গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।
আকাশে উড়তে পারে, ক্যামেরার লেন্স বসানো যায়, প্রয়োজনে সম্ভব শব্দগ্রহণও। বিবাহ অনুষ্ঠানে কিংবা পাহাড়ে ঘুরতে গিয়ে ড্রোনের ব্যবহার দেখেছেন অনেকেই। রিমোট কন্ট্রোলিংয়ের সাহায্যে দূরদূরান্ত পর্যন্ত ছবি বা ভিডিও তোলার কাজ করে ওই যন্ত্র। সম্প্রতি পৃথিবীর উচ্চতম শৃঙ্গের পাদদেশ থেকে সামিট পর্যন্ত পৌঁছে গিয়েছিল এক চিনা ফোটোগ্রাফারের শক্তিশালী ড্রোন-ক্যামেরা। আবার খাবার বা নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী পৌঁছে দেওয়ার কাজেও ব্যবহার হচ্ছে ড্রোন।
তবে এর বাইরে ড্রোনের কিছু গুরত্বপূর্ণ ব্যবহার রয়েছে। প্রতিরক্ষা এবং কৃষি বিভাগে এই যন্ত্রের ভূমিকা কিছুটা আলাদা। আবহাওয়ার তথ্য সংগ্রহ, সীমান্তে অতন্দ্র প্রহরার জন্য ওই যন্ত্র ব্যবহার করা হয়ে থাকে। তাই এই যন্ত্র ব্যবহারের কৌশল এবং প্রযুক্তি সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করতে পারলে সরকারি চাকরি পাওয়ার সুযোগ থাকছে।
কী ভাবে পড়াশোনা করা যায়—
দশম শ্রেণির পর আইটিআই কোর্সের অধীনে ড্রোন টেকনোলজি নিয়ে পড়াশোনার সুযোগ রয়েছে। তারই সঙ্গে বেসিক ড্রোন অপারেশন-এর সার্টিফিকেট কোর্স এবং জুনিয়র টেকনিশিয়ান হিসাবে প্রশিক্ষণ নিতে হবে। কিন্তু এতে খুব ভাল চাকরি শুরুতেই পাওয়া মুশকিল।
যাঁরা উচ্চ মাধ্যমিক কিংবা সমতুল পরীক্ষার পর শুরু করতে চাইছেন, তাঁদের দ্বাদশে গণিত, পদার্থবিদ্যা, রসায়ন— এই তিনটি বিষয় থাকা চাই। এ ছাড়াও জয়েন্ট এন্ট্রানস্ এগ্জ়ামিনেশন মেনস (জেইই মেনস) কিংবা রাজ্য স্তরের প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে। তবেই স্নাতক স্তরে ড্রোন টেকনোলজি বা ড্রোন ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে ভর্তি হওয়া সম্ভব। এ ক্ষেত্রে বলে রাখা প্রয়োজন, ড্রোন টেকনোলজি বিষয়টি ব্যাচেলর অফ সায়েন্স (বিএসসি) ডিগ্রি কোর্সে পড়ানো হয়।
অন্যান্য কোর্স—
ইঞ্জিনিয়ারিং এবং বিজ্ঞান শাখার আরও কিছু বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করলেও ড্রোন-এর প্রযুক্তি নিয়ে শেখা সম্ভব। এর মধ্যে রয়েছে এরোস্পেস ইঞ্জিনিয়ারিং, এরোনটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, রোবোটিক্স অ্যান্ড অটোমেশন, মেকাট্রনিক্স, ইলেকট্রনিক্স অ্যান্ড কমিউনিকেশন, এভিওনিক্স-এর মতো বিষয়।
কী শেখানো হয়—
ড্রোন ইঞ্জিনিয়ারিং-এ মূলত ড্রোন তৈরির পর তাতে প্রযুক্তির সংযোজন, পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং প্রোগ্রামিং-এর বিষয়গুলি শেখানো হয়ে থাকে। তাতে কী ধরণের সেন্সর বসানো হবে, কী ভাবে যন্ত্রমেধা, রোবোটিক্স-এর মতো প্রযুক্তিকে ব্যবহার করা হবে— এই সমস্ত কিছু জানার সুযোগ থাকে। মূলত প্রতিরক্ষা, প্রযুক্তি বিভাগের রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট-এর কাজের জন্য এমন ব্যক্তিদের কাজের সুযোগ দেওয়া হয়ে থাকে।
অন্য দিকে ড্রোন টেকনোলজি-তে যন্ত্র তৈরির নকশা, উড়ানের নিয়ম মেনে তা তৈরি করা, ছবি বা ভিডিয়ো তোলার ক্ষেত্রে কী কী সীমাবদ্ধতা রয়েছে— এই সমস্ত কিছু শেখানো হয়। যাঁরা পেশাগত ভাবে ড্রোন পাইলট, অপারেটর কিংবা টেকনিশিয়ান হতে চান, তাঁরা এই বিষয়টি নিয়ে পড়তে পারেন।
কোন কোন প্রতিষ্ঠানে পড়ার সুযোগ মিলতে পারে—
দেশের কিছু বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ড্রোন টেকনোলজি কিংবা ড্রোন ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়টি আলাদা করে পড়ানো হয়। ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্সেস, আইআইটি বোম্বে, মাদ্রাজ, কানপুর, খড়্গপুর, হায়দ্রাবাদ এবং ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ স্পেস সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি-তে ওই সমস্ত কোর্সগুলি করানো হয়ে থাকে।
পেশাগত সুযোগ সুবিধা—
দেশের প্রতিরক্ষা বিভাগে নজরদারি চালানোর কাজে ড্রোন ব্যবহার করা হয়। তার বাইরে যুদ্ধক্ষেত্রে সরাসরিও ব্যবহার করা হয়। এ জন্য ডিরেক্টরেট জেনারেল অফ সিভিল এভিয়েশন-এর রিমোট পাইলট সার্টিফিকেশন অর্জন করা প্রয়োজন।
এ ছাড়াও বন দফতর, বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী, ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র, ন্যাশনাল রিমোট সেন্সিং সেন্টার, ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ রিমোট সেন্সিং-এর মতো প্রতিষ্ঠানে ড্রোন বিশেষজ্ঞদের প্রয়োজন হয়ে থাকে। কৃষিক্ষেত্রে শস্যের ফলন বৃদ্ধি করতে এবং নিয়মিত নজরদারির জন্য ড্রোন ব্যবহারের কাজের জন্য কৃষি বিভাগও এমন বিশেষজ্ঞদের নিয়োগ করা হয়। এ ক্ষেত্রে কাজের জন্য আলাদা আলাদা সরকারি শংসাপত্রের প্রয়োজন।
বিদেশে এই প্রযুক্তিবিদদের চাহিদা অনেক বেশি। স্বীকৃত ডিগ্রি ও লাইসেন্স, কাজ করার দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতা থাকলে সরকারি কিংবা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ড্রোন টেকনোলজিস্ট কিংবা ইঞ্জিনিয়ারদের নিয়মিত ভাবে নিয়োগ করা হয়ে থাকে। এ দেশে এই বিষয়ের তেমন প্রচলন না থাকলেও ভবিষ্যতে এর চাহিদা বৃদ্ধি পেতে চলেছে।