অস্বাস্থ্যকর অভ্যাসগুলো যে আমাদের নিজেদের জন্যই অত্যন্ত লজ্জাজনক, সেই বোধ সমাজের সর্বস্তরে জাগিয়ে তোলা যায়নি এখনও।— প্রতীকী ছবি।
সামাজিক হোক বা রাজনৈতিক, যে কোনও আন্দোলনেই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয় স্লোগান। যত জোরদার স্লোগান, ততই আকুল জনাবেগ। আন্দোলনের সাফল্য তাই বেশ খানিকটা জড়িয়ে থাকে স্লোগানের সাফল্যের সঙ্গে। কিন্তু স্লোগান যে পরিহাসের অক্ষর হয়ে উঠতে পারে, তা রাজস্থানের স্বাস্থ্য দফতরের প্রতিমন্ত্রীর কাণ্ড না দেখলে বোঝা দুরূহ হত।
পরিচ্ছন্ন এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রার লক্ষ্যে ভারত সরকার স্বচ্ছতা মিশন ঘোষণা করেছে। ঘরে ঘরে শৌচালয় গড়ে দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধার্য হয়েছে। শৌচালয় তৈরি এবং তার ব্যবহার সুনিশ্চিত করতে সুনির্দিষ্ট স্লোগানও বেঁধে দেওয়া হয়েছে— যেখানে ভাবনা, সেখানে শৌচালয়। সে স্লোগান কেমন যেন ‘আক্ষরিক’ অর্থে ‘সার্থক’ হয়ে উঠল। গাড়ি চড়ে যেতে যেতে শৌচালয়ে যাওয়ার ভাবনা মাথায় এল মন্ত্রীর। যেখানে এই ভাবনা মাথায় এল, সেই স্থানকেই শৌচালয় ভেবে নিলেন মন্ত্রী।
জয়পুর শহরের বুকে প্রশস্ত রাস্তার ধারে গাড়ি দাঁড় করিয়ে পাঁচিলের গায়ে প্রস্রাব করছেন রাজস্থানের স্বাস্থ্য দফতরের প্রতিমন্ত্রী কালীচরণ সরাফ। ক্যামেরায় ধরা পড়েছে এ দৃশ্য। ভাইরালও হয়ে গিয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়।
আরও পড়ুন: রাস্তায় প্রকাশ্যে প্রস্রাব মন্ত্রীর! ছবি ভাইরাল সোশ্যাল মিডিয়ায়
সমালোচনার ঝড় যে উঠবে, তা প্রত্যাশিতই ছিল। স্বচ্ছ ভারত মিশনে বিপুল অর্থ খরচ করছে ভারত সরকার। শৌচালয় তৈরির কর্মসূচিকে এতই গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে যে, দেশের অর্থমন্ত্রীর বাজেট ভাষণে তা বিশেষ স্থান পাচ্ছে। বিজেপি পরিচালিত কেন্দ্রীয় সরকার তথা খোদ প্রধানমন্ত্রী যখন এত উৎসাহী দেশের স্বচ্ছতা নিয়ে, তখন সেই বিজেপি-রই দখলে থাকা রাজস্থানে বিপরীত ছবি। মন্ত্রী নিজেই স্বচ্ছতার তোয়াক্কা করছেন না, শৌচালয়ের কথা ভাবছেন না। রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে প্রকাশ্যে প্রস্রাব করছেন।
সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন
রাজস্থানের এই মন্ত্রী প্রথম বার বিজেপি-কে এমন অস্বস্তিতে ফেললেন, তা কিন্তু নয়। ফেলে আসা বছরটায় বিহারেও একই ছবি দেখা গিয়েছিল। রাজ্যের নয়, কেন্দ্রের মন্ত্রী রাধামোহন সিংহ প্রকাশ্য স্থানে প্রস্রাব করেছিলেন সে বার। স্বচ্ছ ভারতের স্লোগান এমন পরিহাসের রূপ নিয়ে বার বার ‘সত্য’ হবে, নরেন্দ্র মোদী হয়ত তা ভাবতেও পারেননি।
শুধু মন্ত্রী-আমলাদের দোষ দিয়ে অবশ্য লাভ নেই। এই সমস্যা আমাদের দেশের এক বড়সড় সামাজিক সমস্যা। সমাজ থেকে উঠে আসা কোনও আন্দোলনের মাধ্যমেই এই সমস্যার সমাধান সম্ভব। সে কথা মাথায় রেখেই স্বচ্ছ ভারত মিশনকে সামাজিক আন্দোলনের রূপ দেওয়ার চেষ্টা করেছে সরকার। সে প্রচেষ্টা একেবারেই সাফল্য পায়নি, তেমনটা বলা কঠিন। সচেতনতা কিছুটা বেড়েছে, তা নিয়ে সংশয় নেই। কিন্তু অস্বাস্থ্যকর অভ্যাসগুলো যে আমাদের নিজেদের জন্যই অত্যন্ত লজ্জাজনক, সেই বোধ সমাজের সর্বস্তরে জাগিয়ে তোলা যায়নি এখনও। যতদিন না সেই বোধ জাগবে সর্বস্তরে, ততদিন এই পরিহাসের হাত থেকে মুক্তি নেই আমাদের।