সম্পাদকীয় ২

তিক্ত সত্য

কর বাড়াইলে ওজন কমে। অন্তত, ফিলাডেলফিয়া সিটি কাউন্সিল তেমন আশা করিতেছে। যে খাদ্যে অতিরিক্ত ক্যালরি, তাহার দাম বাড়িলে মানুষ সেই খাদ্য কম খাইবে। তাহাতে ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকিবে। এই আশায় ফিলাডেলফিয়ার কর্তৃপক্ষ চিনিযুক্ত সোডা জাতীয় ঠান্ডা পানীয়ের উপর কর বসাইল।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২০ জুন ২০১৬ ০০:০০
Share:

কর বাড়াইলে ওজন কমে। অন্তত, ফিলাডেলফিয়া সিটি কাউন্সিল তেমন আশা করিতেছে। যে খাদ্যে অতিরিক্ত ক্যালরি, তাহার দাম বাড়িলে মানুষ সেই খাদ্য কম খাইবে। তাহাতে ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকিবে। এই আশায় ফিলাডেলফিয়ার কর্তৃপক্ষ চিনিযুক্ত সোডা জাতীয় ঠান্ডা পানীয়ের উপর কর বসাইল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এই প্রথম কোনও বড় শহরে এমন কর বসিল। প্রতিবাদ কম হয় নাই। ঠান্ডা পানীয় প্রস্তুতকারক সংস্থা এবং তাহার ব্যবসায়ীরা যথেষ্ট আপত্তি করিয়াছেন। ব্যবসায়ীদের সংগঠন বিজ্ঞাপন দিয়া বলিয়াছে, ইহা আইনবিরোধী, ক্রেতাস্বার্থের পরিপন্থী। এই করের বিরুদ্ধে তাঁহারা আদালতেও যাইবেন। অপর পক্ষে সিটি কাউন্সিলের বক্তব্য, স্থূলতা মাত্রা ছাড়াইয়াছে। শহরের অর্ধেকেরও বেশি প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ অতিস্থূল। শিশুদের মধ্যেও স্থূলতা মারাত্মক। চিনিযুক্ত সোডার দাম স্বাস্থ্যকর পানীয়ের তুলনায় কম। তাই দরিদ্র মানুষই তাহা অধিক পান করেন। এই কর একই সঙ্গে স্থূলতা এবং দারিদ্রের বিরুদ্ধে তাঁহাদের পদক্ষেপ। মেক্সিকোয় মিষ্টি পানীয়ের উপর কর বসাইবার ফলে তাহার বিক্রয় কমিয়াছে। সিটি কাউন্সিলের কর্তাদের আশা, তাঁহাদের শহরেও তাহাই হইবে। নূতন করের টাকায় নানা জনকল্যাণমূলক প্রকল্প চলিবে, সঙ্গে স্বাস্থ্যকর পানীয় প্রস্তুতকারকদের করে ছাড় দেওয়া হইবে। স্থূলতা-সম্পর্কিত নানা অসুখের চিকিৎসার খরচও বাঁচিবে।

Advertisement

বিতর্কটি নূতন নহে। এক দিকে খাদ্য-পানীয় বিপণনে ব্যবসায়ীর অধিকার, ক্রেতার সুলভে খাদ্য-পানীয় পাইবার অধিকার, অন্য দিকে নাগরিকের স্বাস্থ্যরক্ষার দায়বদ্ধতা— এই দুইয়ে টানাটানি বহু দিনের। মূলত সরকারের চাপেই চটজলদি খাবার বিক্রয়কারীরা তাহাদের খাদ্যতালিকায় স্যালাড ও ফল রাখিতে বাধ্য হইয়াছে। অনেক সুপারমার্কেটে চকলেট ও অন্যান্য লোভনীয় মিঠাই প্রদর্শনীতে রাশ টানা হইয়াছে। স্কুল ও কলেজগুলিতে অধিক সব্জি ও ফল খাইবার বার্তা দেওয়া হইতেছে। শৈশবে স্থূলতা এড়াইবার বিষয়ে প্রচার করিতেছেন মিশেল ওবামা। তামাকের ন্যায় চিনিও যে রোগের সূচনা করে এবং তাহা নিয়ন্ত্রণের কাজে রাষ্ট্রেরও যোগদান প্রয়োজন, সেই দাবি গোটা উন্নত দুনিয়াতেই ক্রমশ জোরালো হইতেছে।

স্থূলত্ব যুক্তরাষ্ট্রের ন্যায় ধনী দেশের মাথাব্যথা, ভাবিলে মস্ত ভুল হইবে। ব্রিটিশ মেডিক্যাল জার্নালে প্রকাশিত একটি সাম্প্রতিক গবেষণাপত্রে প্রকাশ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পুরুষ-মহিলাদের মধ্যে স্থূলত্ব কমিতেছে, চিন ও ভারতে তাহা বাড়িতেছে। ১৯৭৫ সালে ভারতে মাত্র আট লক্ষ স্থূল মহিলা ছিলেন, এখন তাঁহাদের সংখ্যা দুই কোটি। ভারত ইতিমধ্যেই বিশ্বের ‘ডায়াবিটিস রাজধানী’ হইয়াছে। অপুষ্টি লইয়া অধিক আলোচনা হইলেও, স্থূলত্বও এই দেশে বড় জনস্বাস্থ্য সমস্যা। স্থূলত্ব-সম্পর্কিত বিভিন্ন রোগ, যেমন উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবিটিস, শ্বাসকষ্ট, সকলই স্বাস্থ্যব্যবস্থার উপর চাপ তৈরি করিবে, সন্দেহ নাই। বিপুল টান পড়িবে রাজস্বেও। শহরে বসবাস বাড়িতেছে, প্রযুক্তিতে উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে শারীরিক শ্রম কমিয়াছে। অতএব মানুষের অভ্যাসে পরিবর্তন আনিতে হইবে। তাহার মধ্যে খাদ্যাভ্যাস প্রধান, সন্দেহ নাই। বিদেশের ন্যায় এ দেশেও ক্রমশ টাটকা সব্জি, ফল অতি ব্যয়সাধ্য হইয়া উঠিতেছে। তুলনায় প্যাকেটজাত ভাজাভুজি ও মিষ্টি পানীয় সস্তা হইয়াছে। ইহার পরিবর্তন করিতে নানা উপায় লইতে হইবে। বাড়তি করের বিবেচনা তাহার একটি মাত্র।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement