Farmer movement

ফিরিবে না

আন্দোলন চলিবে কিন্তু মেয়েরা ফিরিয়া যাইবে, এই প্রত্যাশার অন্তরালে রহিয়াছে এই ধারণা যে, মেয়েরা না থাকিলে ক্ষতি নাই। ইতিহাস তাহার বিপরীত সাক্ষ্যই দিতেছে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৫ জানুয়ারি ২০২১ ০৫:০০
Share:

কৃষক আন্দোলনের প্রতি তাঁহাদের সমর্থন জানাইতে ১৮ জানুয়ারি মহিলারা দিল্লি-সহ নানা শহরে সমাবেশ ও মিছিল করিলেন। কৃষি আইন প্রত্যাহারের দাবির সহিত যুক্ত হইয়াছিল মেয়েদের স্বাতন্ত্র্যের স্বীকৃতির দাবিটিও। কৃষক আন্দোলন বিষয়ে এক মামলার শুনানির সময়ে ভারতের প্রধান বিচারপতি প্রশ্ন করিয়াছিলেন, বৃদ্ধ ও মহিলাদের কেন রাখা হইয়াছে কৃষক আন্দোলনে? তিনি অনুরোধ করিয়াছিলেন, শিশু, বৃদ্ধ ও মহিলারা যেন ঘরে ফিরিয়া যান। প্রবল শীতে উন্মুক্ত স্থানে রাত কাটাইতেছেন শিশু-বৃদ্ধ-মহিলারা, দেখিয়া হয়তো বিচলিত হইয়াছিলেন বিচারপতি। তাঁহার সহানুভূতিকে সম্মান জানাইয়াও প্রশ্ন করিতে হয়, মহিলাদের ‘রাখা হইলে’— পুরুষরা রাখিলে— তবেই কি তাঁহারা থাকেন আন্দোলনে? মহিলাদের থাকিবার অথবা ঘরে ফিরিবার সিদ্ধান্তটি একান্ত তাঁহাদেরই, কোনও শুভানুধ্যায়ীও এ বিষয়ে তাঁহাদের কর্তব্য নির্দিষ্ট করিতে পারেন না। শিশু এবং মহিলাদের একত্রে উল্লেখ করিবারই বা কী যুক্তি থাকিতে পারে? শিশু আপন ভালমন্দ স্থির করিতে পারে না। প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ ও মহিলা, উভয়েরই সে ক্ষমতা রহিয়াছে। আন্দোলনের ক্লেশ স্বীকার করিবার শক্তি উভয়ের সমান। তাহা হইলে মেয়েরাই ঘরে ফিরিবে কেন? সংবিধান নারীকে সমানাধিকার দিয়াছে। জনজীবনে মেয়েদের যোগদান সহজ করিতে দায়বদ্ধ করিয়াছে রাষ্ট্রকে। প্রধান বিচারপতি জন-আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী মহিলাদের ‘ঘরে ফিরিবার’ অনুরোধ করিলে বিস্ময় জাগে।

Advertisement

আন্দোলন চলিবে কিন্তু মেয়েরা ফিরিয়া যাইবে, এই প্রত্যাশার অন্তরালে রহিয়াছে এই ধারণা যে, মেয়েরা না থাকিলে ক্ষতি নাই। ইতিহাস তাহার বিপরীত সাক্ষ্যই দিতেছে। শ্রমিক আন্দোলন, কৃষক আন্দোলন হইতে স্বাধীনতা সংগ্রাম, ব্রিটিশ ভারতের সকল প্রতিবাদ-প্রতিরোধের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ তাহার নারীশক্তি। স্বাধীন ভারতে মেয়েদের অংশগ্রহণ ব্যতীত কোনও বিক্ষোভই ‘জন-আন্দোলন’ হইয়া উঠে নাই। বহু আন্দোলনে অগ্রণী হইয়াছেন মেয়েরাই। সত্তরের দশকে বৃক্ষনিধনের প্রতিবাদে চিপকো, পরিবেশ ও বাস্তু ধ্বংসের বিরুদ্ধে নব্বইয়ের দশকে নর্মদা বাঁচাও হইতে তথ্যের অধিকার, খাদ্যের অধিকার আন্দোলন, সর্বত্রই মেয়েরা অংশ লইয়াছেন, নেতৃত্বও দিয়াছেন। ভারত তথা বিশ্বের নিকট নাগরিকত্ব আইন-বিরোধী আন্দোলনের মুখ ‘শাহিন বাগের দাদি’ বিলকিস বানো তাহার সাম্প্রতিকতম দৃষ্টান্ত। আন্দোলনে যোগ দিবার, নেতৃত্ব দিবার অধিকার যে কোনও মানুষ আপন অন্তর হইতে অর্জন করে। অনুমোদনের প্রয়োজন নাই।

আন্দোলনরত মেয়েরা কেবল এই কথা মনে করাইয়াছেন যে, কৃষক আন্দোলনে তাঁহাদের সমান অংশীদারি থাকিলেও কৃষিতে নাই। কৃষিশ্রমিকদের মধ্যে মেয়েদের সংখ্যাই অধিক, কিন্তু কৃষিজমির মালিকানা তাঁহাদের অতি সামান্য। ‘পিএম কিসান’ প্রকল্পের অনুদানের তালিকায় মহিলা কত, হিসাব করিলেই সে সত্য প্রকাশ পাইবে। স্বাধীনতা আন্দোলনে শামিল হইয়াও যেমন মেয়েরা আপন জীবনে স্বাধীন হন নাই, তেমনই ভূমি ও ফসলের উপর অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে গ্রেফতার হইয়া, গুলি খাইয়াও নিজেরা কৃষকবধূ রহিয়া গিয়াছেন, ‘কৃষক’ স্বীকৃতি পান নাই। আজ ফসলের ন্যায্য মূল্য পাইবার আন্দোলনে মেয়েদের ন্যায্য অধিকারের দাবিটিও সন্নিবিষ্ট, মনে করাইলেন মেয়েরা।

Advertisement
(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন