহত্তর কল্যাণের লক্ষ্যেই। ধরে নিচ্ছি, বিরোধীরা অমূলক সংশয় তৈরি করছেন। কিন্তু সংশয় বা আশঙ্কার বাতাবরণ যখন তৈরি হয়েছে, তখন তার নিরসন সর্বাগ্রে জরুরি। সে দায়িত্বটা সরকারকেই নিতে হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন