সম্পাদক সমীপেষু

কেউ মুসলমানদের প্রতি সুবিচার করেনি

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৬ জুন ২০১৪ ০০:১৩
Share:

কেউ মুসলমানদের প্রতি সুবিচার করেনি

Advertisement

অভিরূপ সরকারের রচনাটি (‘আমাদের মুসলিম, ওঁদের মুসলিম’, ১৩-৫) গুজরাত রাজ্যের প্রেক্ষাপটে মুসলমান সমাজের আর্থ-সামাজিক অবস্থানের আলোচনা হলে, সমগ্র দেশে মুসলমানদের উন্নয়ন ও জীবন-জীবিকার প্রসঙ্গ অবহিত হওয়া বিশেষ প্রয়োজন।

ভারতের মুসলমান সমাজের সামাজিক অবস্থান এবং জীবন ও জীবিকার প্রসঙ্গটি আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে বিশ্লেষণ জরুরি। ১৮৮৮ সালে ডব্লিউ ডব্লিউ হান্টার লিখেছিলেন, ‘অতীতে একজন উচ্চকুলের মুসলমানের গরিব হওয়া ছিল অসম্ভব। এখন ধনী থাকা প্রায় অসম্ভব’। সাচার কমিটির রিপোর্টে (২০০৫) ১১৭ বছর পরেও সেই তথ্যের পুনরাবৃত্তি ঘটেছে। বরং সামগ্রিক ভাবে দেশের মুসলমান সমাজ সারা দেশে তো বটেই, পশ্চিমবঙ্গেও আরও দরিদ্র হয়েছে।

Advertisement

স্বীকার করা ভাল যে, বামফ্রন্ট সরকারের দীর্ঘ শাসনেও সংখ্যালঘুদের জীবন ও জীবিকার মৌলিক সমস্যাগুলি ঠিক ভাবে বিচার-বিশ্লেষণ করা হয়নি। বর্তমান রাজ্য সরকারের আমলেও ভোটের প্রয়োজনে মুসলিমদের ব্যবহার করা হচ্ছে দাবার বোড়ের মতো। হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির কারণেই বি জে পি-র কাছে মুসলমান সমাজ ন্যায়বিচারের প্রত্যাশা করে না। সাচার কমিটির রিপোর্টকে বি জে পি বিশেষ কোনও গুরুত্ব দেয়নি।

দেশের বড় বড় রাজনৈতিক দলগুলি প্রকাশ্যে দু’ভাবে সংখ্যালঘুদের নিয়ে রাজনীতি করে থাকে। নির্বাচনে জয়লাভের জন্য মুসলমান ভোট যেখানে সংখ্যায় বেশি, সেখানেই মুসলমান প্রার্থী দেওয়া হয়। সাধারণ ভাবে হিন্দুপ্রধান এলাকায় মুসলমান প্রার্থী দেওয়া হয় না। অসাম্প্রদায়িক ও ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতির পক্ষে রাজনৈতিক দলগুলিও সাধারণ ভাবে মুসলমান প্রার্থী দেওয়ার ক্ষেত্রে অনীহা প্রকাশ করে থাকে। সেই কারণেই পঞ্চদশ লোকসভায় মুসলমান সাংসদ সংখ্যা মাত্র ৩০ (৬ শতাংশ)। ২০০৯ লোকসভা নির্বাচনে ২০টি রাজ্য থেকে এক জন মুসলমানও সংসদে নির্বাচিত হননি। ভারতীয় সংসদে মুসলমানদের সংখ্যা তাঁদের মোট জনসংখ্যার সঙ্গে সমানুপাতিক নয়। জনসংখ্যা ১৩.৪ শতাংশ হলেও লোকসভায় ১৯৮০ সালে এক বারই মুসলমান সদস্য ছিলেন ৪৯ জন (প্রায় ১০ শতাংশ)। এটাই এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ মুসলমান সাংসদ সংখ্যা।

সংখ্যালঘুদের নিয়ে রাজনীতির দ্বিতীয় কৌশলটি হচ্ছে নানা উপলক্ষে দেশের মধ্যে কোথাও না কোথাও দাঙ্গাহাঙ্গামা বাধিয়ে হতদরিদ্র মুসলমানদের মধ্যে নিরাপত্তার অভাব সৃষ্টি করে রাজনৈতিক ফয়দা তোলা।

ভারতের মুসলমান সমাজ স্বাধীনতার পর থেকেই ধারাবাহিক ভাবে কংগ্রেসকে সমথর্র্ন করে এসেছে। দেশভাগের কারণে উদ্ভূত দাঙ্গাহাঙ্গামার পরিস্থিতিতে এক জন মুসলমান মনে করতেন, তাঁর ব্যক্তিজীবন ও পারিবারিক জীবনের নিরাপত্তাই প্রধান। তাঁরা মনে করতেন, কংগ্রেসকে ভোট দিলে নিরাপত্তা থাকবে। একই মানসিকতা থেকে পশ্চিমবঙ্গে তাঁরা বামফ্রন্টকে সমর্থন করতেন। কিন্তু মুসলমান সমাজের প্রাপ্য আর্থ-সামাজিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় প্রয়োজনীয় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা কংগ্রেস-সহ কোনও রাজনৈতিক দলই পালন করেনি। তার আরও একটি কারণ হতে পারে যে, রাজনৈতিক দলগুলিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতাটি মুখ্যত হিন্দু নেতৃত্বের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। এমনকী প্রধান দলগুলির নেতৃত্বেও মুসলমানদের অনুপস্থিতি নজরে পড়ার মতো।

ভারতে ৫৯৩টি জেলার মধ্যে (২০০৯) মোটামুটি ১০০টি জেলার মুসলমান জনসংখ্যা বেশি। এই জেলাগুলি নিয়ে সাচার কমিটি যে আলোচনা করেছে, তার মধ্যে আছে পশ্চিমবঙ্গের ১৩টি জেলা। এই কমিটির রিপোর্টে বলা হয়েছে, গুজরাতে মুসলমান জনসংখ্যা সেই রাজ্যের মোট জনসংখ্যার ৫.৪ শতাংশ হলেও সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে মুসলিম কর্মচারী ৯.১ শতাংশ। তামিলনাড়ুর মুসলিম জনসংখ্যা সেই রাজ্যের মোট জনসংখ্যার ৩.২ শতাংশ, সরকারি কর্মচারীর সংখ্যা ৫.৬ শতাংশ। অসমে মুসলিম জনসংখ্যা ৩০ শতাংশ, সরকারি কর্মচারী ১১.২ শতাংশ। পশ্চিমবঙ্গে মুসলিম জনসংখ্যা ২৫ শতাংশের বেশি হলেও সরকারি ক্ষেত্রে ৪.২ শতাংশ মুসলমান। কেরল রাজ্যে বাম শাসন চলাকালীন সরকারি চাকরিতে মুসলমানদের মংখ্যা ১০.৪ শতাংশ (তথ্যসূত্র: ২০১১ ও সরকারি দফতরের তথ্যের বিশ্লেষণ)।

১৯৬০ সালে আই এ এস এবং আই পি এস কর্মক্ষেত্রে মুসলমানদের সংখ্যা ছিল ৪.৫ ও ৪.০৪ শতাংশ। ২০০৬ সালে সেই অনুপাত হ্রাস পেয়ে হয়েছে যথাক্রমে ৩ ও ৪ শতাংশ। আই এফ এস কর্মক্ষেত্রে এই অনুপাত মাত্র ১.৮ শতাংশ। দেশের অসামরিক ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি কর্মসংস্থান রেলে হয়েছে। সেখানে মুসলমান কর্মচারীর সখ্যা ৪.৫ শতাংশ। কমবেশি একই ধরনের চিত্র দেখা যাবে ব্যাঙ্ক ও ডাক-তার বিভাগে। বিশ্ববিদ্যালয়ে মুসলিম কর্মচারীর হার ৪.৭ শতাংশ। এই পরিসংখ্যান থেকেই মুসলমানদের অনুন্নয়নের চিত্রটি বোঝা যায়। ভারত সরকারের রাষ্ট্রীয় কাঠামো প্রত্যক্ষ ও অপ্রত্যক্ষ ভাবে সংখ্যাগুরু হিন্দুদের দ্বারাই নিয়ন্ত্রিত, তা অনস্বীকার্য।

অশোক ঘোষ। সাধারণ সম্পাদক, ইউনাইটেড ট্রেডস ইউনিয়ন কংগ্রেস (ইউ টি ইউ সি)

আগে ট্রেনিং দিন

আজকাল গ্রামীণ এলাকায় অধিকাংশ ট্রাফিক সিগনালে নতুন নতুন ছেলেদের ড্রেস ছাড়াই ট্রাফিক সামলাতে দেখি। এরা নাকি সিভিক পুলিশ। এরা ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ বিষয়ে শিক্ষণপ্রাপ্ত নয়। এই ব্যবস্থা বিপজ্জনক। এদের উপযুক্ত ট্রেনিং দিয়ে দায়িত্ব দিলে ভাল হয় না কি?

সুপ্রকাশ বন্দ্যোপাধ্যায়।রঘুদেবপুর, হাওড়া

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন