সম্পাদকীয় ২

নিরুপায়

একই সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চিন, উভয়েরই এ হেন স্তম্ভিত বিহ্বলতা তৈরি করিতে পারে সম্ভবত দুনিয়ার একটিমাত্র দেশ, যাহার নাম উত্তর কোরিয়া। হঠাৎ করিয়া আর একটি গুরুতর পারমাণবিক পরীক্ষা চালাইয়া বিশ্ব কূটনীতিকে আগাপাস্তলা চমকাইয়া দিয়াছেন পিয়ংইয়াং-এর প্রধানপুরুষ কিম জং আন।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১১ জানুয়ারি ২০১৬ ২২:২৬
Share:

একই সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চিন, উভয়েরই এ হেন স্তম্ভিত বিহ্বলতা তৈরি করিতে পারে সম্ভবত দুনিয়ার একটিমাত্র দেশ, যাহার নাম উত্তর কোরিয়া। হঠাৎ করিয়া আর একটি গুরুতর পারমাণবিক পরীক্ষা চালাইয়া বিশ্ব কূটনীতিকে আগাপাস্তলা চমকাইয়া দিয়াছেন পিয়ংইয়াং-এর প্রধানপুরুষ কিম জং আন। সকলের কাছে সামর্থ্যের পরিচয় দিবার জন্যই এই প্রদর্শন-ব্যবস্থা, সুতরাং কিম জং আন-এর এই ‘হাইড্রোজেন বোমা’টির শক্তি প্রযুক্তির হিসাবে ঈষৎ কম হইলেও তাহার কূটনৈতিক অভিঘাত কম নহে। চার বৎসরের শাসনকালে ইহা দ্বিতীয় বিস্ফোরণ— বুঝিতে অসুবিধা হয় না, কিম জং আন স্থির করিয়াছেন, দক্ষিণ কোরিয়াকে ডুবাইয়া দিবার সামর্থ্য বিষয়ে যে দাবি উত্তর কোরিয়া তুলিয়া আসিতেছে, তাহা যেন কোনও মতেই ফাঁপা দাবি বলিয়া মনে না হয়, তাহা প্রতিষ্ঠার ভার তাঁহারই উপর। শাসক পরিবারের এই তরুণ বংশধর ক্ষমতায় আসা-ইস্তক যে হম্বিতম্বির রাজনীতি করিয়া চলিয়াছেন, তাহা উত্তর কোরিয়ার ইতিহাসেও সুলভ নহে। অনেকেই ইতিমধ্যে সন্দেহ করিতে আরম্ভ করিয়াছেন যে, মস্তিষ্ক-বিকৃতির লক্ষণ তাঁহার কাজেকর্মে পরিস্ফুট। কিন্তু ‘শাসক বদল’-এর ছকটি গত পনেরো বছরে অতিমাত্রায় লাঞ্ছিত, এবং পরমাণু শক্তিধর পিয়ংইয়াংয়ের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান এই পৃথিবীতে কার্যত অ-সম্ভব। সুতরাং আমেরিকা ও চিন পারস্পরিক দোষারোপে হৃদয়ভার লাঘব করিতেছে। মার্কিন অভিযোগ, চিনই পিয়ংইয়াংকে দমাইবার ক্ষমতা রাখে, কিন্তু তাহারা এমন পাগলামি দেখিয়া-শুনিয়াও কিছুই করিতেছে না। চিন বলিতেছে, পিয়ংইয়াংকে আসলে মাথায় চড়াইয়াছে মার্কিনরাই, এখন কাঁদিলে হইবে কী!

Advertisement

একটি কথা ক্রমশ পরিষ্কার হইতেছে। বাহিরের দুনিয়া যাহা ভাবে, তাহার অপেক্ষা পিয়ংইয়াং-এর পারমাণবিক সামর্থ্য সম্ভবত অনেকটাই বেশি। কেহই এত দিন কল্পনা করে নাই যে তাহারা পারমাণবিক প্রযুক্তি এতখানি অগ্রসর করিয়া ফেলিয়াছে, মিনিয়াচারাইজেশন বা ক্ষুদ্রীকরণের কাজে এতটা সফল হইয়াছে যে একটি ক্ষেপণাস্ত্রের মধ্যে পারমাণবিক বোমা পুরিয়া দিতে পারিবে! তাহাই কিন্তু ঘটিল। কেবল কিম জং আনের স্পর্ধাই নয়, তাঁহার দেশের সামর্থ্যও যুগপৎ আমেরিকা ও চিনকে তাক লাগাইয়া দিয়াছে, সন্দেহ নাই। সামরিক সম্ভার ও তাহার সদাপ্রস্তুতিতেও যে পিয়ংইয়াং অতি সতর্ক, তাহাও অজানা নয়। সুতরাং উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে কোনও গোলমেলে পদক্ষেপ হইলেই পিয়ংইয়াং যে সীমান্তের অপর পারে বহু গুণ জনবহুল দেশ দক্ষিণ কোরিয়া, বিশেষত তাহার রাজধানী সোলকে ‘আগুনের সমুদ্রে’ ডুবাইয়া দিতে পারে, এই হুমকিটিকেও অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে গ্রহণ করিতে হইতেছে।

আন্তর্জাতিক বলপ্রয়োগের মাধ্যমে কিম জং আনকে সরাইয়া দিবার কোনও সম্ভাবনাই নাই। কড়া নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের ক্ষেত্রটিও সীমিত। আন্তর্জাতিক লেনদেন এমনিতেই যাহার অকিঞ্চিৎকর, তাহার উপর আর কত নিষেধাজ্ঞা চাপানো যায়! ফলে উপায় মাত্র একটিই। কোনও মতে বুঝাইয়া শুনাইয়া পথে আনিবার চেষ্টা করা। বাস্তবিক, আলোচনা ও আলোচনার চেষ্টা, ইহা ভিন্ন কোনও পথই যে নাই, ঝগড়াঝাঁটির উত্তাপের মধ্যেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, চিন, ব্রিটেন, রাশিয়া, সকল দেশই তাহা বুঝিতেছে। পিয়ংইয়াংয়ের বিড়ালটির গলায় ঘণ্টা বাঁধিবে কে, ইহাই এখন প্রশ্ন।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement