Supreme Court of India

যোগ্য কে

ভারতের বিমানবাহিনীতে মহিলারা যুদ্ধবিমান চালাইতেছেন, নৌবাহিনীতেও গত বৎসর এক মহিলা বিমানচালকের কাজে নিযুক্ত হইয়াছেন।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০০:০১
Share:

মেয়েদের কথা শুনিবার অভ্যাস নাই পুরুষদের, তাই মেয়েদের উচ্চপদে নিয়োগ করা চলিবে না। এই কথা কোনও নির্বোধ পুরুষ পাড়ার আসরে বলে নাই। ভারত সরকার বলিয়াছে সুপ্রিম কোর্টে। ভারতের সশস্ত্র বাহিনীতে মহিলারা যুদ্ধ করিবার, এবং নির্দেশদানে সমর্থ ‘কম্যান্ডিং অফিসার’-এর পদে নিয়োগ দাবি করিয়াছেন। কেন্দ্র জানাইয়াছে, সেনাবাহিনীর একটি বড় অংশ গ্রাম হইতে আসে, মেয়েদের নির্দেশ মানিবার উপযুক্ত মানসিকতা তাহাদের তৈরি হয় নাই। মেয়েদের ‘দেহগঠন-সংক্রান্ত সীমাবদ্ধতা’র কারণে তাহারা যুদ্ধ করিবার যোগ্য নহে, এই কথাও বলিয়াছে। মাতৃত্ব ও শিশুপরিচর্যা, যুদ্ধক্ষেত্রে বিপক্ষের হাতে ধরা পড়িবার বিপদ, ইত্যাদি প্রসঙ্গও আসিয়াছে। অতএব মেয়েরা সেনাবাহিনীর নেতৃত্বের অযোগ্য। মনে পড়িতে পারে, ‘নেটিভ’ অফিসারের নির্দেশ শ্বেতাঙ্গরা শুনিবে, এমন সম্ভাবনা ব্রিটিশ সেনাকর্তারা কল্পনা করিতে পারে নাই। মার্কিন সেনাবাহিনীতে শ্লাঘনীয় পদগুলি হইতে কৃষ্ণাঙ্গদের কী ভাবে দূরে রাখা হইত, তাহার বিবরণও অজানা নহে। প্রতিটি ক্ষেত্রেই আধিপত্য ধরিয়া রাখিবার অজুহাতগুলিকে ‘বাস্তব বুদ্ধি’ দ্বারা সিদ্ধ সত্য বলিয়া দাবি করা হইয়াছে। ইতিহাস দেখাইয়াছে, এমন দাবি ভুল। অনাস্থার শিকড় যুক্তিতে নহে, অকারণ পক্ষপাত ও বিদ্বেষে।

Advertisement

ভারতের বিমানবাহিনীতে মহিলারা যুদ্ধবিমান চালাইতেছেন, নৌবাহিনীতেও গত বৎসর এক মহিলা বিমানচালকের কাজে নিযুক্ত হইয়াছেন। সর্বাধিক প্রতিরোধ করিতেছে সেনাবাহিনী। মেয়েরা দীর্ঘকাল ভারতীয় বাহিনীর চিকিৎসা পরিষেবার অংশ হইলেও, অন্য ভূমিকায় নিয়োগ শুরু হয় ১৯৯২ সালে। কিন্তু ‘স্থায়ী কমিশন’ অর্থাৎ কুড়ি বৎসর কাজ করিবার সুযোগ মেলে নাই। পদোন্নতি বা পেনশনের আশা না করিয়া চৌদ্দ বৎসর কাজের ছাড় মিলিয়াছিল শুধু। দিল্লি হাইকোর্ট হইতে সেই অধিকার আদায় করেন সশস্ত্র বাহিনীর সাতান্ন জন মহিলা। কিন্তু দিল্লি হাইকোর্টের নির্দেশের বিরুদ্ধে শীর্ষ আদালতে আপিল করিয়াছে সরকার। ২০১০ সাল হইতে সেই আবেদন বিচারাধীন ছিল। সম্প্রতি কেন্দ্র জানাইল, মেয়েদের স্থায়ী নিয়োগ বিবেচিত হইতে পারে, কিন্তু যোদ্ধা বা ‘কম্যান্ডিং অফিসার’ করা হইবে না।

আদালত বলিয়াছে, কেন্দ্রের মনোভাবের পরিবর্তন প্রয়োজন। পুরুষ ও মহিলাদের সমান শর্তে পরীক্ষা করিয়া তাহাদের গ্রহণ করিতে সমস্যা কোথায়? এই কথার সত্য প্রশ্নাতীত। প্রশ্ন একটিই। উচ্চপদস্থ অফিসারের নির্দেশ মানিবার পূর্বে তাহার সামাজিক পরিচিতি বিচার করিবার প্রথাটি তবে কি সরকার সমর্থন করিতেছে? দলিত অফিসারের নির্দেশ কি অগ্রাহ্য করিতে পারে ব্রাহ্মণ হাবিলদার? আদিবাসী কর্নেলের নির্দেশ তাচ্ছিল্য করিবে রাজপুত মেজর? ইহাই কি সেনাবাহিনীর শৃঙ্খলার পাঠ? সকল দেশেই বহুবিধ ধারণা লইয়া বিচিত্র লোক সেনাবাহিনীতে শামিল হয়। অতঃপর নিয়মবদ্ধতা, আনুগত্য, সহযোগিতার মূল্যবোধ গড়িয়া ওঠে। ভারতীয় সেনা কী মূল্যবোধ গড়িল? কেন পুরুষ সেনারা মহিলা অফিসারের নির্দেশপালনে অসমর্থ? যে পুরুষ নারীর অবনমনকে স্বাভাবিক মনে করে, সে কী করিয়া দেশ গড়িবে? সেনাবাহিনী কেবল দেশের জন্য প্রাণ দিলেই যথেষ্ট নহে। সকলের বাঁচিয়া থাকিবার উপযুক্ত দেশও তাহাকে গড়িতে হইবে।

Advertisement
(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন