National news

এত আক্রোশের উৎস কী? টের পাওয়া যাচ্ছে এ বার

গণপ্রহারের রমরমা আর অসহিষ্ণু আক্রমণগুলোর উৎস সেখানেই। খোদ সংসদে তার প্রমাণ মিলল এ বার।

Advertisement

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৫ জুলাই ২০১৮ ০০:৩৯
Share:

প্রতীকী ছবি।

ফল্গুধারার মতো অন্তঃসলিলা এক বিপজ্জনক প্রবাহ। সে ধারা ভারতের মূল ধারা বা মূল ভাব নয় ঠিকই। কিন্তু ধারাটা ক্রমশ শক্তি সঞ্চয় করছে এবং প্রচ্ছন্নতা ঝেড়ে ফেলে প্রকট হতে চাইছে। গণপ্রহারের রমরমা আর অসহিষ্ণু আক্রমণগুলোর উৎস সেখানেই। খোদ সংসদে তার প্রমাণ মিলল এ বার।

Advertisement

স্বঘোষিত গোরক্ষকদের দাপট গোটা দেশে বাড়ছে। প্রায় রোজ অশান্তি-অঘটনের খবর আসে আজকাল। কোথাও হামলা, কোথাও মারধর, কোথাও গণপ্রহারে খুন।

গোরক্ষার নামে এই একের পর এক আক্রমণের বিরুদ্ধে মুখর প্রতিবাদ শুরু হয়েছে দেশ জুড়ে। তার আঁচ পৌঁছে গিয়েছে সংসদে। কিন্তু বিস্ময়ের আরও বাকি ছিল। গোহত্যা চললে গণপ্রহারও চলবে— এক সাংসদের মুখ থেকে এমন কথা শোনার ছিল।

Advertisement

সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন

বিজেপি সাংসদ বিনয় কাটিয়ার এই মন্তব্য করেছেন। তবে শুধু বিনয় কাটিয়ার নন, আরএসএস নেতা ইন্দ্রেশ কুমারও প্রায় একই সময়ে একই রকম বয়ান দিয়েছেন। গোমাংস খাওয়া বন্ধ করে দিলেই গণপ্রহারও বন্ধ হয়ে যাবে— নিদান দেওয়ার ভঙ্গিতে মন্তব্য তাঁর।

অসহিষ্ণুতা, হিংসা, বিদ্বেষ, গণপ্রহার, মেরুকরণ, ঘৃণার রাজনীতির বিরুদ্ধে বার বার কলম ধরতে হচ্ছে সম্প্রতি। পরিস্থিতি নিয়ে বিচলিত গোটা দেশ। শীর্ষ আদালত উদ্বেগ প্রকাশ করছে। গণপ্রহার রুখতে আইন আনতে বলছে আদালত। বিরোধী দলগুলিও সম্মিলিত ভাবে কঠোর আইন প্রণয়নের দাবি তুলছে। এত কিছুর পরেও এমন মন্তব্য! আরএসএস নেতার কোনও সাংবিধানিক দায়বদ্ধতা রয়েছে কি না, সে না হয় বিতর্ক সাপেক্ষ। কিন্তু বিজেপি সাংসদের তো সে দায় রয়েছে। সংসদের উত্তাপ, সুপ্রিম কোর্টের উদ্বেগ সম্পর্কে অবহিত হওয়া সত্ত্বেও তিনি কী ভাবে করলেন এই মন্তব্য? তাঁর দল বিজেপি যে দেশের শাসক দল এবং শাসক দলের দায়বদ্ধতা যে অন্য সকলের চেয়ে বেশি, সে কথা কি ভুলে গেলেন কাটিয়ার?

আরও পড়ুন: পিটুনিতে ‘উদ্বিগ্ন’ কেন্দ্র, নেতাদের চিন্তা গরু নিয়েই

আসলে বোধ হয় কিছুই ভুলে যাননি কেউ। আসলে বোধ হয় এমনটাই চাইছেন বিনয় কাটিয়ার, ইন্দ্রেশ কুমাররা বা তাঁদের ঊর্ধ্বতনরা। হয়ত এমন চান তাঁদের অনুগামীরা।

আবার বলি, এ মানসিকতা, এ কট্টরবাদ ভারতে নতুন নয়। পৃথিবীর যে কোনও প্রান্তের মতো কট্টরবাদের বীজ ভারতের মাটিতেও ছিল। কিন্তু এ মাটিতে তা দমিত ছিল। উদার ভারতাত্মা কখনও মাথা তুলতে দেয়নি সঙ্কীর্ণতাকে।

যুগ সম্ভবত বদলেছে। ঔদার্যের শক্তিকে আজ ক্ষীণ দেখাচ্ছে। কট্টরবাদী মতাদর্শ আজ দেশের প্রশাসনের দণ্ডমুণ্ডের কর্তা। গণতান্ত্রিক অধিকার আক্রমণের মুখে পড়ছে। যে ভাবধারা প্রচ্ছন্ন বা লুক্কায়িত ছিল এ দেশে, তা মাথা তোলার চেষ্টা করছে।

এর বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ ভাবেই উঠে দাঁড়াতে হবে। গোটা দেশে আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। সে আন্দোলনকে অবশ্যই গণআন্দোলন হতে হবে। পথ সহজ-সরল নয়। লড়াইও খুব মসৃণ হবে না। তবে ধৈর্য ধরে এর মোকাবিলা করতে হবে। এক অসহিষ্ণু আস্ফালন প্রচ্ছন্নতা কাটিয়ে প্রকট হয়ে উঠছে গোটা দেশে কিন্তু তার সামনে আত্মসমর্পণ চলবে না। উদার ভারতীয়ত্ব যাতে হীনবল না হয়ে পড়ে এই উগ্রতার সামনে, তার জন্য সচেষ্ট হতে হবে এই মুহূর্ত থেকে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন