Editorial News

এ কলঙ্ক মোছার দায় নিতে হবে কলকাতাকেই

সবচেয়ে খুশি হতাম উত্তরটা যদি এর অন্যথা হত। কিন্তু কী ভাবে পাব সেই অন্যথার সন্ধান? যে কলকাতা আলিঙ্গনাবদ্ধ প্রেমকে গণধোলাই দিয়ে সুখনিদ্রায় যায়, সেই কলকাতা দিনেদুপুরে বাসে প্রকাশ্য হস্তমৈথুনে প্রতিবাদ করতে পারে না?

Advertisement

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৩ মে ২০১৮ ০০:৫৫
Share:

লজ্জায় মাথা হেঁট হয়ে যাচ্ছে আজ। ছবি: সংগৃহীত।

প্রশ্নটা সেদিনই উঠে গিয়েছিল, উত্তরটা এত দ্রুত মিলবে ধারণায় ছিল না। এবং কলকাতার মুখটা আরও একবার কালো করে উত্তরটা নেতিবাচক এবং হতাশাব্যাঞ্জকই হল। এ কলকাতা এখন নীতি পুলিশদের কব্জায়, অন্যায়ের প্রতিবাদে তার কোনও ভূমিকা নেই।

Advertisement

সবচেয়ে খুশি হতাম উত্তরটা যদি এর অন্যথা হত। কিন্তু কী ভাবে পাব সেই অন্যথার সন্ধান? যে কলকাতা আলিঙ্গনাবদ্ধ প্রেমকে গণধোলাই দিয়ে সুখনিদ্রায় যায়, সেই কলকাতা দিনেদুপুরে বাসে প্রকাশ্য হস্তমৈথুনে প্রতিবাদ করতে পারে না? এমনকী কোনও এক তরুণীর আর্ত আহ্বানেও সাড়া দেয় না এই কলকাতা? আলিঙ্গনের আপত্তিতে যে অন্যায় স্পর্ধার প্রকাশ, তার ছিটেফোঁটাও কেন দেখা যায় না প্রকাশ্য অশালীনতার প্রতিবাদে? এই কলকাতা কি আমাদের পরিচিত?

জানি, দুটো বিচ্ছিন্ন ঘটনার থেকে কলকাতার সাধারণীকরণ করাটা সঙ্গত নয়। যুক্তি এ-ও বলবে, এই কলকাতাই নীতি পুলিশির বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলেছে। এই অশালীনতার ঘটনাতেও গর্জে উঠছে সোশ্যাল মিডিয়া। আক্ষেপ এটাই, নিরালম্ব মাধ্যমে এই গর্জনের পাশাপাশি যদি বাস্তবেও তার লক্ষণ দেখা যেত! যে আম মানুষ সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রতিবাদ করলেন তিনি কি ওই অশালীন ঘটনার সাক্ষী ছিলেন না বাসে? অথবা বাসে যাঁরা সাক্ষী ছিলেন তাঁরা সোশ্যাল মিডিয়ার কেউ নন? নাকি এমনটা দাঁড়াচ্ছে, সোশ্যাল মিডিয়ায় আমরা যথাযথ হচ্ছি আর বাস্তবে হচ্ছি ঠিক উল্টোটা। আলিঙ্গনের প্রাপ্তি সেখানে গণপিটুনি আর হস্তমৈথুনের প্রতিক্রিয়ায় উদাসীন নৈঃশব্দ।

Advertisement

অথচ এই কলকাতাই আমাদের শিখিয়েছে হেঁটে দেখতে শেখার কথা। দেখিয়েছে, এ কলকাতার মধ্যে বসবাসকারী আরেকটা কলকাতাকে চিনে নেওয়ার স্বপ্ন। সে কলকাতায় দিনের রাতের মাথায় অনেক খুন ঝরে। সে কলকাতা এক আশ্চর্য প্রাণের কলকাতা।

লজ্জায় মাথা হেঁট হয়ে যাচ্ছে আজ। হে আমার প্রিয় কলকাতা, মাত্র কয়েক দিন আগে কিছু নীতি পুলিশের তাণ্ডব তোমার মুখে কালি ছিটিয়ে দিয়েছিল। তখনও ভেবেছিলাম, এ হয়তো বা বিচ্ছিন্ন ঘটনা। কিন্তু শনিবারের ওই বাস, ওই হস্তমৈথুন, ওই আর্ত ডাক এবং সোশ্যাল মিডিয়ার কুলুঙ্গিতে তুলে-রাখা বিবেকসমৃদ্ধ আম জনতার ধিক্কারযোগ্য নীরবতা এই শহরের মুখে কলঙ্কের তীব্র প্রলেপ লাগিয়ে গেল। কলকাতার বুকে যে অন্য কলকাতা আছে, তাকেই এ বার বেরিয়ে আসতে হবে। প্রমাণ করতে হবে এটাই এ শহরের দিক্‌চিহ্ন নয়।

কলকাতাকে এটা করতেই হবে। এখনও আমার মাথা উঁচু করে রাখে এই শহরের অন্তরাত্মা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement