Kasba Rape case

কসবাকাণ্ডের পর কলেজে কলেজে বাড়ল পরিচালন সমিতির মেয়াদ, সিদ্ধান্ত নিয়ে উঠছে প্রশ্ন

উচ্চ শিক্ষা দফতরের তরফে জানানো হয়েছে, ছাত্র-ছাত্রীদের স্বার্থে এবং কলেজ প্রশাসন সুষ্ঠু ভাবে পরিচালনা করতেই মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়েছে।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৩ জুলাই ২০২৫ ১৭:৪৯
Share:

কলেজে কলেজে বৃদ্ধি হল পরিচালন সমিতির মেয়াদ। সংগৃহীত ছবি।

কলেজ ক্যাম্পাসের ভিতরে ঘটেছে গণধর্ষণের ঘটনা! খোদ কলকাতার বুকে এমন ঘটনা নাড়িয়ে দিয়েছে শিক্ষামহলকে। সাউথ ক্যালকাটা ল কলেজের ঘটনায় আঙুল উঠেছে কলেজ পরিচালন সমিতির দিকে। ঠিক সেই সময়ই সারা রাজ্যের সমস্ত কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালন সমিতিগুলির মেয়াদ বাড়ানোর নির্দেশ দেওয়া হল উচ্চ শিক্ষা দফতরের তরফে। এমন সিদ্ধান্তে প্রশ্ন উঠছে নানা মহলে। জানা গিয়েছে, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫ পর্যন্ত এই মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়েছে। সে ক্ষেত্রে যে সমস্ত কলেজে পরিচালন সমিতির মেয়াদ ৩০ জুন বা তারপরে শেষ হওয়ার কথা ছিল তাদেরও মেয়াদ বৃদ্ধি করে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্তই থাকবে।

Advertisement

গত কয়েক বছরে কলেজ পরিচালন সমিতি নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে শিক্ষামহলে। অনেক ক্ষেত্রেই অভিযোগ উঠেছে, উচ্চ শিক্ষা দফতরের অধীনস্থ সব ক’টি কলেজের পরিচালন সমিতিতে শাসকদলের বিধায়ক অথবা নেতাদের উপস্থিতি বহাল রেখে কর্তৃত্ব কায়েম করতে চায় সরকার। যেমন কসবার ওই আইন কলেজের পরিচালন সমিতির সভাপতি হলেন অশোক দেব, বজবজ বিধানসভার তৃণমূল বিধায়ক। শোনা যায়, কসবাকাণ্ডে মূল অভিযুক্ত ‘ম্যাঙ্গো’ তাঁকে ‘জেঠু’ বলে ডাকতেন। কসবাকাণ্ডে পরিচালন সমিতির কার্যকলাপ নিয়ে ইতিমধ্যেই প্রশ্ন উঠছে একাধিক বার। তাই এই ঘটনার আবহে পরিচালন সমিতির মেয়াদ বৃদ্ধির ঘোষণা নিয়ে নানা মহলে শুরু হয়েছে আলোচনা।

২০১৭ সালে শিক্ষা বিল অনুযায়ী, কলেজ পরিচালন সমিতির নির্বাচন হয় না। এখানে সরকারের তরফে চার জন সদস্য থাকেন— এক জন সভাপতি, দু’জন নমিনি এবং এক জন উচ্চ শিক্ষা দফতরের প্রতিনিধি। সরাসরি এঁদের নিয়োগ করে সরকার। এ ছাড়া থাকেন তিন জন কলেজ শিক্ষক এবং এক জন নির্বাচিত ছাত্র প্রতিনিধি। ২০১৯-এর পর থেকে কোনও কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়েই পরিচালন সমিতিতে ছাত্র প্রতিনিধি নেই। নিখিলবঙ্গ অধ্যক্ষ পরিষদের প্রাক্তন সভাপতি পূর্ণচন্দ্র মাইতি দাবি রাজ্য বিধানসভা নির্বাচনের দিকে নজর রেখেই কলেজ পরিচালন সমিতিগুলির মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়েছে। তাঁর কথায় ‘‘পরিচালন সমিতিগুলির দুর্নীতির কথা বার বার প্রকাশ্যে এসেছে। কিন্তু আগামী বছর বিধানসভা নির্বাচন। সে কথা মাথায় রেখেই এই মেয়াদ বৃদ্ধি করা হল। যতই দুর্নীতি পরায়ণ কেউ হোক না কেন, নির্বাচনের আগে কাউকে চটাতে চাইছে না সরকার।’’ যদিও উচ্চ শিক্ষা দফতরের তরফে জানানো হয়েছে, ছাত্র-ছাত্রীদের স্বার্থে এবং কলেজের প্রশাসনের সুষ্ঠু পরিচালনার লক্ষ্যেই এই মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়েছে।

Advertisement

উল্লেখ্য, ২৫ জুন কসবার সাউথ ক্যালকাটা ল কলেজের ক্যাম্পাসের ভিতর রক্ষীর ঘরে ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। এই ঘটনায় গ্রেফতার করা হয়েছে ওই কলেজেরই দুই ছাত্র এবং এক প্রাক্তনীকে। ওই প্রাক্তনী কলেজের অস্থায়ী কর্মী হিসাবেও নিযুক্ত। অভিযুক্তেরা প্রত্যেকেই তৃণমূলের ছাত্র পরিষদের সঙ্গে যুক্ত। অভিযোগ, ছাত্রীকে বিয়ের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। তা খারিজ করার পরেই তাঁকে ধর্ষণ করা হয়। বয়ানে অসঙ্গতি থাকায় কলেজের নিরাপত্তারক্ষীকেও গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

কসবা গণধর্ষণ কাণ্ডে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করেছে কলেজের পরিচালন সমিতি। অভিযুক্ত দুই ছাত্রকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তাঁরা যাতে অন্য কোনও কলেজে ভর্তি হতে না পারেন, সে সিদ্ধান্তও নেওয়া হবে বলে জানা গিয়েছে পরিচালন সমিতির তরফে। কলেজের অস্থায়ী শিক্ষাকর্মীর চাকরি থেকে ছেঁটে ফেলা হয়েছে মূল অভিযুক্ত ‘এম’কে।

(ধর্ষণ বা শ্লীলতাহানির ঘটনায় যত ক্ষণ না অভিযুক্তকে আদালতে দোষী সাব্যস্ত করা হচ্ছে, তত ক্ষণ তাঁর নাম-পরিচয় প্রকাশে আইনি বাধা থাকে। সেই কারণে আনন্দবাজার ডট কম কসবার ধর্ষণকাণ্ডে তিন অভিযুক্তের নাম এবং ছবি প্রকাশে বিরত থাকছে)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement