ছবি: সংগৃহীত।
আইনি জটে থমকে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য জয়েন্ট এট্রান্সের ফলপ্রকাশ থেকে শুরু করে কলেজে ভর্তির মেধাতালিকা প্রকাশ। আর যত দিন যাচ্ছে হতাশা গ্রাস করছে রাজ্যের ছাত্র-ছাত্রীদের। ইতিমধ্যেই অনেকে ভর্তি হয়েছেন কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে, আবার অনেক পড়ুয়া চলে গিয়েছেন ভিন্ রাজ্যে। আর যাঁরা এই রাজ্যে পড়বেন বলে ঠিক করেছেন তাঁরা কার্যত দিশাহারা।
ইলেকট্রনিক্স কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা করার স্বপ্ন দেখেছিলেন অচিস্মিতা চক্রবর্তী। তিনি বলেন, "আমার চেনা বহু বন্ধু ইতিমধ্যে উচ্চশিক্ষার জন্য অন্য রাজ্যে চলে গিয়েছেন। রাজ্য জয়েন্টের ফল প্রকাশ নিয়ে আমি কোনও আশা দেখতে পাচ্ছি না। পরের বছর জেইই মেনস পরীক্ষার জন্য তৈরি হওয়ার কথা ভাবছি। মানসিক ভাবে খুব হতাশ।"
ইতিমধ্যেই বহু পড়ুয়া যেমন ভিন্ রাজ্যে পড়তে চলে গিয়েছেন। আবার বহু অভিভাবকই অতিরিক্ত টাকা খরচ করে বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ভর্তি করাতে বাধ্য হয়েছেন সন্তানকে। যাদবপুরের মতো বিশ্ববিদ্যালয় আশঙ্কা করছে এর পর মধ্য ও নিম্ন মেধার পডুয়ারাও ভর্তি হবে না। আখেরে ক্ষতি হবে রাজ্যের। ফল প্রকাশে দেরি হওয়ায় রাজ্যের ইঞ্জিনিয়ারিং আসনগুলি ফাঁকা পড়ে রয়েছে। শুধু ইঞ্জিনিয়ারিং নয়, স্নাতক স্তরেও আসন ফাঁকা থাকবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞেরা।
স্পর্শা সেনগুপ্ত রাজ্য জয়েন্ট পরীক্ষার পাশাপাশি জেইই অ্যাডভান্স ও মেনস দু'টি পরীক্ষাই দিয়েছিলেন। অপেক্ষায় ছিলেন রাজ্য জয়েন্ট পাশ করে ইনফরমেশন টেকনোলজি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় পড়াশোনা করবেন। রেজাল্ট বের না হওয়ায় বাধ্য হয়ে শিবপুর আইআইইএসটি-তে ভর্তি হতে হয়েছেন। সামনের সপ্তাহে ক্লাস শুরু। স্পর্শা বলেন, "রাজ্য জয়েন্টের ফল যত দিনে প্রকাশ হবে ততদিনে এখানে সিলেবাস অনেকটা এগিয়ে যাবে। এগিয়ে গিয়ে পিছনে ভর্তি হব কি না সেটা তখন বিবেচনা করব।"
৭ অগস্ট অভিন্ন পোর্টালের মাধ্যমে কলেজে ভর্তির প্রথম মেধাতালিকা প্রকাশ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ওবিসি জটের কারণে কবে ফল প্রকাশিত হবে, তা নিয়েও তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা। যাঁরা প্রাইভেট কলেজে ভর্তি হবেন না সরকারি কলেজ থেকেই উচ্চশিক্ষায় গ্রহণ করবেন, তাঁদের একজন মাল্যশ্রী মণ্ডল। ইতিমধ্যেই অভিন্ন পোর্টালের মাধ্যমে লেডি ব্রেবোর্ন, আশুতোষ, বিদ্যাসাগরের মতো বেশ কিছু কলেজে নাম নথিভুক্ত করেছেন। এ ছাড়াও প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয় ভূগোল নিয়ে পড়বেন বলে প্রবেশিকা পরীক্ষাও দিয়েছেন। হতাশ মাল্যশ্রী বলেন, "আমার একাধিক বন্ধু প্রাইভেট কলেজে ভর্তি হয়ে গিয়েছে। আমি এখনও পর্যন্ত ক্লাস শুরু করতে পারলাম না। শিক্ষামন্ত্রী নিজে বলছেন ৭ অগস্ট মেধাতালিকা প্রকাশ হবে। তারপরেও হচ্ছে না। আমি পাশ করেও অন্যদের থেকে পিছিয়ে পড়ছি। আমি পুরোপুরি মানসিক অবসাদের মধ্যে রয়েছি।"
যখন ছাত্রছাত্রীরা ভর্তি না হতে পেরে হতাশা, তখন এ বিষয়ে কার্যত মুখে কুলুপ এঁটেছে রাজ্য জয়েন্ট এন্ট্রান্স বোর্ড। বারংবার এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলেও তাদের কাছ থেকে কোনও উত্তর পাওয়া যায়নি।
নবান্ন সূত্রের খবর, রাজ্য ইতিমধ্যে জয়েন্ট এন্ট্রান্সের নতুন মেধাতালিকা প্রকাশ নিয়ে কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছে। সে ক্ষেত্রে নতুন ওবিসি মামলার সঙ্গে ওই আবেদনটিও জুড়ে দেওয়ার কথা ছিল। এখন সেটিও আর হচ্ছে না বলে মামলার সঙ্গে যুক্ত আইনজীবীরা মনে করছেন। তাঁদের কথায়, জয়েন্ট এন্ট্রান্স নিয়ে বিচারপতি কৌশিক চন্দের নির্দেশ আপাতত বহাল থাকল। বিচারপতি চন্দ জয়েন্টের নতুন প্যানেল প্রকাশের জন্য ১৫ দিন সময়সীমা বেঁধে দিয়েছেন। ওবিসি বিজ্ঞপ্তি মামলার শুনানি পিছিয়ে যাওয়ার ফলে ওই আবেদনটির শুনানি নিয়েও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। রাজ্য সরকারের আইনজীবীদের একাংশ মনে করছেন, জয়েন্ট এন্ট্রান্স নিয়ে আলাদা ভাবে শুনানির জন্য আবেদন করা হতে পারে। এ বার দেখার রাজ্য এই বিষয়ে দ্রুত শুনানি চেয়ে প্রধান বিচারপতির দৃষ্টি আকর্ষণ করে কি না।