নিষ্কৃতি-মৃত্যু বা ইউথনেসিয়ার অধিকার সম্পর্কিত বিতর্ক কেবল অমীমাংসিত নহে, মীমাংসার অতীত। বহু শতাব্দী ধরিয়া এই বিতর্ক চলিয়াছে, আরও বহু সহস্রাব্দ ধরিয়া চলিতে পারে, কিন্তু সর্বজনগ্রাহ্য এবং প্রশ্নাতীত কোনও সমাধানে পৌঁছানো যাইবে না। তাহার অর্থ এই নয় যে, তর্ক নিষ্প্রয়োজন। বরং মীমাংসার অতীত বলিয়াই বিতর্ক দ্বিগুণ জরুরি, কারণ কোনও বিষয়ে একাধিক মত থাকিলে সেই মতগুলির সওয়াল-জবাব গণতান্ত্রিক সমাজের স্বধর্ম। সেই ধর্ম কেবল গণতন্ত্রকে ধারণ করে না, বিবিধ মত ও যুক্তির সংঘর্ষে যে আলো জ্বলে তাহাতে নূতন সত্য উদ্ভাসিত হয়, নূতন চিন্তা জাগ্রত হয়। সুতরাং সুপ্রিম কোর্ট যে নিষ্কৃতি-মৃত্যুর যৌক্তিকতা বিষয়ে সমস্ত রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলকে ভাবিতে বলিয়া একটি বড় আকারের বিতর্কের সম্ভাবনা সৃষ্টি করিয়াছে, তাহা গণতন্ত্রের পক্ষে শুভ। সাড়ে বত্রিশ রকমের তুচ্ছ বিষয় লইয়া নিরন্তর শোরগোলের নেশা ছাড়িয়া কুতর্কশীল ভারতীয় সমাজ একটি গভীর এবং মৌলিক সমস্যা লইয়া ভাবিত হইবে কি না, তাহা অবশ্য ভিন্ন প্রশ্ন। কঠিন প্রশ্নও বটে। সমস্যা যুগপত্ দার্শনিক ও ব্যবহারিক।
দার্শনিক প্রশ্নটি বহুমাত্রিক। দুই ধরনের ক্ষেত্রে নিষ্কৃতি-মৃত্যুর প্রশ্ন ওঠে। এক, যখন কেহ নিজেই সেই নিষ্কৃতি চাহিতেছেন। দুই, যখন তাঁহার স্বজনরা তাহা চাহিতেছেন। প্রথম ক্ষেত্রে স্বেচ্ছা যে সত্যই স্বেচ্ছা, তাহা কী রূপে প্রমাণ করা যাইবে? বিশেষত, স্বেচ্ছা যখন পরিবর্তিত হইতেই পারে? বাক্শক্তিও চলিয়া যাইবার পরে পদার্থবিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং নিষ্কৃতি চাহিয়াছিলেন, সেই আকাঙ্ক্ষা কি পরবর্তী জীবনে অপরিবর্তিত ছিল বা আছে? দ্বিতীয়ত, স্বেচ্ছাকে স্বেচ্ছা বলিয়া মানিয়া লইলেও প্রশ্ন থাকিয়া যাইবে: নিজের প্রাণ হরণের অধিকার কি সত্যই কাহারও আছে? আত্মহত্যাকে অপরাধ বলিয়া গণ্য করিবার যুক্তিও এই প্রশ্নেই নিহিত। আবার বিপরীত যুক্তিও প্রবল: স্বেচ্ছামৃত্যু ব্যক্তিস্বাধীনতার স্বাভাবিক অঙ্গ, নিজের জীবনের উপর অধিকার যদি কাহারও থাকে, তবে সেই জীবন শেষ করিবার উপরেই বা থাকিবে না কেন? আর, যাঁহার ‘স্বেচ্ছা’ বলিয়া কিছু অবশিষ্ট নাই, বা থাকিলেও তাহা জানিবার কোনও উপায় নাই, শারীরিক বা মানসিক ভাবে সম্পূর্ণ অক্ষম তেমন ব্যক্তির ক্ষেত্রে তো প্রশ্নটি দ্বিগুণ জটিল, কারণ সে ক্ষেত্রে নিষ্কৃতি-মৃত্যুর সিদ্ধান্ত অন্যের মতসাপেক্ষ। আত্মহত্যা নহে, সেখানে সরাসরি হত্যার ছায়া। সাম্প্রতিক কালে যে মামলা হইতে ভারতে নিষ্কৃতি-মৃত্যু সম্পর্কিত বিতর্কের প্রবল উত্থান, সেই চার দশক ধরিয়া কেবল-বাঁচিয়া-থাকা অরুণা শানবগের ক্ষেত্রেও এই প্রশ্ন উঠিয়াছে।
ব্যবহারিক যুক্তি বলে: যাহার জীবন কেবল বাঁচিয়া থাকার নামান্তর, যাহার অস্তিত্বের কোনও সার্থকতা নাই, কোনও অর্থই নাই, তদুপরি যাহার বাঁচিয়া থাকা শারীরিক ও মানসিক যন্ত্রণার কারণ, তাহাকে কেন জোর করিয়া জিয়াইয়া রাখা হইবে? সরাসরি হত্যা করিবার নীতি সমর্থন না করিলেও ‘লাইফ সাপোর্ট’-এর আয়োজন অপসারণ করা হইবে না কেন? অর্থাত্ সক্রিয় (অ্যাক্টিভ) না হোক, নিষ্ক্রিয় (প্যাসিভ) নিষ্কৃতি-মৃত্যু দেওয়া হইবে না কেন? কিন্তু এই ব্যবহারিক যুক্তি নূতন প্রশ্ন তোলে। ব্যবহারিক প্রশ্ন। কী ভাবে নিশ্চিত করা যাইবে, নিষ্কৃতির অধিকার অপব্যবহার করা হইতেছে না? ভারতীয় সমাজে এই আশঙ্কা অতিমাত্রায় প্রবল, ইতিপূর্বে সর্বোচ্চ আদালতও সেই অপ্রিয় সত্যটি স্মরণ করাইয়া দিয়াছে। যত আইনি রক্ষাকবচই রাখা হোক, অভিসন্ধি চরিতার্থ করিতে নিষ্কৃতির নামে হত্যা বন্ধ করিবার কোনও নিশ্চয়তা এই সমাজে কেহ দিতে পারে না। সুতরাং তর্ক চলুক, কিন্তু নিষ্কৃতি-মৃত্যুকে আইনসিদ্ধ করিবার তত্পরতা কাম্য নহে। আইন সব সমস্যার সমাধান করিতে পারে না। আইন যাহা পারে না, তাহার ভার আইনের উপর না চাপানোই বিচক্ষণতার কাজ।
য ত্ কি ঞ্চি ত্
দেশময় গুচ্ছের ক্লাব গড়ে, কোটপ্যান্ট হাঁকড়ে, ভারতীয় ধুতি-ফুতি পরলে সে-নেটিভদের নাকের ডগায় ‘প্রবেশ নিষেধ’ থাবড়ে, ইন্ডি-সায়েবগণ দিব্যি বিলেত পোয়াচ্ছিলেন। কিন্তু এখন জয়ললিতা খেপে গিয়েছেন। ভারতে ক্লাব খুললে নাকি তাবত্ ভারতীয় ন্যাবড়াজোবড়া ড্রেসকেও সম্মান দিতে হবে! এ সব জাত্যভিমান-গন্ধী প্রতিবাদ হেভি ছোঁয়াচে, যুগটাও সাবঅলটার্ন-দাপাদাপির, এলিটদের অভয়ারণ্য তাই প্যানিক-স্ট্রিকেন: শেষে ক্রিসমাসে টার্কি ছেড়ে খাব দিশি চিকেন?