Editorial News

বেড়ালের গলায় ঘণ্টাটা তো বাঁধা হল, কাজ হবে কি?

Advertisement

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৯ ডিসেম্বর ২০১৮ ০১:০২
Share:

সার্জিক্যাল স্ট্রাইক নিয়ে যাবতীয় রাজনৈতিক হইচই নিতান্তই অনভিপ্রেত। মত প্রাক্তন সেনাকর্তাদের একাংশের। ছবি: সংগৃহীত।

কথাটা চলছিল বেশ অনেক দিন ধরেই। কিন্তু বেড়ালের গলায় ঘণ্টাটা বাঁধবে কে, সেটাই বোঝা যাচ্ছিল না। অবশেষে সেই কাজটাই করলেন এক জন। নরেন্দ্র মোদীর দুর্ভাগ্য, যে বাহিনীকে ঘিরে তাঁর এবং তাঁর দলের এ যাবৎ ঢক্কানিনাদ, সমালোচনাটা এল সেই বাহিনীরই প্রাক্তন কর্তাদের মুখ থেকে। সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের দায়িত্বে থাকা অন্যতম প্রধান সেনাকর্তা লেফটেন্যান্ট জেনারেল ডি এস হুদা সরাসরি বললেন, সেনার সার্জিক্যাল স্ট্রাইক নিয়ে যাবতীয় হইচই নিতান্তই অনভিপ্রেত। তাঁর আর এক প্রাক্তন সহকর্মী লেফটেন্যান্ট জেনারেল এন এস ব্রার-ও দেশের রাজনীতিকদের উদ্দেশে সতর্কবার্তা দিলেন যে মাত্রাতিরিক্ত বাড়াবাড়ি করলে দেশের সেনাবাহিনীর যদি কোনও ক্ষতি হয়, তার দায় নিতে হবে রাজনীতিকদেরই।

Advertisement

প্রচারের ফানুসটা ফেটে যাওয়া এক কথা। কিন্তু তার চেয়েও বড় কথা, প্রাক্তন সেনাকর্তাদের মুখে সমালোচনার যে সুরটা শোনা যাচ্ছে, সেটা নরেন্দ্র মোদীর সরকারের জন্য নিঃসন্দেহে তীব্র অস্বস্তিকর। মোদী ক্ষমতার আসার পর যে সার্জিক্যাল স্ট্রাইককে ঘিরে তুমুল হইচই, জাতীয়তাবাদের ধ্বজাকে তুলে ধরে বিজেপি নেতা-কর্মীদের আস্ফালন, সেই রকম সার্জিক্যাল স্ট্রাইক নাকি কংগ্রেস জমানাতেই বার কয়েক হয়েছে, এমনটাই দাবি করে আসছিলেন কংগ্রেস নেতারা। জাতীয়তাবাদের আগ্রাসী উল্লাসে সেই ক্ষীণ কণ্ঠ শোনা যাচ্ছিল না তেমন। এখন আচমকা প্রাক্তন সেনাকর্তাদের সতর্কবাণী কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে দিল সার্জিক্যাল স্ট্রাইক নিয়ে বিজেপি-র প্রচারকৌশলকে। সন্দেহ নেই, কংগ্রেস যে এত দিন বলে আসছিল, সেনাবাহিনীর কৌশলগত কারণেই এবং দেশের নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে তারা এ যাবৎ সার্জিক্যাল স্ট্রাইক নিয়ে মাতামাতি করেনি, সেই বক্তব্যও আচমকা যেন আরও প্রাসঙ্গিক এবং আরও যথার্থ হয়ে সামনে দাঁড়াল দেশবাসীর।

প্রত্যাশিত ভাবেই সেনাপ্রধান বা সেনাবাহিনীর কর্মরত অন্য কোনও কর্তার গলায় এই সুরটা শোনা যাচ্ছে না। কিন্তু সেই সময় সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের দায়িত্বে থাকা অন্যতম কর্তা যদি এখন বলেন যে এই নিয়ে প্রচারের মাতামাতি অনভিপ্রেত, তাতে ক্ষতির সম্ভাবনা তৈরি হয়, তবে তা শিরোধার্য করা দরকার। উপলব্ধি করা দরকার, এই বক্তব্যের মধ্যে নিহিত গূঢ় কোনও সত্যকে, যে সত্য সেনাবাহিনী বা তার কার্যকলাপকে প্রচার তথা রাজনৈতিক প্রচারের অঙ্গন থেকে বহু দূরে রেখে এসেছে এ যাবৎ। দেশের নিরাপত্তার প্রশ্ন যেখানে জড়িত, অন্তত সেই অঞ্চলটুকুকে রাজনৈতিক প্রচারের পরিসর থেকে দূরে রাখা দরকার, এ কথা হয়তো কোনও আম আদমির মনে কখনও বা এসেছে। কিন্তু সঙ্কোচের আড়াল সরিয়ে প্রচারের নিনাদকে কাটিয়ে সেই স্বর বহুমুখী হতে পারেনি। প্রাক্তন সেনাকর্তারা ঠিক সেই কাজটাই করলেন।

Advertisement

সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন

আরও পড়ুন: এত হইচইয়ের ব্যাপারই নয়, মুখ খুললেন সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের ‘বস’

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, আপনি গুরুত্বটা উপলব্ধি করছেন তো?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন