Yogi Adityanath

অনিদ্র

হিন্দুত্ববাদের পরাকাষ্ঠা আদিত্যনাথ কখনওই মেয়েদের এমন কৃতিত্ব স্বীকার করিতে পারেন না।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৭ জানুয়ারি ২০২০ ০০:০১
Share:

দিল্লি, লখনউ, কলিকাতা-সহ নানা শহরে রাতের পর রাত প্রকাশ্যে অবস্থান করিয়া মুসলিম মহিলারা কী করিতেছেন? দেশবাসী দেখিতেছে, তাঁহারা নাগরিকত্ব আইন প্রত্যাহারের দাবিতে আন্দোলন করিতেছেন। উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের ব্যাখ্যা অবশ্য অন্য রূপ। তিনি বলিয়াছেন, মুসলিম পুরুষরা আন্দোলনে অক্ষম, তাই ঠেলিয়া পাঠাইয়াছেন মহিলাদের। নাগরিকত্ব আইন কী, না জানিয়াই মহিলারা প্রতিবাদ করিতেছেন। কোনও জননেতা একটি অরাজনৈতিক জন-আন্দোলনকে এই ভাবে অপমান করিতে পারেন, তাহা শুনিলেও বিশ্বাস হয় না। আগাগোড়া সম্প্রীতিপূর্ণ, গণতান্ত্রিক একটি আন্দোলনের মোকাবিলা করিতে গিয়া আদিত্যনাথ তাহাকে সাম্প্রদায়িক বিভেদ-বিদ্বেষের ছকে বাঁধিবার চেষ্টা করিলেন, তাহাও অত্যন্ত আপত্তিকর। সর্বোপরি, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর মুখে মহিলাদের এমন অবমাননা অতি লজ্জার। দিল্লির শাহিনবাগে মুসলিম মহিলারা যে অবস্থান শুরু করিয়াছেন, নানা রাজ্যে তাহা ছড়াইয়াছে। কেবল বড় বড় শহরগুলি নহে, ছোট ছোট জেলা শহরেও মহিলারা সন্তান-সহ শীতের রাত্রিতে জাগিয়া সম্মিলিত প্রতিবাদ করিতেছেন। যত দিন নাগরিকত্ব আইন খারিজ না হইবে, তত দিন এই আন্দোলন চালাইবার সিদ্ধান্তও অনেকে ঘোষণা করিয়াছেন। বহু চেষ্টাতেও এই মহিলাদের কোনও রাজনৈতিক উদ্দেশ্য মেলে নাই, গুপ্ত সংগঠক কিংবা পৃষ্ঠপোষকের সন্ধান নাই, গূঢ় অভিসন্ধির খোঁজ পাওয়া যায় নাই। বহু ব্যয়ে, বহু গা ঘামাইয়াও বড় বড় দলের নেতারা যেমন আন্দোলন কখনও করিতে পারেন নাই, অনভিজ্ঞ বধূ-কন্যারা তাহা করিয়া দেখাইয়াছেন।

Advertisement

হিন্দুত্ববাদের পরাকাষ্ঠা আদিত্যনাথ কখনওই মেয়েদের এমন কৃতিত্ব স্বীকার করিতে পারেন না। অতএব প্রকাশ্যে বলিলেন, পুরুষদের দ্বারা তাড়িত হইয়াই মেয়েরা অবস্থানে বসিয়াছে। আশ্চর্য নহে। ভারতের পুরুষতন্ত্র কবে স্বীকার করিয়াছে যে মেয়েরা স্বেচ্ছায় কিছু করিতে পারে? মেয়েদের ইচ্ছাশক্তি, সাংগঠনিক শক্তির স্বাধীন প্রকাশ থাকিতে পারে, এমন সম্ভাবনাই তো মনুবাদী বর্ণহিন্দুত্বের নিকট এক ভয়াবহ সম্ভাবনা। মেয়েদের শক্তিরূপে পূজা করিয়া, কার্যক্ষেত্রে তাহাকে ঘরবন্দি করিয়া তাহার কর্মশক্তিটুকু নিংড়াইয়া নিতে ভারতীয় সমাজ অভ্যস্ত। মেয়েরা অন্যায় আধিপত্য সহিবে, প্রতিবাদ করিবে না, এমনই প্রত্যাশিত। আদিত্যনাথের উত্তরপ্রদেশই তাহার দৃষ্টান্ত। সেই রাজ্যে ধর্ষিতাকে পুলিশে অভিযোগ লিখাইতে হইলে গায়ে আগুন লাগাইতে হয়, মামলা আদালতে উঠিলে অভিযুক্তেরা ধর্ষিতাকে পুড়াইয়া মারে। এমন মহিলারা একটি অন্যায় আইনের বিরুদ্ধে সংগঠিত প্রতিবাদ করিবে, ইহা জানিলেও কি মানা সম্ভাব?

প্রাণ বিপন্ন করিয়া আন্দোলনে যোগ দেওয়া ভারতীয় মেয়েদের জন্য নূতন কিছু নহে। তেভাগা হইতে চিপকো, যে কোনও জন-আন্দোলনে মেয়েরা প্রধান ভূমিকা লইয়াছে, আজও লইতেছে। মুসলিম মহিলারাও নিজেদের অধিকার আদায় করিতে, পারিবারিক আইনের প্রয়োগ-পদ্ধতিতে অন্যায্যতা দূর করিতে অনেক আন্দোলন করিয়াছেন। কিন্তু নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে তাঁহাদের আন্দোলনে বৃহত্তর সমাজও উৎসাহের সহিত যোগ দিয়াছে। তবে কি ভারতের নাড়ির স্পন্দনের সহিত আদিত্যনাথের যোগ নাই? নাকি সত্যটি কী, তাহা জানিয়া বুঝিয়াও তিনি মিথ্যা নিন্দা করিতেছেন? নেতারা প্রকাশ্যে মিথ্যা বলিতেছেন, শুনিলে নাগরিকের বিচলিত ও ক্ষুব্ধ হওয়াই স্বাভাবিক। কিন্তু পরিস্থিতি বদলাইয়াছে। নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহের শাসনে প্রশ্ন করিবার ঝুঁকি অত্যধিক। তাই ইদানীং নীরবে নেতাদের সকল বচন শুনিয়া যাওয়াই নিয়ম হইয়া উঠিয়াছে। মুসলিম মহিলারা সেই নীরবতা ভাঙিলেন। কাহার ঘুম ছুটিয়াছে, আন্দাজ করা কঠিন নহে।

Advertisement
(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন