ইহাদেরই হাতে
নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী
প্রকাশ্যে যে-লোকটা গিয়ে হাট-বাজারে অথবা মেলায়
ভোটারের হাতে
ঝকঝকে কারেন্সি নোট গুঁজে দেয়, সে খুবই খারাপ।
অন্য দিকে চলছে অন্য রকমের খেলা।
ভর্তুকির গ্যাস-সিলিন্ডার
বছরে ছ’টার বেশি না-দেবার হুমকি দিয়ে কিছুকাল পরে
ঘাড়ের উপরে নির্বাচন
এসে পড়ামাত্র যারা আগের কথাটা গিলে ফেলে
ভোটারের মন ভেজাতে বলে,
‘ছ’টা নয়, ন’টা... আচ্ছা বারোটাই দেব,’
কী বলব তাদের?
গঙ্গাজলে ধোয়া তুলসীপাতা?
উত্তর খুঁজতে গিয়ে ভোটারের মাথা
বিগড়ে যেতে থাকে।
সে ভাবে যে, ‘তবু হায় ইহাদেরই’ হাতে
ন্যস্ত হতে চলেছে এখন
ভারতের ভাগ্য নির্ধারণের ক্ষমতা!
বিড়বিড় করে সে শুধু বলে হায়-হায়!
অবস্থাটা দেখতে-দেখতে মনে পড়ে যায়
বলিতে-চড়ানো
সেই ছাগশিশুর দৃশ্য, হাড়িকাঠে মাথা
ঢোকাবার আগে যে এখন
গতিরন্যথা যে নাস্তি, সেটা বুঝে গিয়ে
নির্বিকার
খাচ্ছে তো খেয়েই যাচ্ছে শুকনো বেলপাতা।
অবস্থান
শ্রীজাত
চোখ ঝলসায় জবর ঝলক
তোমার জন্যে বাজার তৈরি।
বিনিময়ের দোষ কী বলো?
নিজের মাংসে নিজেই বৈরী।
এই তো সময় বিক্রিবাটার।
সেলাম জানাও বাজারদরকে।
সুযোগ ছিল একলা হাঁটার,
যাচ্ছি না আর সে সব তর্কে।
দাগ মুছিয়ে দিচ্ছে ধুলো—
কীসের শিবির, কীসের পক্ষ...
অবস্থান তো কাপাসতুলো।
যাহা বিরোধ, তাহাই সখ্য।
উচ্চকণ্ঠ এখন মিহি
সময় বুঝে আপনি-আজ্ঞে—
কাদের কাছে জবাবদিহি?
আগের কথা চুলোয় যাক গে।
বরং নতুন কথার ফাঁকে
দিকবদলের নতুন রাংতা—
উনুন সেই উনুনই থাকে,
নুন আনতে ফুরোয় পান্তা।
পথই তোমায় দিচ্ছে বিধান
লোভ দেখাচ্ছে হাজার জানলা...
একটু দ্বন্দ্ব, একটু দ্বিধা—
আয়না বনাম দাঁড়িপাল্লা।
বোঝাও যায় না এ-উৎসবে
কে দর্শক আর কে দ্রষ্টব্য,
ঠিক করে নাও কোনটা হবে—
সহজ, নাকি সহজলভ্য?