Kolkata College Admissions 2025

পড়ুয়া কমছে ব্রেবোর্নে, আশাবাদী আশুতোষ! প্রথম পর্বের ভর্তির পর কী অবস্থা কলকাতার কলেজগুলির?

অভিন্ন পোর্টালে প্রথম দফায় ভর্তি প্রক্রিয়া শেষ হচ্ছে আজ, ২৫ অগস্ট। কিন্তু কলকাতার তাবড় কলেজে, কলা, বিজ্ঞান বা বাণিজ্য বিভাগে ভর্তির ক্ষেত্রে তেমন সাড়া পাওয়া যায়নি পড়ুয়াদের তরফে। বিভিন্ন কলেজ আশঙ্কা করছে, এ বার অর্ধেকেরও বেশি আসন ফাঁকা থেকে যেতে পারে।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৫ অগস্ট ২০২৫ ১৮:২৮
Share:

ভর্তির আবেদন জমা পড়লেও কলেজগুলির আশঙ্কা, এ বার অর্ধেকেরও বেশি আসন ফাঁকা থেকে যেতে পারে। — ফাইল চিত্র।

মূলধারার পড়াশোনায় কি বিমুখ নতুন প্রজন্ম? কলকাতার তাবড় সরকারি ও সরকার পোষিত কলেজগুলিতে স্নাতক স্তরে ভর্তির পরিসংখ্যান অন্তত তেমনই ইঙ্গিত দিচ্ছে।

Advertisement

গত শুক্রবার ওবিসি সংরক্ষণ সংক্রান্ত জট কাটতেই শুরু হয়েছে কলেজে কলেজে স্নাতক স্তরে ভর্তি প্রক্রিয়া। অভিন্ন পোর্টালে প্রথম দফায় ভর্তি প্রক্রিয়া শেষ হচ্ছে আজ, ২৫ অগস্ট। কিন্তু কলকাতার তাবড় কলেজে, কলা, বিজ্ঞান বা বাণিজ্য বিভাগে ভর্তির ক্ষেত্রে তেমন সাড়া পাওয়া যায়নি পড়ুয়াদের তরফে। বিভিন্ন কলেজ আশঙ্কা করছে, এ বার অর্ধেকেরও বেশি আসন ফাঁকা থেকে যেতে পারে।

৮৬ বছরের ঐতিহ্যবাহী মহিলা কলেজ লেডি ব্রেবোর্ন-এর কলা ও বিজ্ঞান বিভাগে মোট আসনসংখ্যা ৬২৯। তার মধ্যে সোমবার দুপুর ১টা পর্যন্ত ভর্তি হয়েছেন ১৮০ জন ছাত্রী। অর্থাৎ, মোট আসনের প্রায় ৭০ শতাংশই ফাঁকা থেকে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। অধ্যক্ষা শিউলি সরকার বলেন, “যাঁরা ভর্তি হয়েছেন তাঁরাও সকলে সশরীরে যাচাইকরণে উপস্থিত হননি। এই প্রবণতা মোটেও সুখকর নয়। তবে এখনও সময় রয়েছে। পোর্টালে প্রযুক্তিগত কিছু কারণেও বিলম্ব হচ্ছে।” তিনি দাবি করেছেন, এ বার তাঁরা আগে থেকেই আঁচ করতে পারছিলেন ভর্তি কম হবে। তার অন্যতম কারণ ওবিসি মামলা জটে বিলম্ব। তবে তাঁরা আশা, প্রেসি়ডেন্সির ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পর কিছু পড়ুয়া আসতে পারেন।

Advertisement

প্রায় একই ছবি শিয়ালদহের সুরেন্দ্রনাথ কলেজের। সেখানে কলা, বিজ্ঞান, বাণিজ্য, আইন বিভাগ মিলিয়ে আসন সংখ্যা তিন হাজারের বেশি। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, প্রথম পর্বে কেন্দ্রীয় ভাবে কলেজের জন্য আসন বরাদ্দ করা হয়েছে প্রায় ১৮০০। সোমবার দুপুর পর্যন্ত ভর্তি হয়েছেন প্রায় ৮৫০ জন। অধ্যক্ষ ইন্দ্রনীল কর বলেন, “দ্বিতীয় পর্বে আপগ্রেডেশন হলে বেশ কিছু পড়ুয়া অন্য কলেজে চলে যাবেন, তার পর ইঞ্জিনিয়ারিং-এও চলে যাবেন অনেকে। অন্তত ৫০ শতাংশ আসন ফাঁকা থাকবে।”

রাজ্যে সার্বিক ভাবে ৪৬০টি কলেজে আসন রয়েছে প্রায় ৯ লক্ষ ৪৬ হাজার। আবেদন করেছেন মাত্র ৩ লক্ষ ৫৯ হাজারের কিছু বেশি পড়ুয়া। রাজ্যের উত্তর থেকে দক্ষিণ— সমস্ত কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলি আশঙ্কার প্রহর গুণছে, আসন সংখ্যার অর্ধেকও পূরণ হবে না এ বার।

আশুতোষ কলেজের মোট আসন প্রায় ৩৩৩০, গত বছর ভর্তি হয়েছিলেন প্রায় ২০০০ পড়ুয়া। এ বছর কেন্দ্রীয় ভাবে এই কলেজের জন্য আসন বরাদ্দ করা হয়েছে ২৫৯৬টি। সোমবার পর্যন্ত প্রায় ৭০০ পডুয়া ভর্তি হয়েছেন বলে জানিয়েছেন অধ্যক্ষ মানস কবি। তিনি বলেন, “এখন পর্যন্ত যা প্রবণতা, তাতে আমি আশাবাদী, গত বছর যত আসন পূর্ণ হয়েছিল, এ বছরও তা-ই হবে।” ইংরিজি, মাইক্রোবায়োলজি, জার্নালিজ়ম-মাস কম, সাইকোলজিতে ভর্তির প্রবণতাই বেশি তাঁদের কলেজে। বিশুদ্ধ বিজ্ঞান বিষয়গুলিতে ভর্তি কমছে বলেও জানিয়েছেন অধ্যক্ষ। তাঁর দাবি, “যে সব বিষয় পড়াশোনা করলে পাশ করেই চাকরি পাওয়া যায়, তেমন বিষয়গুলিতেই পড়ুয়া ভর্তির সংখ্যা বেশি।” গণিত, পদার্থবিদ্যা বা রসায়নের মতো বিষয়গুলির প্রতি আকর্ষণ কমার কারণ স্কুল শিক্ষক নিয়োগ সংক্রান্ত জটিলতাও বলে মনে করেন মানস কবি।

বঙ্গবাসী কলেজের অধ্যক্ষা হিমাদ্রি ভট্টাচার্য চক্রবর্তী বলেন, “মোট ৩৪২০ টি আসনের মধ্যে প্রথম পর্যায়ে বরাদ্দ করা হয়েছে প্রায় ১০০০ আসন। সোমবার সকাল পর্যন্ত ভর্তি হয়েছেন প্রায় ৫৫০ জন। যাচাইকরণের পরে বুঝতে পারব কত জন পড়বেন শেষ পর্যন্ত।” অধ্যক্ষা দাবি করেন, সংস্কৃত, দর্শন, অর্থনীতিতে মাত্র দু’এক জন পড়ুয়া ভর্তি হয়েছেন। বিজ্ঞানের ক্ষেত্রেও মূলত গণিত, পদার্থবিদ্যা বা রসায়নের মতো বিষয়ে বড় অংশের পড়ুয়া হারাচ্ছেন তাঁরা। তিনি বলেন, “পড়ুয়া ভর্তির ৫০ শতাংশের বেশি বিএ মাল্টিডিসিপ্লিনারি এবং বাণিজ্য বিভাগে ভর্তি হয়েছেন।”

উত্তর কলকাতার মহারাজা মণীন্দ্রচন্দ্র কলেজের অধ্যক্ষ গৌতমকুমার ঘোষ বলেন, “আমাদের কলেজের ২০০০ আসনের মধ্যে প্রথম পর্বের জন্য বরাদ্দ হয়েছিল প্রায় ১০০০টি আসন। সোমবার সকাল পর্যন্ত প্রায় ৬০০ জন ভর্তি হয়েছেন। ভর্তি শেষ হলেই বলা যাবে কত আসন ফাঁকা থাকবে।”

কলেজ শিক্ষকদের অধিকাংশই মনে করছেন, ওবিসি সংরক্ষণ সংক্রান্ত জটিলতায় যে বিলম্ব হল, তার ফলেই বহু আসন ফাঁকা থেকে যাবে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement