সাম্প্রদায়িকতার তাস খেললে ইতিহাসের আঁস্তাকুড়ে যাবে বিজেপি

এখন নরেন্দ্র মোদীর বাজপেয়ীকরণ কি সম্ভব? প্রশ্ন তুললেন জয়ন্ত ঘোষালএখন নরেন্দ্র মোদীর বাজপেয়ীকরণ কি সম্ভব? প্রশ্ন তুললেন জয়ন্ত ঘোষাল

Advertisement
শেষ আপডেট: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০১:০৯
Share:

লালকৃষ্ণ আডবাণী পাকিস্তানে গিয়ে জিন্নাকে ধর্মনিরপেক্ষ বলার অপবাদে সঙ্ঘ-পরিবারে আগুন জ্বলেছিল। সেই সময়ে আডবাণী বলেছিলেন, বিজেপির মতাদর্শেও সংস্কার করতে চাইছেন তিনি। গোঁড়া হিন্দুত্ববাদী বিজেপি থেকে দলকে আধুনিক পথে হাঁটতে হবে। সেই সময় এক প্রবীণ সাংবাদিক আমাকে বলেছিলেন, “আডবাণীর এই চেষ্টা দেখে মনে হচ্ছে যে বেড়াল বলছে মাছ খাব না। হিন্দুত্ব নামক একটা গোঁড়া মতাদর্শ বাদ দিলে বিজেপির মতাদর্শে আর থাকেটা কী? ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি একেই বলে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলছেন, ধর্মীয় ও সাম্প্রদায়িক সঙ্কীর্ণতা নয়। তিনি চাইছেন উন্নয়ন এবং অর্থনৈতিক শ্রীবৃদ্ধি। মোদী বললেও সাধারণ মানুষ কিন্তু সেটা বিশ্বাস করছেন না। উল্টে দিল্লির নির্বাচনের আগে দুষ্কৃতীরা গির্জাঘরে আঘাত হানলে লোকে কিন্তু দোষী সাব্যস্ত করছে নরেন্দ্র মোদীকেই। পুলিশ দুষ্কৃতীদের গ্রেফতার করার পর বিজেপি জানিয়ে দিল দুষ্কৃতীরা তাদের দলের কেউ নয়। কিন্তু অভিযোগ পিছু ছাড়ল না।

Advertisement


অটলবিহারী বাজপেয়ী ও লালকৃষ্ণ আডবাণী।

অভিযোগ উঠল অমিত শাহ মেরুকরণের রাজনীতি করছেন। এ বারের দিল্লির নির্বাচনে ফলাফলে কেজরীবালের পক্ষে যে ঝড় দেখা দিল, সেই ঝড় কতটা নরেন্দ্র মোদী বিরোধী আর কতটা রাহুল গাঁধী বিরোধী, তা নিয়ে কূট তর্কের ধূম্রজাল যতই রচনা করা হোক না কেন, এ কথা বলা যায় যে নরেন্দ্র মোদীর সরকার সম্পর্কে দেশের একটা বড় অংশের মনোভাব হল, এই সরকারটা বহুত্ববাদী অখণ্ড ভারতের প্রতিনিধিত্ব করে না। নরেন্দ্র মোদী নিজেই এই প্রতিবেদককে একাধিক বার বলেছেন, এই মুহূর্তে তিনি আর কিছুই চান না। চান বিকাশ এবং উন্নয়ন। কিন্তু তা বললে কী হবে? তাঁর ভাবমূর্তি এখনও গোধরার ভূতের হাতে বন্দি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আডবাণীর ভাবমূর্তিতে সেই কালিমা নেই বটে। কিন্তু নেতৃত্বের রথের রশিও তাঁর হাতে নেই। বাজপেয়ী-আডবাণীর পর এখন এসেছে মোদী-অমিত শাহ গুরু-শিষ্যের যুগ। ভারতের রাজনীতিতে এই ভাবমূর্তির বিষয়টি যে কত সংবেদনশীল, সেটা বোঝা যায়, যখন দেখা যায় যে মোদী কিছুতেই মুসলমান সমাজের কাছ থেকে টুপি পরতে রাজি হন না। তখন মনে হয় হিন্দুত্ব নামক ভোটব্যাঙ্কের সমস্যা বিজেপিকেও তাড়া করে ফিরছে। কমিউনিস্টরা যেমন মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের কালো হাত ভেঙে গুঁড়িয়ে দিতে চায়, কমিউনিস্টদের আশঙ্কা থাকে মার্কিন সমালোচনা না করলে আর নভেম্বর বিপ্লব দীঘর্র্জীবী হোক না বললে তাদের ভোটব্যাঙ্ক কমে যাবে। কমিউনিস্ট পার্টিতেও এমন নেতার বড় অভাব যেখানে নতুন পথে চালিত করার জন্য মার্কিনি সমালোচনা পরিত্যাগ করে নতুন বাম পথ তৈরি করা হবে।

Advertisement

বাজপেয়ী ছিলেন বিজেপির উদার মুখ। তখন আডবাণী ছিলেন কট্টর। এ জি নুরানি লিখেছিলেন যে দু’টো মুখ নিয়েই বিজেপি। একটা উদার বাজপেয়ী। অন্যটা বাবরি মসজিদ ভাঙার সঙ্গে যুক্ত আডবাণী ও উমা ভারতী। পরে বাজপেয়ী হতে চেয়েছিলেন আডবাণী। তখন আমি লিখেছিলাম, সেটা হল আডবাণীর বাজপেয়ীকরণের প্রক্রিয়া। কিন্তু এখন নরেন্দ্র মোদীর বাজপেয়ীকরণ কি সম্ভব?


নরেন্দ্র মোদী ও অমিত শাহ।

বয়স যত বাড়ছে, একটা বোধ ক্রমশ তীব্র হচ্ছে যে সম্রাট আকবর থেকে অশোক একটাই ঐতিহ্য বহন করে নিয়ে চলেছে ভারত। সেটা হল বহুত্ববাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতি। দীন-ই-ইলাহি ধর্মের পথ। তর্কপ্রিয় ভারতীয় গ্রন্থে অমর্ত্য সেন যাকে ভারতীয় উপনিষদের আলোয় বিশ্লেষণ করেছেন। যদি সেই ভারতকে প্রতিষ্ঠিত করতে নরেন্দ্র মোদী সফল হন একমাত্র তখনই বোধহয় তিনি সুপ্রতিষ্ঠিত হবেন ক্ষমতার সিংহাসনে। তার বদলে যদি মেরুকরণের রাজনীতির নামে, নির্বাচনী ফায়দার লোভে বিজেপি সাম্প্রদায়িকতার তাস সুকৌশলে খেলতে উদ্যত হয়, তা হলে আবার তারা নিক্ষিপ্ত হবে ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে।

—ফাইল চিত্র।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন