সম্পাদকীয় ২

সাধনার ফল

সাধারণ মানুষের মনে ক্ষোভ জমিতেছে। পূর্ব মেদিনীপুরে তৃণমূল কংগ্রেসের সভায় যে যুবক দলীয় সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে চপেটাঘাত করিলেন, তাঁহার ক্ষোভও অনুমান করা চলে। বহিঃপ্রকাশের ধরনটি অবশ্যই অত্যন্ত আপত্তিকর। দলের যুবরাজ হউন বা নিতান্ত সাধারণ কোনও মানুষ, মঞ্চে উপবিষ্ট হউন বা সভার মাঠে দণ্ডায়মান, প্রতিপত্তি বা পরিচয় নির্বিশেষেই যে-কাহারও উপর এমন আক্রমণ অতি নিন্দনীয়।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৭ জানুয়ারি ২০১৫ ০০:০১
Share:

সাধারণ মানুষের মনে ক্ষোভ জমিতেছে। পূর্ব মেদিনীপুরে তৃণমূল কংগ্রেসের সভায় যে যুবক দলীয় সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে চপেটাঘাত করিলেন, তাঁহার ক্ষোভও অনুমান করা চলে। বহিঃপ্রকাশের ধরনটি অবশ্যই অত্যন্ত আপত্তিকর। দলের যুবরাজ হউন বা নিতান্ত সাধারণ কোনও মানুষ, মঞ্চে উপবিষ্ট হউন বা সভার মাঠে দণ্ডায়মান, প্রতিপত্তি বা পরিচয় নির্বিশেষেই যে-কাহারও উপর এমন আক্রমণ অতি নিন্দনীয়। কিন্তু, এই চপেটাঘাতের প্রতিক্রিয়ায় শাসক দলের সভামঞ্চে যে তাণ্ডব চলিল, তাহার তীব্রতা কেবল ভয়াবহ নহে, নৃশংস। এই নৃশংসতা অবশ্য পশ্চিমবঙ্গের প্রতীকী। শাসক দলের সহিত প্রশাসনের পার্থক্য ঘুচিয়া গিয়াছে। যে মানসিকতায় সোনালি গুহ নিজেকে ‘রাজ্যের সরকার’ বলিয়া দাবি করিয়াছিলেন, সভামঞ্চে প্রহারোদ্যত নেতাকর্মীরাও সেই মানসিকতাতেই চালিত। তাঁহারা জানেন, পশ্চিমবঙ্গে তাঁহারাই সত্য। পুলিশ নামমাত্র। অতএব, নেতার উপর হামলার অব্যবহিত পরেই তাঁহারা শাস্তির ব্যবস্থা করিয়া দিয়াছেন। ইচ্ছাময়ী মুখ্যমন্ত্রী সাড়ে তিন বৎসরে পশ্চিমবঙ্গকে ঠিক এই অতলেই লইয়া গিয়াছেন। ফলে, বিহার যাহা পারে, পশ্চিমবঙ্গ পারে না। এক যুবক সে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশে জুতা ছুড়িয়া মারায় তাহাকে ধরিয়া পুলিশের হাতে তুলিয়া দেওয়া হইল। বিচারের দায়িত্ব সভাস্থ সমর্থকরা নেন নাই।

Advertisement

অবশ্য, পূর্ব মেদিনীপুরের সভায় উপস্থিত তৃণমূল কর্মীরা ভাবিতেই পারেন, রাজ্য পুলিশ তো দলের একটি শাখা সংগঠন মাত্র। তাহাদের আর অধিক গুরুত্ব কী? কথাটিকে উড়াইয়া দেওয়ার উপায় রাজ্য পুলিশ গত সাড়ে তিন বৎসরে রাখে নাই। এই ঘটনাটিতেও না। নেতার উপর হামলাকারী যুবকের বিরুদ্ধে পুলিশ খুনের চেষ্টার অভিযোগ দায়ের করিয়াছে। প্রকাশ্য জনসভায় কোনও হাতিয়ার ছাড়া উপস্থিত এক যুবক দুইটি চড় মারিয়া খুনের চেষ্টা করিতেছিল, এমন কথা লিখিতে হয় বিস্তর কল্পনাশক্তি প্রয়োজন, নয়তো কালীঘাটের প্রতি প্রশ্নাতীত আনুগত্য। অপর পক্ষে, মঞ্চে যে কর্মী-সমর্থকদের প্রহারে অভিযুক্ত যুবকের প্রাণসংশয় হইয়াছে, পুলিশ তাহাদের বিরুদ্ধে মামলা খাড়া করিতে পারে না। ‘অজ্ঞাতপরিচয়’ ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অনিচ্ছাকৃত খুনের চেষ্টার মামলা হইয়াছে। পুলিশের দলভক্তি এমনই নির্লজ্জ যে সে বিষয়ে কথা বাড়ানো অর্থহীন। তৃণমূল কংগ্রেস সমর্থকরা যদি পুলিশকে তাঁহাদের দলের নিচুতলার কর্মী জ্ঞান করেন, তাহাতে আপত্তি জানাইবার কোনও কারণ নাই।

পশ্চিমবঙ্গের এই নিকষ অন্ধকার সর্বাধিনায়িকা বঙ্গেশ্বরীর অভিজ্ঞান। তিনি এই ধ্বংসের সাধনাতেই বসিয়াছিলেন। তাঁহার তপস্যা ফলপ্রসূ হইয়াছে। যে পুলিশ যাদবপুরে ছাত্র ঠেঙাইয়াছিল, আর যে দল পূর্ব মেদিনীপুরে নেতার উপর হামলাকারী যুবককে গণপ্রহার করিয়াছে, উভয়ের মধ্যে কোনও ফারাক নাই। চরিত্রেও নহে, ভঙ্গিতেও নহে। পশ্চিমবঙ্গের দুর্ভাগ্য, এই রাজ্যের প্রশাসন উত্তরোত্তর এমনই ভয়ানক ভাবে মেরুদণ্ডহীন হইয়াছে যে তাহাকে ঝুঁকিতে আদেশ করিবার পূর্বেই তাহারা সাষ্টাঙ্গে লুটাইয়া পড়ে। তবে, মুখ্যমন্ত্রী স্মরণে রাখিতে পারেন, তিনি ঘটা করিয়া তাঁহার বিশ্ব বঙ্গ সম্মেলনে যে শিল্পপতিদের ডাকিতেছেন, এই ঘটনাগুলি তাঁহাদের চোখ এড়াইতেছে না। এমন দলসর্বস্ব, প্রশাসনহীন রাজ্যে পুঁজি ঢালিতে কাহারও আগ্রহ হইবে না। পশ্চিমবঙ্গের জমি শিল্পহীনই থাকিবে। সেখানে দলতন্ত্রের অক্ষয় আসন। যে সাধনায় যেমন সিদ্ধি।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement