ঐতিহাসিক রায় শীর্ষ আদালতের।
ধর্মের নামে, জাত-পাতের নামে, বর্ণের নামে, ভাষার নামে, সম্প্রদায়ের নামে আর ভোট চাওয়া যাবে না। রায় ভারতের সর্বোচ্চ আদালতের।
দুর্ভাগ্যের বিষয়, স্বাধীনতার পর সত্তর বছর কাটিয়ে এসেও ধর্ম-বর্ণ-জাতির নামে ভোট চাওয়ার প্রবণতা রুখতে আদালতকে হস্তক্ষেপ করতে হয়।
সৌভাগ্যের বিষয়, স্বাধীনতার সত্তর বছর পরে হলেও ধর্ম-বর্ণ-জাতির নামে রাজনীতির কারবার খুলে বসার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি হল, বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্র অবশেষে কাঙ্খিত এবং পরিণত পদক্ষেপটা নিল।
শীর্ষ আদালতের এই রায়ের বিরোধিতা কিন্তু কোনও রাজনৈতিক দলই করবে না। আপামর ভারতের রাজনৈতিক শিবির এই নিষেধাজ্ঞাকে সমস্বরে স্বাগত জানাবে। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে অর্থাৎ নির্বাচনী রণাঙ্গনে ততোধিক কুশলতায় এই নির্দেশকে বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ দেখানোর চেষ্টাও যে হবে, তা সম্ভবত কোনও মহলেরই অজানা নয়। অতএব, সর্বোচ্চ আদালতের এই রায় যে প্রয়োগহীন, নখদন্তহীন, শক্তিহীন একটি লিখিত দস্তাবেজ মাত্র হয়ে রয়ে যেতে পারে, সে আশঙ্কাও নেহাৎ অমূলক নয়।
সুপ্রিম কোর্ট যে কঠোর পদক্ষেপ করেছে, সংশয়হীন ভাবে তা জরুরি ছিল। কিন্তু এই পদক্ষেপের প্রয়োগ সুনিশ্চিত করতেও কঠোর নজরদারি প্রয়োজন। আদালতের বিভিন্ন রায় শুধু নয়, এ দেশে এমন অনেক সাংবিধানিক সংস্থানও রয়েছে, যার প্রয়োগ নামমাত্র। সর্বোচ্চ আদালতের এই নির্দেশও যাতে তেমনই এক অব্যবহৃত এবং অকেজো হাতিয়ারের রূপ না নেয়, সুপ্রিম কোর্টকেই তা নিশ্চিত করতে হবে। সুযোগ যখন তৈরি হয়েছে, তখন ধর্ম-বর্ণ-জাতি-সম্প্রদায়-ভাষার নামে ভোট চাওয়ার আত্মঘাতী প্রথা নির্মূল করতেই হবে।
রাজনীতিকদের পক্ষে বা দায়িত্বশীল রাষ্ট্রনায়কদের পক্ষেও এই নিষেধাজ্ঞা বলবৎ করা সম্ভব ছিল। কিন্তু দীর্ঘ সাত দশকে খুব দৃঢ় ভঙ্গিতে তেমন প্রচেষ্টা হয়েছে বলে ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় না। তাই বিচার বিভাগেই ভরসা রাখা যাক এ বিষয়ে। প্রথম পদক্ষেপটা যখন বিচার বিভাগের তরফ থেকে হল, নিশ্চয়তাটাও তখন বিচার বিভাগই দিক।