সম্পাদকীয় ২

সন্ত্রাসের পর

পাকিস্তান ইতিপূর্বেও বহু বার সন্ত্রাসবাদী হামলার শিকার হইয়াছে। কিন্তু পেশোয়ারের স্কুলে ১৩২ জন শিশুর নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পর পাক সরকার ও সেনাবাহিনী উভয়কেই অন্তত আপাতত নড়িয়া বসিতে দেখা যাইতেছে। মৃত্যুদণ্ডের উপর স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করা, দণ্ডপ্রাপ্ত তালিবান বন্দিকে পত্রপাঠ ফাঁসিতে ঝুলাইবার সঙ্কল্প কার্যকর করা এবং ওয়াজিরিস্তান সহ উত্তর-পশ্চিম সীমান্তে জঙ্গি ঘাঁটিগুলির উপর বোমাবর্ষণ ও ড্রোন-হামলা বাড়াইবার মধ্যে সরকারের সেই তৎপরতার লক্ষণ স্পষ্ট।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২২ ডিসেম্বর ২০১৪ ০০:০১
Share:

পাকিস্তান ইতিপূর্বেও বহু বার সন্ত্রাসবাদী হামলার শিকার হইয়াছে। কিন্তু পেশোয়ারের স্কুলে ১৩২ জন শিশুর নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পর পাক সরকার ও সেনাবাহিনী উভয়কেই অন্তত আপাতত নড়িয়া বসিতে দেখা যাইতেছে। মৃত্যুদণ্ডের উপর স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করা, দণ্ডপ্রাপ্ত তালিবান বন্দিকে পত্রপাঠ ফাঁসিতে ঝুলাইবার সঙ্কল্প কার্যকর করা এবং ওয়াজিরিস্তান সহ উত্তর-পশ্চিম সীমান্তে জঙ্গি ঘাঁটিগুলির উপর বোমাবর্ষণ ও ড্রোন-হামলা বাড়াইবার মধ্যে সরকারের সেই তৎপরতার লক্ষণ স্পষ্ট। প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ পাক ভূখণ্ডকে জেহাদি জঙ্গি ক্রিয়াকলাপের জন্য ব্যবহৃত হইতে না-দিবার এবং প্রতিটি সন্ত্রাসবাদীকে নির্মূল করার যে-শপথ ঘোষণা করিয়াছেন, তাহাও সুলক্ষণ। অতীতে কখনও পাক কর্তৃপক্ষকে সন্ত্রাসবাদীদের প্রশ্নে এত অনমনীয় উচ্চারণ করিতে শোনা যায় নাই।

Advertisement

একই সঙ্গে মুম্বই হামলার মূল চক্রী বলিয়া অভিযুক্ত জাকিউর রহমান লাখভিকে রাওয়ালপিণ্ডির জেল হইতে জামিনে মুক্তি দেওয়ার ঘটনা কিন্তু কর্তৃপক্ষের ওই অবস্থানের সহিত সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। সত্য যে, ভারতের তীব্র প্রতিবাদ এবং আন্তর্জাতিক জনমতের প্রভাবে লাখভি শেষ পর্যন্ত মুক্তি পায় নাই, আরও তিন মাস তাহার হাজতবাস ধার্য হইয়াছে। কিন্তু লাখভি কিংবা লস্কর-ই-তইবার (অধুনা জামাত-উদ-দাওয়া) প্রধান হাফিজ সইদের মতো সন্ত্রাসবাদীকে বিচারের জন্য ভারতের হাতে তুলিয়া দিবার প্রশ্নে ইসলামাবাদ এখনও নীরব। মুম্বই হামলার মতাদর্শগত গুরু হাফিজ কিন্তু পেশোয়ারের তালিবানি নৃশংসতাকেও ‘ভারতের অপকর্ম’ বলিয়া উন্মাদের প্রলাপ বকিতেছেন। লাখভির কারাবাসের সংবাদেও নয়াদিল্লির নিশ্চিন্ত বোধ করার কিছু নাই। লাখভি অন্য ধৃত জেহাদিদের মতোই জেলখানায় বেশ আরামেই থাকিতে অভ্যস্ত। সেখানে আইএসআই-এর প্রধান সুজা পাশা তাহার দর্শনে যান, তাহার মোবাইল ফোন বাজেয়াপ্ত করিতে অস্বীকার করেন তদানীন্তন পাক সেনানায়ক জেনারেল কায়ানি। জেল হাজত বাহিরে জঙ্গি হামলা সংগঠিত করিতে তাহার নিকট কোনও বাধা নয়।

এই সব কারণেই সংশয় স্বাভাবিক যে, ইসলামাবাদ হইতে মুখে যাহাই বলা হউক, পাকিস্তানি শাসনযন্ত্র, তাহার রাজনৈতিক কর্তৃপক্ষ, বিচারবিভাগ, সেনাবাহিনী ও নিরাপত্তা সংস্থাগুলি সন্ত্রাসবাদীদের বিরুদ্ধে কোনও কঠোর দমননীতি গ্রহণে অপারগ। এই ধারাবাহিক অপারগতাই জেহাদিদের নির্ভয় করিয়াছে, তাহাদের যত্রতত্র ঘাঁটি গাড়িতে, সেনা-দফতর ও পুলিশ প্রশিক্ষণ কেন্দ্র সহ বিমানঘাঁটি ও নৌবন্দরে জঙ্গি হামলা চালাইতে সাহসী করিয়াছে। তাহাদের পাকিস্তানের গোটা শাসনব্যবস্থাকেই প্রভাবিত করিতে দেওয়া হইয়াছে। এখন নাকি বিচারপতিরা তাহাদের বিরুদ্ধে রায় দিতে ভয় পান। পুলিশ তাহাদের গ্রেফতার করিতে ভয় পায়। রাজনীতিকরা তাহাদের সহিত দরকষাকষি করেন। আর সাধারণ মানুষ সদাসন্ত্রস্ত। এখন নওয়াজ শরিফ বলিতেছেন, ভাল তালিবান, মন্দ তালিবান বিভাজন ভুল, কারণ তালিবান মাত্রেই সন্ত্রাসবাদী। তিনি কি বলিতে পারিবেন, ভাল সন্ত্রাসবাদী (অর্থাৎ যাহারা কাশ্মীরে অনুপ্রবেশ করিয়া লোক মারিতেছে) ও মন্দ সন্ত্রাসবাদীর (যাহারা পাকিস্তানিদের মারিতেছে) বিভাজনও ভ্রান্ত? সে কথা বলিবার সাহস কি তাঁহার আছে?

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement