প্রতীকী চিত্র।
পুজো শুরুর আগেই প্রবল বর্ষণে বিপর্যস্ত কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গের বেশ কিছু এলাকা। পরিস্থিতি এমনই যে মঙ্গলবার কলকাতা ও সংলগ্ন বিভিন্ন এলাকার সরকারি-বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছুটি ঘোষণা করতে হয়েছে। বাতিল হয়েছে বেশ কিছু পরীক্ষাও। এরই মধ্যে রাজ্য সরকারের তরফে পুজোর ছুটি তিনদিন এগিয়ে আনার ঘোষণা করে দেওয়া হয়েছে। আর তাতেই নতুন করে উস্কে উঠেছে বিতর্ক। শিক্ষক মহলের তরফেই প্রশ্ন উঠছে, কলকাতার একদিনের জলমগ্ন পরিস্থিতির জন্য কেন সারা রাজ্যের স্কুল-কলেজে ছুটি দিতে হবে?
মঙ্গলবার দুপুরেই রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু ঘোষণা করেছেন পুজোর ছুটি এগিয়ে আনা হচ্ছে। স্কুল এবং সমস্ত উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পুজোর ছুটি পড়ে যাচ্ছে বুধবার, ২৪ সেপ্টেবর থেকেই। এর আগে অবশ্য ২৬ সেপ্টেম্বর থেকে পুজোর ছুটি দেওয়া হয়েছিল।
শিক্ষক মহলের বক্তব্য, প্রাকৃতিক দুর্যোগ রাজ্যের সর্বত্র ঘটেনি। কলকাতার অবস্থাও যে আগামী ২৪ ঘণ্টায় উন্নত হবে না তা-ও বলা যায় না। তা হলে রাজ্যের সব জায়গায় আগে থেকে এই ছুটি ঘোষণা করার কি আদৌ প্রয়োজন ছিল?
সোমবার রাতে থেকে কলকাতা ও সংলগ্ন বেশ কিছু এলাকায় ব্যাপক বৃষ্টির ফলে জলমগ্ন হয়ে পড়ে বিভিন্ন এলাকা। মঙ্গলবার সকাল থেকেই একের পর এক স্কুলে ছুটি ঘোষণা করা হয়। পিছিয়ে দেওয়া হয় যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষ বৈঠক, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা।
এ প্রসঙ্গে, শিক্ষানুরাগী ঐক্য মঞ্চের সাধারণ সম্পাদক কিঙ্কর অধিকারী বলেন, “কলকাতা কেন্দ্রিক এলাকায় প্রবল প্রাকৃতিক দুর্যোগ। জনজীবন বিপর্যস্ত। কিন্তু রাজ্যের অধিকাংশ দুর্যোগের হয়নি। যে সমস্ত জায়গায় জনজীবন বিপর্যস্ত, সেখানে ছুটি ঘোষণা করা হলেও রাজ্যের অন্যত্র দুদিন পঠন-পাঠন চালানোই যেত।”
অভিযোগ, হঠাৎ ছুটি ঘোষণায় বিপাকে পড়বেন বিশেষ কারণে ছুটিতে থাকা শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীরা। যাঁরা অসুস্থতার জন্য বা মাতৃত্বকালীন ছুটিতে রয়েছেন তাঁরা পুজোর ছুটির আগে আর কাজে যোগ দেওয়ার সুযোগ পাবেন না। শিক্ষক মহলের একাংশের দাবি এই পরিস্থিতিতে যেন কোনও ভাবেই অতিরিক্ত ছুটি কাটা না হয়।
আবার অনেকেই মনে করছেন উচ্চ মাধ্যমিকের প্রথম পর্বের পরীক্ষা শেষ হয়েছে সদ্য। সেমেস্টার পদ্ধতিতে এমনিতেই পড়াশোনা করার সুযোগ কম। ফলে আগামী বছর যারা দ্বিতীয় সেমেস্টারে বসবে তাদের ক্লাসের সংখ্যা কমবে।
কল্যাণী পান্নালাল ইনস্টিটিউশনের প্রধানশিক্ষক রমেনচন্দ্র ভাওয়াল বলেন, “হঠাৎ ছুটি ঘোষণায় পড়াশোনায় যেমন ক্ষতি হয়, তেমনই পড়ুয়াদের আনন্দও নষ্ট হতে পারে। পুজোর ছুটি পড়ার আগে অনেক স্কুলেই সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সে সব বাতিল হয়ে যাবে।”
এ প্রসঙ্গে, বঙ্গীয় শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির সাধারণ সম্পাদক স্বপন মণ্ডল বলেন, “সরকারের হঠকারী সিদ্ধান্তে স্কুলগুলিতে তৈরি হয় অচলাবস্থা। মধ্যশিক্ষার পর্ষদের ক্যালেন্ডার অনুযায়ী রাজ্যের স্কুলগুলিতে ছুটি পড়ে পঞ্চমীর পরে। দুর্যোগ তো একদিনের, তার জন্য তিন দিন ছুটি দেওয়ার প্রয়োজন মনে করি না।”