State news

শুধু আতঙ্কিত হলে চলবে না, আমাদের এ বার সজাগও হতে হবে

সন্দেহভাজন জঙ্গিদের ধরা পড়া নিশ্চয়ই ইতিবাচক ঘটনা। কিন্তু পরিস্থিতি যে অত্যন্ত উদ্বেগের আজ, তা বুঝে নিতে একটুও ভুল হওয়া উচিত নয়।

Advertisement

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২২ নভেম্বর ২০১৭ ০০:১৪
Share:

প্রতীকী ছবি।

অন্যের উঠোনে বিপদকে হানা দিতে দেখেছি আমরা অনেক বার। আঁতকে উঠেছি, শিউরে উঠেছি। সন্ত্রাস নির্মূল হোক, অন্তর থেকেই প্রার্থনা করেছি। কিন্তু প্রার্থনাতেই কর্তব্য শেষ হয় না। ঘরটাকে সামলে রাখার জন্য কিছু সক্রিয়তার দরকার হয়, কিছু কর্তব্য বা দায়বদ্ধতা স্বকীয় ভাবে কাঁধে তুলে নিতে হয়। স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে তেমন কোনও দায়বদ্ধতা আমরা কাঁধে তুলে নিতে পারিনি সম্ভবত। নিজের উঠোনেই তাই সন্ত্রাসের ছায়াপাত দেখতে হল এ বার।

Advertisement

খাস কলকাতার বুকে জঙ্গি কার্যকলাপের আভাস মিলল। কলকাতা পুলিশের স্পেশ্যাল টাস্ক ফোর্সের জালে পড়ল তিন সন্দেহভাজন। তিন জনের মধ্যে দু’জন প্রতিবেশী বাংলাদেশের নাগরিক বলে খবর। বছক দেড়েক ধরে তারা ভারতে অবৈধ ভাবে থাকছিল বলে জানা গিয়েছে। আনসারুল্লা বাংলা টিম তথা আল কায়দার হয়ে কাজ করতেই তারা পশ্চিমবঙ্গে এসেছে বলে পুলিশ জানতে পেরেছে। এক অস্ত্র জোগানদারও ধৃত দুই জঙ্গির সঙ্গে, সে আবার ভারতীয় নাগরিকই, উদ্ধার হওয়া নথিপত্র অন্তত তাই বলছে।

সন্দেহভাজন জঙ্গিদের ধরা পড়া নিশ্চয়ই ইতিবাচক ঘটনা। কিন্তু পরিস্থিতি যে অত্যন্ত উদ্বেগের আজ, তা বুঝে নিতে একটুও ভুল হওয়া উচিত নয়। কলকাতায় তথা বঙ্গে বড়সড় জঙ্গি মডিউল তৈরির ছক ছিল, তা ফাঁস হয়ে গেল। জঙ্গি মডিউল তৈরির ছক ফাঁস না হলে কী হয়? ২৬/১১ মুম্বই হয় বা সংসদ হানার দিল্লি হয় বা প্রায় রোজকার জম্মু-কাশ্মীর হয়। দেশের বিভিন্ন অংশে ভয়াবহ জঙ্গিহানা দেখে আমরা অনেক বার আতঙ্কে শিউরে উঠেছি। প্রতিবেশী বাংলাদেশে আতঙ্ককে হানা দিতে দেখেছি। পাকিস্তান, আফগানিস্তানে প্রায়শই দেখছি। ইউরোপ বা আমেরিকার বিভিন্ন শহরকেও মাঝে মধ্যে কেঁপে উঠতে দেখছি, রক্তাক্ত-ছিন্নভিন্ন হতে দেখছি। এ সব দেখে কলকাতাকে নিয়েও আমরা কেউ কেউ ঈষত্ শঙ্কিত হয়েছি, কিন্তু সতর্ক কতটুকু হয়েছি, সে প্রশ্নের মুখোমুখি দাঁড়ালে লজ্জিত হওয়ার অবকাশ রয়েছে। অতএব, অবধারিত ভাবে এক দিন জানা গেল, কলকাতাও সাঙ্ঘাতিক ভাবে ঢুকে প়ড়েছে জঙ্গি কার্যকলাপের মানচিত্রে। তিন সন্দেহভাজন ধরা পড়েছে, ভাল কথা। আরও কত জন ধরা পড়েনি বা গোপনে জাল ছড়িয়ে বেড়াচ্ছে, সে কিন্তু আমাদের জানা নেই।

Advertisement

জঙ্গিদের রোখার দায় পুলিশ-প্রশাসনের বা গোয়েন্দাদের, সে নিয়ে দ্বিমত নেই। কিন্তু যে ধরনের আর্থ-সামাজিক কাঠামোর অংশ আমরা, তাতে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সজাগ থাকার দায়টা সকলেরই। যে ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতা আমাদের ঘিরে রয়েছে, যে রকম ছিদ্রসঙ্কুল আমাদের সীমান্ত, তাতে সতর্ক থাকার এবং চোখ-কান খোলা রাখার দায়িত্ব প্রত্যেক নাগরিককেই নিতে হবে। প্রশাসন এবং নাগরিকের মিলিত দায়বদ্ধতা এবং সহযোগিতাই সন্ত্রাসের ছককে ভেস্তে দেওয়ার সবচেয়ে কার্যকরী উপায় আমাদের পারিপার্শ্বিকতায়।

সন্ত্রাসের একটা ছক না হয় বানচাল হল। কিন্তু আরও অনেক ছক যে আঘাত হানতে প্রস্তুত নয় ইতিমধ্যেই, এ বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না একেবারেই। এই মুহূর্ত থেকে প্রত্যেক নাগরিককে বুঝে নিতে হবে নিজের কর্তব্য। সে কর্তব্য ঠিক কী, তা দ্রুত স্পষ্ট করে দিতে এখনই এগিয়ে আসতে হবে প্রশাসনকেও। খুব তাড়াতাড়ি এই সমন্বয় ও সহযোগিতা গড়ে তুলতে না পারলে বিপদ কিন্তু আমাদের থেকে খুব দূরে নয়।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement