জামিন পেলেন মদন মিত্র।—ফাইল চিত্র।
আর ‘প্রভাবশালী’ নন নাকি তিনি, অতএব জামিন পেলেন মদন মিত্র। তিনি, তাঁর পরিবার, তাঁর দল এবং অনুগামীরা স্বভাবতই খুশি। প্রভাব ও প্রতিপত্তিই যে সমাজে একমাত্র কাঙ্খিত বিষয়, সেখানে ‘প্রভাবহীন’ হওয়ার সুফল পেয়ে একদা দোর্দণ্ডপ্রতাপ মদন মিত্র যে খুশি, ইতিহাস তা স্মরণে রাখবে নিশ্চয়ই।
যদিও প্রভাব বস্তুটির কী রূপ-রস-গন্ধ-বর্ণ, এটি দেখতে কেমন, অনুভবে কেমন, তার নির্দিষ্ট সংজ্ঞা পাওয়া বেশ কঠিন। ২০১৩ সালের জেলা পরিষদ নির্বাচনে মুর্শিদাবাদে যে তৃণমূল কংগ্রেসকে একটি মাত্র আসন পেয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছিল, বাকি ৬৯ আসনে পরাজয়ের দুঃখদীর্ণ ইতিহাসকে পিছনে ফেলে এই মুহূর্তে সেই দলই যে ৩৯টি আসনের দাবিদার হয়ে শেষ বিরোধী দুর্গ মুর্শিদাবাদও দখল করল, এতে কি কোথাও কোনও প্রভাব ও প্রতাপের ছায়া দেখা গেল? বিরোধী যে প্রার্থীদের ভোট দিয়ে জেতালেন মানুষ, সেই জনপ্রতিনিধিদেরই নিজেদের দলে টেনে নিয়ে এল তৃণমূল কংগ্রেস, বিরোধীরা যার পিছনে পুলিশ-প্রশাসনের পাশাপাশি শাসক দলের ‘প্রবল-চাপ’কেই দেখতে পাচ্ছে, সেখানে কোথাও প্রভাব শব্দটা লুকিয়ে আছে? দৃশ্যত ও আইনত প্রভাব বস্তুটিকে দেখা যাচ্ছে না, কারণ এই নির্বাচিত প্রতিনিধিরা দলে দলে শাসক-নৌকায় এসে ভিড়ছেন যে ভাবে, সেখানে সংবিধান-ভঙ্গের কোনও চিহ্ন নেই।
বিরোধী শিবিরের বিবিধ নেতা-নেত্রী-প্রতিনিধি সম্প্রতি ‘রাজ্যে উন্নয়নের জোয়ারে’ উৎসাহিত হয়ে সেই যজ্ঞে সামিল হতে চাইছেন। উৎসাহ ভাল, কিন্তু এই প্রজ্ঞার চিহ্নমাত্র কেন দেখা যায়নি মাস চারেক আগেও, এই প্রশ্ন করার লোকও পাওয়া যাচ্ছে কোথায়?
প্রভাব বস্তুটিকে দেখা যাচ্ছে কোথাও? নাকি প্রভাব বলে কোনও শব্দই আর থাকছে না? সবই হয় গণতন্ত্রের শর্ত মেনে এবং সংবিধান মোতাবেক?
‘প্রভাবশালী’ শব্দটাই একদিন অবলুপ্ত হয়ে যাবে না তো?