ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের পঠনপাঠনে ‘অগমেন্টেড রিয়্যালিটি’ বা ‘ভার্চুয়াল রিয়্যালিটি’ ব্যবহারের সুযোগ কতটা? প্রতীকী চিত্র।
ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের নকশা তৈরিতে সহায়ক হয়ে উঠবে ‘অগমেন্টেড রিয়্যালিটি’ (এআর)। ‘ভার্চুয়াল রিয়্যালিটি’-র সাহায্যে সুরক্ষিত পরিবেশে বসেই দুর্গম অঞ্চলে কাজের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। ইঞ্জিনিয়ারিং শাখার শিক্ষকদের হাতেকলমে সেই প্রযুক্তি ব্যবহারের কলাকৌশলই শেখাল ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি (আইআইটি), খড়্গপুর। তবে, তার আগে উল্লিখিত প্রযুক্তি কী ভাবে শিক্ষাদানে সহায়ক হয়ে উঠতে পারে, কী ভাবে তা কাজে লাগানো হয়ে থাকে, তা জেনে নেওয়া প্রয়োজন।
‘অগমেন্টেড রিয়্যালিটি’ বাস্তবের সঙ্গে ডিজিটাল তথ্য সাজিয়ে অভিনব পরিবেশ তৈরি করে। অর্থাৎ বাস্তব পরিবেশে অ্যানিমেশন, গ্রাফিক্স, শব্দ ব্যবহার করে কাল্পনিক চিত্র পেশ করা হয়, যার মাধ্যমে ইঞ্জিনিয়ারিং বিদ্যার প্রদর্শন করা সম্ভব। বিশেষ মার্কারের সাহায্যে ক্লাসরুমের বোর্ডেই ডিজিটাল ছবির মধ্যে ইলেক্ট্রনিক্স কিংবা সমতুল সার্কিট এবং নির্মাণকার্যের কাঠামো, মেশিন চালনার মতো জটিল বিষয় উপস্থাপন করা যেতে পারে।
২০১৬-তে ‘অগমেন্টেড রিয়্যালিটি’ নির্ভর ‘পোকেমন গো’ গেমটি ব্যাপক জনপ্রিয় হয়েছিল। ছবি: সংগৃহীত।
অন্য দিকে, ‘ভার্চুয়াল রিয়্যালিটি’ (ভিআর) সম্পূর্ণ রূপে একটি কৃত্রিম পরিবেশ ব্যবহারকারীদের কাছে পেশ করে। অর্থাৎ ক্লাসরুমে বসেই বিশেষ যন্ত্র চোখে পরে নিলেই, হাতের কাছে নায়াগ্রা ফল্স বা আমাজ়নের জঙ্গলের দৃশ্যপট ভেসে উঠবে। তবে শুধু দেখাই নয়, কাল্পনিক ভাবে ওই দৃশ্যপটের বিষয়বস্তু ছুঁয়ে দেখারও সুযোগ থাকে। এই প্রযুক্তিকেই কাজে লাগিয়ে দুর্গম অঞ্চলে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের বিভিন্ন কাজ কী ভাবে করা যেতে পারে, কোন সার্কিট স্টেশন তৈরি করার জন্য কী ধরনের পরিবেশ আদর্শ হতে পারে— তার স্পষ্ট ধারণা পাওয়া সম্ভব।
জাতীয় শিক্ষানীতি, ২০২০ অনুযায়ী, ‘ইন্টার্যাক্টিভ লার্নিং’ পদ্ধতিতে হাতেকলমে সমস্ত বিষয় বুঝিয়ে দেওয়া, গল্প বা কবিতা বা পারস্পরিক আলোচনার সাহায্যে পঠনপাঠনে আগ্রহী করে তুলতে হবে। একই সঙ্গে, বাস্তবের সঙ্গে ডিজিটাল তথ্যের মেলবন্ধন ঘটিয়ে ক্লাসরুমে বসেই পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে শিক্ষার্থীরা যাতে ওয়াকিবহাল হতে পারে, সেই দিকেও নজর থাকবে। তাই উচ্চশিক্ষা ক্ষেত্রের শিক্ষকদের উল্লিখিত প্রযুক্তির ব্যবহারে দক্ষ করে তুলতে একাধিক কোর্স এবং প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
মুম্বইয়ের ইউনিভার্সাল এআই ইউনিভার্সিটি, আইআইটি বম্বে, দিল্লি, মাদ্রাজ-সহ বেশ কিছু সরকারি এবং বেসরকারি কলেজ ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এই পদ্ধতিতে শিক্ষাদান করা হয়ে থাকে। তবে, সার্বিক ভাবে স্নাতক স্তরে এই ধরনের প্রযুক্তির ব্যবহার এখনও তেমন ভাবে শুরু হয়নি। তাই শিক্ষার্থী, শিক্ষক এবং ক্ষেত্র বিশেষের কর্মীদের দক্ষ এবং ওয়াকিবহাল করতে সিড্যাক, এনআইইএলআইটি-র মতো সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলির তরফে ফ্যাকাল্টি ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম বা প্রশিক্ষণমূলক কোর্সের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
শিক্ষকদের হাতেকলমে ভিআর ব্যবহারের কলাকৌশল শেখাল ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি (আইআইটি), খড়্গপুর। নিজস্ব চিত্র।
সম্প্রতি এমনই একটি প্রশিক্ষণমূলক কোর্সের ক্লাস সম্পূর্ণ করেছে আইআইটি খড়্গপুর। প্রতিষ্ঠানের দ্য সেন্টার ফর টিচিং লার্নিং অ্যান্ড ভার্চুয়াল স্কিলিং (সিটিএলভিএস)-এর ভাইস প্রেসিডেন্ট কৌশলকুমার ভগত জানিয়েছেন, ডিজ়াইনিং এবং ডেভেলপমেন্ট সংক্রান্ত বিষয়ে দক্ষ হয়ে ওঠার জন্য শিক্ষকদের হাতেকলমে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। এতে যেমন তাঁদের অ্যানিমেশন, আলো, ক্যামেরা কন্ট্রোলের মতো বিষয়গুলি শেখানো সম্ভব হয়েছে, তেমনই যন্ত্রের ভিত্তিতে এই প্রযুক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রে কী কী সীমাবদ্ধতা রয়েছে সেই সম্পর্কেও তাঁরা জানার সুযোগ পেয়েছেন। সেন্টারের তরফে জানানো হয়েছে, পরবর্তী পর্যায়ে ইমার্সিভ লার্নিং ডিজ়াইন, থ্রিডি মডেলিং, অ্যানিমেশন, কৃত্রিম মেধার প্রয়োগ, এক্সটেন্ডেড রিয়্যালিটি সংক্রান্ত বিষয়েও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে।