আইনরক্ষকরা রেশমি-রাহুলকে গ্রেফতার করিয়াছেন। অর্থের বিনিময়ে যৌনচক্র পরিচালনার অভিযোগে ‘কিস অব লাভ’ আন্দোলনের দুই পুরোধা ধৃত। দেশের আইন অনুযায়ী অভিযোগ প্রমাণ হইলে শাস্তি বিধেয়। যাহারা শিশু-কিশোরদের যৌন ব্যবসায়ের অঙ্গ করিয়া তোলে, অর্থলোভে বৃহত্তর যৌন ব্যবসা ফাঁদিয়া বসে, নারী পাচার করে, অন্তর্জালে যৌন পরিষেবার আশ্বাস দেয়, তাহাদের কঠোর শাস্তি প্রাপ্য। কিন্তু আন্দোলনের মূল বার্তাটি ইহাতে ভুল প্রমাণিত হয় না। কথাটি মনে করাইয়া দেওয়া বিশেষ আবশ্যক। তাহার কারণ, সাধারণ ভাবে ভারতের জনগণের বৃহদংশের মধ্যে অবদমন ও রক্ষণশীলতা বিচিত্র জ্যেষ্ঠতাতবৃত্তির জন্ম দিয়াছে। ইহার পালে ইদানীং জোর হাওয়া দিয়াছে সাংস্কৃতিক মৌলবাদ। ব্যক্তিমানুষের আহারবিহারের উপর তাহার ধ্বজাধারীদের নজরদারির অন্ত নাই। দেশবাসী আনুগত্যের হাম্বারব তুলিলেই তাহারা খুশি। ফলে রেশমি-রাহুলের বিরুদ্ধে অভিযোগের কথা শুনিবামাত্র রক্ষণপন্থীরা বলিবেন, ‘ইহাই হইবার ছিল। কেরলে চুম্বনের মাধ্যমে মুক্ত মত প্রকাশের আন্দোলনের সপক্ষতা করিয়াছিলেন যাঁহারা, তাঁহারা কেমন মানুষ বোঝা যাইতেছে, সুতরাং তাঁহাদের আন্দোলন কেমন তাহাও বোঝা যাইতেছে।’
এই মনোভাবের বিরুদ্ধে সতর্ক থাকা জরুরি। ‘কিস ফর লাভ’ আন্দোলন একটি বিশেষ মানসিকতার প্রকাশভঙ্গি। তাহা ব্যক্তির অধিকার খর্ব করিবার সামাজিক, গোষ্ঠীগত ও রাষ্ট্রীয় খবরদারির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানায়। প্রতিবাদের চিহ্ন হিসাবে সমবেত প্রকাশ্য চুম্বনের পদ্ধতিটি সুচিন্তিত কি না, তাহা ভিন্ন প্রশ্ন। কিন্তু ইহাকে আক্রমণ করিবার কোনও নৈতিক অধিকার কাহারও নাই। যাহা পছন্দ নহে, তাহা দেখিলেই রে রে করিয়া উঠিবার অভ্যাস সহনশীলতার পরিপন্থী। এক অর্থে ‘কিস অব লাভ’ আন্দোলনের সংগঠকরা এই সহনশীলতার পরীক্ষাই করিতে চাহিয়াছেন। সংস্কার ও অনভ্যাসের ফলে যাহা সমাজের চোখে বিসদৃশ বলিয়া মনে হয় সেই দৃশ্যের উৎপাদন করিয়া রক্ষণশীলতার দুর্গে আঘাত করাই ইহার উদ্দেশ্য। সাম্প্রতিক কালে দেশের নানা নগরে এইরূপ অপ্রচলিত দৃশ্যের উৎপাদনকারী আন্দোলন চোখে পড়িতেছে। ‘স্লাটওয়াক’ তাহার আর এক দৃষ্টান্ত। এই সকল উদ্যোগের একটি বড় উদ্দেশ্য: অপ্রকাশ্য বলিয়া দাগাইয়া দেওয়া দৃশ্যাবলিকে দৃষ্টিগোচর করানো। আশা, দেখিতে দেখিতে সহিবে। তখন আর অপরের বিষয়ে নাক গলাইবার ‘বজরঙ্গি’ আবেগ প্রবলতর হইয়া উঠিবে না।
আর একটি কথা মনে রাখিবার। ভারত অপ্রকাশ্যতার দেশ নহে, প্রদর্শনেরও দেশ। প্রবৃত্তি ও প্রণয়ের বিদগ্ধ মার্গের চর্চা এ দেশের নাগরিক সমাজে হইয়াছিল। সমগ্র দেশে ছড়াইয়া ছিটাইয়া থাকা মন্দিরগাত্রের মিথুনমূর্তিগুলি তাহার প্রমাণ। মুক্তকাম ও বদ্ধকাম সেই মূর্তিগুলি প্রকাশ্যে অপরাপর মূর্তির পাশে অনায়াসে স্থান পাইয়াছিল। অস্যার্থ: কামনাবাসনা জীবনের অপরাপর কার্যের মতোই স্বাভাবিক, অনিবার্য। জীবন হইতে তাহাদের বিলগ্ন করিবার প্রয়োজন নাই। প্রকাশ্যে সমবেত ভাবে চুম্বন-প্রদর্শনেও এই বার্তা নিহিত। নরনারীর শরীর ও সম্পর্ক বিষয়ে মুক্তচিন্তার বিরোধীরা ‘যৌনতা’কে জীবনবহির্ভূত অপ্রকাশ্য বিষয় বলিয়া মনে করেন। আবার, যাঁহারা যৌনতা লইয়া ব্যবসা করেন তাঁহারাও যৌনতাকে জীবনবিলগ্ন ক্রয়সামগ্রী বলিয়া ভাবেন। সেই ক্রয়বিক্রয়ের বাজারে তাঁহারা যৌনকর্মীদের বঞ্চনা করিয়া থাকেন। কিন্তু যৌনতা জীবনের স্বাভাবিক অঙ্গ, সন্তান উৎপাদনের বাহিরে এই রতিবাসনার বিশেষ গুরুত্ব আছে এই কথাটুকু স্বীকার করিতে আপত্তি কোথায়? রেশমি-রাহুলের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠিয়াছে বলিয়া জ্যাঠামহাশয়গিরির বিরুদ্ধে আন্দোলন মিথ্যা হইয়া যায় নাই।
য ৎ কি ঞ্চি ৎ
অক্সফোর্ড ডিকশনারিতে ‘এ বছরের শব্দ’ বলে জায়গা দেওয়া হল একটি ‘ইমোজি’কে। মানে, এসএমএস বা মেল-এ আমরা যে মুখের ছবিগুলো পাঠিয়ে থাকি, হাসি কান্না রাগ বোঝাতে, তাদেরই একটা। একটা ছবিকে নেওয়া হয়েছে যখন, বাকিরা কী দোষ করল? অভিধানে তা হলে ঢুকে পড়ুক রাশি রাশি ছবি, বেশ রঙিনও হবে। মোটামুটি গোল্লা মুখ এঁকে হাসি বসাতে পারলেই লোকের নিরক্ষর বদনামও ঘুচে যাবে। তবে হাসিখুশি লোক ও রকম সই করলে, ব্যাংক মানবে কি?