Sanskrit University Assembly Election 2025

বিধানসভা ভোটের আগে শাসকের নজর টোল-চতুষ্পাঠীতে! ১৮ বছর পর পরীক্ষা নেবে সংস্কৃত বিশ্ববিদ্যালয়

বিধানসভা ভোটের আগে শাসকের নজর টোল-চতুষ্পাঠীতে! ১৮ বছর পর পরীক্ষা নেবে সংস্কৃত বিশ্ববিদ্যালয়।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৮ নভেম্বর ২০২৫ ০৯:৪০
Share:

প্রতীকী চিত্র।

একসময় টোল, চতুষ্পাঠীতেই চলত শাস্ত্র অধ্যয়ন। ন্যায়, স্মৃতিশাস্ত্রের পাশাপাশি দেওয়া হত ব্যাকরণ, পুরাণের পাঠও। ব্রাহ্মণেরা তো বটেই, এ সব পাঠশালায় যোগ দিতে পারতেন অব্রাহ্মণ সন্তানেরাও। নারীর অধিকার ছিল পাঠ গ্রহণের। তবে সেই শিক্ষা যে ব্রাহ্মণ্য ধর্মকেন্দ্রিক ছিল, তা বলাই যায়। ফলে ইংরেজি শিক্ষার বিকাশের সঙ্গে সঙ্গেই তা গুরুত্ব হারাতে শুরু করে।

Advertisement

আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থার সমান্তরালে বাংলার নানা প্রান্তে এখনও রয়ে গিয়েছে একাধিক টোল। ছাত্র কমেছে। তবু টিমটিম করে জ্বলছে প্রদীপ। এ বার তাদের স্বীকৃতি দিতে চাইছে রাজ্য সরকার।

টোলের পড়ুয়াদের পরীক্ষা নেবে সংস্কৃত বিশ্ববিদ্যালয়। তার পর তাদের দেওয়া হবে শংসাপত্র।

Advertisement

প্রশ্ন উঠছে, আসন্ন বিধানসভা ভোটের আগে সনাতন শিক্ষাব্যবস্থায় নজর দিচ্ছে শাসক?

সংস্কৃত বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাসিস্ট্যান্ট রেজিস্ট্রার মণিশঙ্কর মণ্ডল অবশ্য জানিয়েছেন, সংস্কৃত কলেজটি বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নীত হওয়ার পরই রাজ্যের টোল-চতুষ্পাঠীগুলির দিকে নজর দেওয়ার কথা জানিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। গত মার্চ মাসে সংস্কৃত শিক্ষা পরিষদকে সংস্কৃত বিশ্ববিদ্যালয় অধীনে নিয়ে আসা হয়। তার পরই উদ্যোগী হয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

মণিশঙ্কর বলেন, “বাম আমলে বন্ধ হয়ে যাওয়া চতুষ্পাঠী-টোলগুলিকে পুনরুজ্জীবিত করার নির্দেশ দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই নির্দেশ অনুযায়ী আমরা টোলগুলির আধুনিকীকরণ ও পরীক্ষা ব্যবস্থা চালু করতে চলেছি।”

জানা গিয়েছে, ২০০৭ সাল পর্যন্ত এ রাজ্যের টোলগুলি বেশ সক্রিয় ছিল। কিন্তু ধীরে ধীরে তারা গুরুত্ব হারিয়েছে। ২০০৭ সালেই টোলগুলিতে শেষ বার পরীক্ষাগ্রহণ করা হয়েছিল। তার পর থেকে আর্থিক অনুদানের ঘাটতি, পরিকাঠামোর অভাব প্রভৃতি কারণে স্বীকৃতি হারায় টোলগুলি।

তবে, এখনও রাজ্যে মোট ৩২৮টি টোল সক্রিয় রয়েছে। তার মধ্যে ৪টি সরকারি টোল রয়েছে কোচবিহার, কাঁথি, নবদ্বীপ ও বর্ধমানে। দু’টি সরকার পোষিত টোল। বাকি ৩২২টি টোল-এ সরকার ভাতা দেয় (ডিএ গেটিং)। এই সমস্ত টোলের শিক্ষার্থীরা গত প্রায় ১৮ বছর ধরে কোনও পরীক্ষা দেননি। এ বার সংস্কৃত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে তাঁদের সকলের পরীক্ষা নেওয়া হবে বলে জানা গিয়েছে।

সংস্কৃত শিক্ষা পরিষদ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে আসার পরই কর্তৃপক্ষ উদ্যোগী হয়ে একটি সমীক্ষা করে রাজ্যের টোলগুলির পরিস্থিতি জানার জন্য। সেখানেই দেখা গিয়েছে, গত ১৮ বছরে প্রায় ৪৫০০ শিক্ষার্থী আদ্য, মধ্য ও উপাধিতে (মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক ও স্নাতক সমতুল) পড়াশোনা করেছেন, কিন্তু পরীক্ষা দেননি। স্বীকৃত ডিগ্রিও পাননি। এঁরা মূলত প্রাচীন শিক্ষা পদ্ধতিতে পড়াশোনা করেন। তাঁদের জন্যই পরীক্ষারব্যবস্থা করতে চলেছে সংস্কৃত বিশ্ববিদ্যালয়।

জানা গিয়েছে, আগামী ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারির মধ্যে এই পরীক্ষা নেওয়া হবে। সংস্কৃত বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে এই পরীক্ষা সম্পূর্ণ হলেই আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থার সঙ্গে সকল শিক্ষার্থীকে যুক্ত করা হবে।

ঠিক কেমন হবে আগামী দিনের টোল চতুষ্পাঠীগুলি? কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, যুগোপযোগী করে তোলা হবে পাঠ্যক্রম। তবে, সে পদ্ধতি নির্ভর করছে শিক্ষার্থীদের সংখ্যা এব‌ং আগ্রহের উপর। অর্থাৎ, আসন্ন পরীক্ষায় বসার জন্য কত জন আবেদন করছেন, তার উপর ভিত্তি করেই সিদ্ধান্ত নেবে সরকার।

যদিও বিধানসভা নির্বাচনের আগে সংস্কৃত টোলের দিকে নজর দেওয়ার মধ্যে ধর্মীয় রাজনীতির সমীকরণ খুঁজছেন বাম মনোভাবাপন্ন শিক্ষকদের অনেকেই। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃত বিভাগের সহকারী অধ্যাপক দেবাশিস মণ্ডল বলেন, ‘‘যে উদ্যোগ সরকার বা বিশ্ববিদ্যালয় তরফ থেকে নেওয়া হয়েছে, তা প্রাচীন শিক্ষাকে বাঁচিয়ে রাখার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু যে পণ্ডিতদের শিক্ষার আঙিনায় নিয়ে আসা হচ্ছে, তাঁদের সামনে রেখে ভোট রাজনীতি করা হলে তা হাস্যকর হয়ে উঠবে।"

তৃণমূলের অন্দরের সূত্রেও ক্ষোভ তৈরি হচ্ছিল, সরকারি সহায়তা নিয়ে। জানা গিয়েছে, গত কয়েক বছর ধরেই সংস্কৃতজ্ঞ পণ্ডিতদের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হচ্ছিল, সরকারি সহায়তা নিয়ে। সেই ক্ষতে প্রলেপ দিতেই সক্রিয় সংস্কৃত বিশ্ববিদ্যালয়।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement