Manuscript Digitization

প্রাচীন ও দুষ্প্রাপ্য পাণ্ডুলিপির পাঠোদ্ধার করে দেবে কৃত্রিম মেধা! এশিয়াটিক সোসাইটিতে চলছে কাজ

এখনও পর্যন্ত ১১,৫১৫টি পাণ্ডুলিপি ডিজ়িটাল পদ্ধতিতে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করেছে এশিয়াটিক সোসাইটি। এই সমস্ত নথি ডিজিটাল আর্কাইভ থেকে যাতে পড়ার সুযোগ পাওয়া যায়, তা নিয়েও কাজ চলছে।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ৩০ অগস্ট ২০২৫ ১৭:৫০
Share:

পাণ্ডুলিপির পাঠোদ্ধার এবং সংরক্ষণের কাজে কৃত্রিম মেধার ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করেন বিশেষজ্ঞরা। নিজস্ব চিত্র।

পাণ্ডুলিপির পাঠোদ্ধার এ বার করে দেবে কৃত্রিম মেধা। প্রাচীন কোনও লিপি থেকে খুব সহজেই বোধগম্য ভাষায় তা অনুবাদও করে দেবে নির্দিষ্ট সফ্‌টঅয়্যার। কলকাতার এশিয়াটিক সোসাইটিতে চলছে সেই কাজ।

Advertisement

সম্প্রতি এশিয়াটিক সোসাইটিতে উঠে এল পাণ্ডুলিপি পাঠোদ্ধারের প্রতিবন্ধকতার কথা। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বৌদ্ধিক স্টাডিজ় বিষয়ের প্রাক্তন অধ্যাপক বন্দনা মুখোপাধ্যায় জানান, ইদানীং পড়ুয়াদের মধ্যে এই বিষয়ে আগ্রহ কমে গিয়েছে। ফলে প্রাচীন লিপির পাঠোদ্ধার করার মতো মানুষ খুঁজে পাওয়াই হয়ে দাঁড়িয়েছে সময়সাপেক্ষ। বিশ্বভারতী থেকে সংস্কৃত কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়, কলকাতা বা বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়, রবীন্দ্রভারতীর মতো প্রাচীন প্রতিষ্ঠানগুলির প্রতিনিধিরা সাফ জানিয়েছেন, অনুদান এবং লোকবলের অভাব রয়েছে। তার ফলেই নথি সংরক্ষণ করাও সমস্যা হয়ে দাঁড়াচ্ছে।

সেই জায়গায় ত্রাতা হিসাবে উপস্থিত হয়েছে কৃত্রিম মেধা। জানা গিয়েছে, এশিয়াটিক সোসাইটির সংগ্রহে থাকা বিপুল নথির পাঠোদ্ধার করার কাজ এখন করছে ‘বিধ্বনিকা’। এটি একটি বিশেষ পোর্টাল যা, নথির ছবি পেলেই পাঠোদ্ধার করে দিচ্ছে।

Advertisement

এশিয়াটিক সোসাইটির তরফে কৃত্রিম মেধাকে ব্যবহার করে সম্প্রতি বেশ কিছু নথি পাঠোদ্ধারের কাজ শুরু হয়েছে। ছবি: সংগৃহীত।

এই কাজে প্রযুক্তিগত সহায়তা করেছে সেন্টার ফর ডেভেলপমেন্ট অফ অ্যাডভান্সড কম্পিউটিং (সিড্যাক)। এই কেন্দ্রীয় সংস্থার কলকাতা শাখার বিজ্ঞানীরাও উপস্থিত ছিলেন সে দিনের আলোচনাসভায়। তাঁরাই জানিয়েছেন, ‘বিধ্বনিকা’য় পাণ্ডুলিপির ছবি আপলোড করা হলে, নির্দিষ্ট সফ্‌টঅয়্যার প্রথমে তার ট্রান্সস্ক্রিপশন করে। অর্থাৎ লিপিতে নথিটি লেখা হয়েছে, তার প্রতিলিপি তৈরি করে রোমান হরফে। দ্বিতীয় পর্যায়ে ট্রান্সলেট অর্থাৎ, প্রতিটি শব্দের আক্ষরিক অনুবাদ করবে, কাঙ্ক্ষিত ভাষায়। সব শেষ ট্রান্সলিটারেট, অর্থাৎ, ভাষান্তরও করে দেবে কৃত্রিম মেধা। বিজ্ঞানীদের দাবি, এই পদ্ধতিতে পাঁচ মিনিটের মধ্যে পাণ্ডুলিপি বা নথির পাঠোদ্ধার করা সম্ভব।

তবে, কৃত্রিম মেধার উপর পুরোপুরি নির্ভর করতে চাইছেন না কর্তৃপক্ষ। সিড্যাক-এর বিজ্ঞানী নীলাদ্রিশেখর সাহা এবং কৌশিক মাইতি জানিয়েছেন, কৃত্রিম মেধার ব্যবহার করে পাণ্ডুলিপির পাঠোদ্ধার পদ্ধতির সময় কমিয়ে আনা হয়েছে। অনুবাদের পর যে তথ্য পাওয়া যাচ্ছে, তা যাচাই করে নিচ্ছেন আইআইটি দিল্লি এবং আইআইটি খড়্গপুরের বিশেষজ্ঞ অধ্যাপকেরা।

বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগ্রহে থাকা নথি এবং পাণ্ডুলিপি সংরক্ষণের কাজে এশিয়াটিক সোস্যাইটি সাহায্য করবে, এমনটাই জানিয়েছে সংস্থার প্রশাসক লেফটেন্যান্ট কর্নেল অনন্ত সিংহ। তিনি বলেন, “পাণ্ডুলিপি সংরক্ষণের দীর্ঘমেয়াদী ফল আগামী প্রজন্মকে অনেক বেশি সমৃদ্ধ করবে। তাই কৃত্রিম মেধা ব্যবহার করে তার পাঠোদ্ধারের কাজ শুরু হয়েছে। তবে, এ জন্য বিশেষজ্ঞদের পাশাপাশি, যাঁরা এই ধরনের নথি নিয়ে কাজ করছেন, তাঁদের যোগদানও ভীষণ ভাবে প্রয়োজন।”

জানা গিয়েছে, বৈদ্যুতিন মাধ্যমে এই সমস্ত দুষ্প্রাপ্য নথি যাতে সহজে সংরক্ষণ করা যায়, সে জন্য নতুন করে ডিজিটাল আর্কাইভও সাজাচ্ছে এশিয়াটিক সোস্যাইটি। এ ক্ষেত্রে হাতে লেখা নথি স্ক্যান করার জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে অপটিক্যাল ক্যারেক্টার রেকগনিশন (ওসিআর) এবং হ্যান্ডরিটেন টেক্সট রেকগনিশন (এইচটিআর) পদ্ধতি।

উপস্থিত ছিলেন ইন্দিরা গান্ধী ন্যাশনাল সেন্টার ফর দ্য আর্টস-এর কলানিধি বিভাগের অধিকর্তা রমেশচন্দ্র গৌড়। নিজস্ব চিত্র।

এখনও পর্যন্ত ১১,৫১৫টি পাণ্ডুলিপি ডিজ়িটাল পদ্ধতিতে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করেছে এশিয়াটিক সোসাইটি। এই সমস্ত নথি ডিজিটাল আর্কাইভ থেকে যাতে পড়ার সুযোগ পাওয়া যায়, তা নিয়েও কাজ চলছে।

তবে সবই যে সহজ, সাবলীল এবং ত্রুটিমুক্ত, তা নয়। কৃত্রিম মেধা ব্যবহার এবং তার সীমাবদ্ধতা নিয়েও মুখ খুলেছেন আইআইটি দিল্লি এবং আইআইটি খড়্গপুরের বিশেষজ্ঞেরা। তাঁদের দাবি, প্রযুক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রে সব সময়ে মাথায় রাখতে হবে, কোনও অনুবাদই ১০০ শতাংশ নির্ভুল হতে পারে না। সে ক্ষেত্রে ভাষা-বিশেষজ্ঞদের সাহায্য নিতেই হবে। পাণ্ডুলিপি পাঠোদ্ধারের যে পুরনো পদ্ধতি তা একেবারে ভুলে গেলে চলবে না।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement