News Letter

পড়শিরা যখন আক্রান্ত হচ্ছিলেন, তখন পাশ ফিরে শোওয়াটা উচিত হয়নি

এক সময় ওরা কমিউনিস্টদের মারতে এসেছিল। জনৈক ব্যক্তি প্রতিবাদ করেননি। কারণ তিনি কমিউনিস্ট ছিলেন না। ওরা আবার এসেছিল, ইহুদিদের মারতে। এই ব্যক্তি ইহুদিও ছিলেন না। তাই সে বারও প্রতিবাদ করেননি।

Advertisement

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৬ মার্চ ২০১৭ ০৩:৩২
Share:

প্রতীকী চিত্র।

এক সময় ওরা কমিউনিস্টদের মারতে এসেছিল। জনৈক ব্যক্তি প্রতিবাদ করেননি। কারণ তিনি কমিউনিস্ট ছিলেন না। ওরা আবার এসেছিল, ইহুদিদের মারতে। এই ব্যক্তি ইহুদিও ছিলেন না। তাই সে বারও প্রতিবাদ করেননি। লোকটির প্রতিবেশীরাও একে একে মারা পড়লেন ওদের হাতে, কিন্তু এই লোকটিকে ওরা তখনও কিছু করেনি। তাই তিনি এ বারও প্রতিবাদ করেননি। শেষে কিন্তু তাঁকেও মারতে এসেছিল ওরা। প্রতিবাদ করার জন্য সে দিন কারওকে পাওয়া যায়নি। কারণ প্রতিবাদ করার মতো আর কেউ ছিলেনই না।

Advertisement

সুপ্রসিদ্ধ এই জার্মান রচনার সুস্পষ্ট অনুরণন আজ খুঁজে পাচ্ছি আমরা। এবং সম্ভবত এত দিনে উপলব্ধি করছি, সঙ্কীর্ণতার রং দিয়ে আঁকা কোনও বিভাজন রেখা কখনও, কারও পক্ষে শুভ হতে পারে না।

মেক্সিকোর সীমান্তে যখন দেওয়াল উঠে যাচ্ছিল, তখন আমরা অনেকেই সম্ভবত ঘুমাচ্ছিলাম বা পাশ ফিরে শুচ্ছিলাম। তার পর মুসলিম প্রধান দেশগুলোর উপর নিষেধাজ্ঞা এল। আমরা একটু সরব হলাম, তবে খুব উদ্বিগ্ন হলাম না। একই সঙ্গে দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল শরণার্থীদের মুখের উপরেও। তাঁদের স্বার্থে আরও খানিকটা উচ্চকিত হওয়ার চেষ্টা করেছিল আমাদের প্রতিবাদ। কিন্তু সেও পূর্ণোদ্যমে নয়।

Advertisement

এ বার খাঁড়াটা আমাদেরই মাথার উপরে দোদুল্যমান। একের পর এক ভারতীয় আক্রান্ত হচ্ছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের রাজত্বে। প্রথমে কানসাস, তার পর সাউথ ক্যরোলাইনা, সব শেষে খোদ ওয়াশিংটন। উন্মত্ত আততায়ী হাজির হচ্ছে আচমকা, ভারতীয়কে ভারতে ফিরতে বলছে, তার পরই গুলি চালিয়ে দিচ্ছে। প্রায় একই ছবি প্রতিটা ঘটনায়। প্রবাসী আত্মীয়-পরিজন, বন্ধু-স্বজনের কথা ভেবে এ বার আমরা উদ্বিগ্ন হচ্ছি, আতঙ্কিত হচ্ছি, তীব্র ক্ষোভ জানাচ্ছি। কিন্তু এই প্রতিবাদে সামিল হয়ে আমাদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য আজ কারা আসবেন? আদৌ কি কারওর সমর্থন এখন আশা করতে পারি আমরা? সম্ভবত পারি না, তাই নিজেদের লড়াইটা নিজেরা লড়ার প্রস্তুতিই এ বার শুরু করা উচিত।

শিক্ষাটাও কিন্তু নিতে হবে এই সঙ্কটকাল থেকে। সমগ্র সভ্যতার প্রবাহ যখন বিশ্বজনীনতার দিকে, তখন ঠিক উল্টো পথে হেঁটে বিভাজন চাওয়া কোনও শুভ বুদ্ধি বা শুভ লক্ষণ নয়। অতএব, বিভাজনের চেষ্টা যার হাত ধরেই শুরু হোক, যে বিন্দু থেকেই শুরু হোক, সেই চেষ্টা থেকে বিশ্ব মানবতা লাভবান হবে, এমন তত্ত্বে ক্ষণেকের জন্য বিশ্বাস রাখাও সমীচিন নয়। কিন্তু অনেকেই আমরা সে কথা বুঝিনি সম্ভবত। তাই বিদ্বেষ তার জাল ছড়িয়েছে অত্যন্ত দ্রুত।

সম্মিলিত লড়াই যদি শুরু করতে পারি, তা হলে এখনও হয়তো রুখে দেওয়া যাবে এই উলটপূরাণের চেষ্টা। কিন্তু তত দিনে অনেক ক্ষতিও হয়ে যাবে। অনিষ্টের কোলাহল কানে আসা মাত্র যদি জেগে উঠতাম, যদি পাশ ফিরে না শুতাম, তা হলে এই ক্ষতির মুখোমুখি দাঁড়াতে হত না আজ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন