Editorial news

আর কী রইল বাঙালির?

প্রকাশ্যে আলিঙ্গনকে ‘অপরাধ’ তকমা দিয়ে সম্প্রতি তার নিরসনে ঝাঁপিয়ে পড়েছে বাঙালি। দমদম মেট্রো স্টেশনে এক যুগলকে গণপ্রহার দেওয়া হয়েছে। সেই গণপ্রহারের মুহূর্ত থেকে স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে, সংবেদনশীলতায় বাংলা বা কলকাতা অন্য কারও চেয়ে এগিয়ে নয়। পিছিয়েই বরং।

Advertisement

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০২ মে ২০১৮ ০০:৩৬
Share:

দমদম মেট্রো স্টেশনে নামিয়ে পেটানো হল যুগলকে।—নিজস্ব চিত্র

লজ্জিত হওয়ার বিরাট এক অবকাশ তৈরি হল আমাদের সামনে। আমরা অর্থাৎ বাঙালিরা নিজেদের অসীম উদার বলে মানি। আমরা ভাবি, আমরাই একমাত্র আলোকপ্রাপ্ত, আমরাই রেনেসাঁ যুগের প্রকৃত উত্তরাধিকারী। কিন্তু ভুলটা ভেঙে গেল সম্প্রতি।

Advertisement

দীর্ঘদিন ধরে ‘আলোকপ্রাপ্ত, রেনেসাঁ সিঞ্চিত বাঙালি’ তৃপ্তি অনুভব করে আসছে। শিক্ষা-দীক্ষায়, বুদ্ধিবৃত্তিতে, সংবেদনশীলতায় বাঙালি অন্য সকলের চেয়ে এগিয়ে, এমন একটা ধারণা দীর্ঘদিন ধরেই ছিল বাঙালির মধ্যে। ইতিমধ্যে বাঙালির শরীরে পেশির বহর কিছুটা কমে গিয়েছে, খেলাধুলাতেও টান পড়েছে, কিছু কমে গিয়েছে যেন মেধাও। তাতেও নিজের সম্পর্কে বাঙালির উচ্চ ধারণায় কোনও আঘাত লাগেনি। আঘাতটা লাগল এত দিনে। চুরমার হয়ে গেল সংস্কৃতির মোড়কটা। তার জন্য ধন্যবাদ দমদমকে।

প্রকাশ্যে আলিঙ্গনকে ‘অপরাধ’ তকমা দিয়ে সম্প্রতি তার নিরসনে ঝাঁপিয়ে পড়েছে বাঙালি। দমদম মেট্রো স্টেশনে এক যুগলকে গণপ্রহার দেওয়া হয়েছে। সেই গণপ্রহারের মুহূর্ত থেকে স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে, সংবেদনশীলতায় বাংলা বা কলকাতা অন্য কারও চেয়ে এগিয়ে নয়। পিছিয়েই বরং।

Advertisement

নীতি পুলিশের ভূমিকায় এ ভাবে দেখতে হবে বাঙালিকে, তা দুঃস্বপ্নেও কখনও ভাবা যায়নি। দেশের অন্যান্য প্রান্তে নীতি পুলিশদের দেখে বরাবরই বিরক্তি প্রকাশ করে এসেছে কলকাতা। কিন্তু অকারণ আত্মশ্লাঘায় ভুগতে ভুগতে মেধার চর্চা কমিয়ে দেওয়া বাঙালি নিজেই যে ভিতরে ভিতরে নীতি পুলিশ হয়ে উঠেছে, তা এত দিন বোঝা যায়নি এতটা প্রকট ভাবে। বুঝিয়ে দিল মেট্রো যাত্রা, বুঝিয়ে দিল দমদম। ধন্যবাদ, অজস্র ধন্যবাদ!

আত্মনিরীক্ষণের সময় এসে গিয়েছে। গর্ব করার মত যেটুকু অবশিষ্ট ছিল, তাও হাতছাড়া হয়ে গিয়েছে অজান্তেই। খেলাধুলায় বা শারীরিক সক্ষমতায় বা বাণিজ্যিক প্রখরতায় বাঙালি অন্যদের চেয়ে সম্ভবত এগিয়ে ছিল না। কিন্তু শিক্ষায়, সংস্কৃতিতে, শিল্পানুরাগে, বৌদ্ধিক চর্চায় বাঙালি অনেক এগিয়ে, এ রকম একটা ধারণা বা বিশ্বাস ভিতরে ভিতরে প্রবহমান ছিল। দমদমের ঘটনা সে বিশ্বাসের সমাধি রচনা করেছে। আয়নার সামনে দাঁড়ানো ছাড়া আর কিছুই আজ করার নেই আমাদের। বাঙালি হিসেবে এত লজ্জিত আগে কবে হতে হয়েছে, মনে পড়ে না। নিজের সত্তার মুখোমুখি দাঁড়াতে গিয়ে আগে কখনও এত সঙ্কুচিত লাগেনি।

দমদমের ঘটনাকে আগে ধন্যবাদ জানিয়েছি সম্বিৎ ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য। এ বার ধিক্কার জানাচ্ছি, বাঙালির গরিমার শেষ নিশানটাও ভূলুণ্ঠিত করার জন্য।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন