Banglarshiksha Classroom 2025

হাতের মুঠোয় ক্লাসরুম, বইয়ের পাতায় কিউআর কোড, সর্বশিক্ষার লক্ষ্যে রাজ্যের হাতিয়ার প্রযুক্তি

পাঠ্যবইয়ের পাতার কিউআর কোড স্ক্যান করলেই সরাসরি ভার্চুয়াল ক্লাসরুমে পৌঁছানো সম্ভব।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ৩০ মে ২০২৫ ১৫:০৫
Share:

অনলাইন নির্ভর যুগে সব ধরনের পড়ুয়াকে পঠনপাঠনের জন্য এক ছাদের তলায় রাখতে স্কুল শিক্ষা দফতরের বিশেষ উদ্যোগ। নিজস্ব চিত্র।

মোবাইলের প্রতি স্কুল পড়ুয়ারা কম বেশি আগ্রহী। সেই আগ্রহকে হাতিয়ার করেছে স্কুল শিক্ষা দফতর। অতিমারি পর্বে ‘বাংলার শিক্ষা ক্লাসরুম’-এর মাধ্যমে অনলাইনে ক্লাস করানো হত স্কুল পড়ুয়াদের। বর্তমানে সেই ক্লাসরুম থেকেই বিশেষজ্ঞ শিক্ষক-শিক্ষিকারা বিভিন্ন কঠিন বিষয়কে সরল করে বোঝাবেন। প্রযুক্তিকে ব্যবহার করেই রাজ্যের সর্বস্তরের পড়ুয়াদের পঠনপাঠনে আগ্রহী করতে চায় স্কুল শিক্ষা দফতর।

Advertisement

এই ‘ভার্চুয়াল ক্লাসরুম’ থেকে রাজ্যের বিভিন্ন জেলার বিভিন্ন বিষয়ের স্কুল শিক্ষক শিক্ষিকারা ছাত্র-ছাত্রীদের পড়াবেন। তবে, প্রতিটি অধ্যায়ের ক্লাস আগে থেকে রেকর্ড করা থাকছে। পড়ুয়াদের শুধু বাংলার শিক্ষা পোর্টাল থেকে সরাসরি ওই ক্লাসরুমে প্রবেশ করতে হবে। এ ছাড়াও বইয়ের পাতায় অধ্যায়ের নিরিখে একটি করে কিউআর কোড রাখা হয়েছে। ওই কোড স্ক্যান করেও সরাসরি ‘বাংলার শিক্ষা ক্লাসরুম’-এ প্রবেশ করা সম্ভব। পরবর্তী শিক্ষাবর্ষের মধ্যে প্রতিটি বইয়ের প্রতিটি অধ্যায়ের জন্য একটি করে কিউআর কোড রাখার পরিকল্পনা রয়েছে শিক্ষা দফতরের।

ভার্চুয়াল ক্লাসরুম থেকেই বিভিন্ন কঠিন বিষয়কে সরল করে বোঝাবেন শিক্ষক-শিক্ষিকারা। প্রতীকী চিত্র।

অতিমারি আবহে অনলাইন ক্লাস সম্পর্কে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেলেও পরবর্তী কালে এর প্রতি ঝোঁক বেড়েছে পড়ুয়াদের। শিক্ষাবর্ষের মাঝে স্কুলগুলিতে ছুটি এবং অন্যান্য বিরতির কারণে পঠনপাঠন যাতে অনলাইনে করানো হয়, তারও ব্যবস্থা করা হয়েছে। এই বিষয়ে যোধপুর পার্ক বয়েজ়ের প্রধান শিক্ষক অমিত সেন মজুমদার বলেন, “দৃশ্য শ্রাব্য মাধ্যমে বইয়ের বিষয়বস্তু মনোগ্রাহী হয়ে উঠবে। তা ছাড়াও যাঁরা শেখাবেন, তাঁদের পাঠদানের পদ্ধতি অন্যান্য শিক্ষকদেরও সাহায্য করবে।”

Advertisement

যাদবপুর বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষক পার্থপ্রতিম বৈদ্য জানিয়েছেন, অনলাইন নির্ভর যুগে সব ধরনের পড়ুয়াকে পঠনপাঠনের জন্য এক ছাদের তলায় রাখা প্রয়োজন। সে দিক থেকে দেখতে গেলে বিষয়ভিত্তিক ভিডিয়ো লেকচার যথেষ্ট প্রাসঙ্গিক।

বিশেষজ্ঞরা গ্লোবে মার্ক করে কিংবা ল্যাবের সামগ্রী নিয়ে ক্লাসে পড়া বোঝানোর মতো করেই শেখাবেন। এর জন্য তাঁদের নির্দিষ্ট দিনে বিকাশ ভবনের স্টুডিয়োতে গিয়ে নিজেদের ক্লাস রেকর্ড করতে হবে। সমস্ত বিষয়টি পশ্চিমবঙ্গ সমগ্র শিক্ষা মিশন এবং স্কুল শিক্ষা দফতরের তরফে পরিচালনা করা হচ্ছে।

বিকাশ ভবনের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, মোবাইল বা ইন্টারনেট পরিষেবার ব্যবহার ভাল কাজের জন্য হোক। তাই তার সাহায্যে যাতে রাজ্যের যে কোনও প্রান্তে থাকা পড়ুয়া উন্নতমানের পঠনপাঠনের সুযোগ পায়, তা সুনিশ্চিত করা প্রয়োজন। এর জন্য ‘বাংলার শিক্ষা ক্লাসরুম’-এ নিয়মিত ভাবে বিশেষজ্ঞদের লেকচার সিরিজ আপলোড করা হচ্ছে।

এ ছাড়াও ভার্চুয়াল মাধ্যমে পড়ানোর সময় বিভিন্ন ধরনের পাঠ্যবই এবং উন্নতমানের স্টাডি মেটিরিয়ালের উল্লেখ করে দেওয়া হচ্ছে, যাতে পড়ুয়ারা নতুন কিছুও শিখতে পারে। সব মিলিয়ে ৪০ থেকে ৫০ মিনিটের ওই লেকচার ভিডিয়োতে পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজ়েন্টেশন থেকে ছবি, ডায়াগ্রাম ব্যবহার করে পাঠদান করছেন শিক্ষক-শিক্ষিকারা।

অনলাইন ক্লাসরুম লেকচার পড়ুয়াদের মনোযোগ ধরে রাখতে পারবে কী? প্রতীকী চিত্র।

ইতিমধ্যেই স্কুলগুলির তরফে এই বিশেষ ক্লাসরুমের কথা পড়ুয়া এবং অভিভাবকদের জানানো হয়েছে। স্কুলস্তরে পড়ুয়াদের ভিডিয়ো লেকচার সম্পর্কে ওয়াকিবহাল করা গেলে পরবর্তী কালে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে তা কাজে লাগতে পারে। তাই অভিভাবকদের একাংশ এই ব্যবস্থায় খুশি হলেও পুরোপুরি এর উপর নির্ভরশীল হতে চাইছেন না। কিছু ক্ষেত্রে আবার স্কুলের পাশাপাশি কোচিংয়ের উপর বেশি ভরসা রয়েছে অভিভাবকদের।

আসানসোলের হীরাপুর মানিকচাঁদ ঠাকুর ইনস্টিটিউশনের প্রধান শিক্ষিকা নিবেদিতা আচার্য জানিয়েছেন, কোচিং ব্যবস্থারের প্রতি যে নির্ভরশীলতা তৈরি হয়েছে, তা এত সহজে কমবে না। তবে, রাজ্যের স্কুল শিক্ষা দফতর যে পদক্ষেপ করেছে, তাতে স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারাও উপকৃত হবেন। তাঁরা নিজেদের পাঠদানের কৌশল আরও কী ভাবে আকর্ষণীয় করে তুলতে পারেন, তা-ও শিখে নিতে পারবেন।

তবে, শিক্ষাবিদদের একাংশের মত, অনলাইনে একটানা স্ক্রলিংয়ের বদলে ক্লাসরুম লেকচার কতটা পড়ুয়াদের মনোযোগ ধরে রাখতে পারছে, তার বাস্তব মূল্যায়ন করাও সমান ভাবে প্রয়োজন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement