পাঁচ বছর জেল, দু’দিনের অন্তর্বর্তী জামিন সলমনের

চোখে জল তাঁর নতুন নয়। আঙুলের ডগা দিয়ে সেই জল সরিয়েও দিতে দেখা দিয়েছে অনেক বার। আর তাঁর চোখের কোণা চকচক করতেই কার্যত ভেসে যেত দর্শক হৃদয়। যেত নয়, এখনও যায়! এত দিন যা ছিল পর্দায়, এ বার বাস্তবেও সেই ছবি নজরে এল। আদালত তাঁকে অনিচ্ছাকৃত হত্যা মামলায় দোষী সাব্যস্ত করার পরই কেঁদে ফেললেন ‘বজরঙ্গি ভাইজান’ সলমন খান। আর সে খবর পেয়ে বাড়িতে অসুস্থ হয়ে পড়লেন তাঁর মা সালমা। এর কিছু সময় পর সলমনকে পাঁচ বছর কারাদণ্ডের নির্দেশও দেয় আদালত। বুধবারের এই রায়ে সলমনের জেলে যাওয়া কার্যত পাকা। যদিও তিনি আপাতত দু’দিনের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন জামিন পেয়েছেন। বম্বে হাইকোর্টের এই নির্দেশ কিছুটা হলেও স্বস্তি ফিরিয়ে দিয়েছে খান পরিবারকে। পাশাপাশি তাঁর ভক্তদেরও।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০৬ মে ২০১৫ ১১:০০
Share:

চোখে জল তাঁর নতুন নয়। আঙুলের ডগা দিয়ে সেই জল সরিয়েও দিতে দেখা দিয়েছে অনেক বার। আর তাঁর চোখের কোণা চকচক করতেই কার্যত ভেসে যেত দর্শক হৃদয়। যেত নয়, এখনও যায়! এত দিন যা ছিল পর্দায়, এ বার বাস্তবেও সেই ছবি নজরে এল। আদালত তাঁকে অনিচ্ছাকৃত হত্যা মামলায় দোষী সাব্যস্ত করার পরই কেঁদে ফেললেন ‘বজরঙ্গি ভাইজান’ সলমন খান। আর সে খবর পেয়ে বাড়িতে অসুস্থ হয়ে পড়লেন তাঁর মা সালমা। এর কিছু সময় পর সলমনকে পাঁচ বছর কারাদণ্ডের নির্দেশও দেয় আদালত। বুধবারের এই রায়ে সলমনের জেলে যাওয়া কার্যত পাকা। যদিও তিনি আপাতত দু’দিনের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন জামিন পেয়েছেন। বম্বে হাইকোর্টের এই নির্দেশ কিছুটা হলেও স্বস্তি ফিরিয়ে দিয়েছে খান পরিবারকে। পাশাপাশি তাঁর ভক্তদেরও।

Advertisement

তবে, তারকার এ ভাবে মাটিতে মিশে যাওয়া মেনে নিতে পারেননি সল্লু মিঞার বেশির ভাগ ফ্যান। যদিও তাঁদের একটা অংশের মত, ‘হমারি পুলিশ হমেশা লেট আতি হ্যায় অওর গলত ইনশান কো হি অ্যারেস্ট করতি হ্যায়।’ সলমনের জনপ্রিয় এই সংলাপ তাঁর ক্ষেত্রে মোটেও খাটল না। আইনের চোখে সকলেই সমান সেটা মেনে নিয়েও তাঁরা যথেষ্ট হতাশ।

শুধু কি ভক্তকুল! মেনে নিতে পারেননি ইন্ডাস্ট্রিতে তাঁর দীর্ঘ দিনের সহকর্মীরাও। আইন আইনের পথে চলবে বললেও সলমনের সাজা যাতে কম হয় তাঁদের অনেকে সেই কামনাও করেছিলেন। এঁদের থেকে বেশ কয়েক ধাপ এগিয়ে ছিলেন গায়ক অভিজিত্। সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইট টুইটারে তিনি লিখেছেন, ‘কুকুর রাস্তায় শুয়ে থাকবে তো কুকুরের মতোই মরবে। রাস্তা গরিবের বাবার সম্পত্তি নয়। আমি এক বছর ঘরছাড়া ছিলাম। কিন্তু, রাস্তায় কখনও শুইনি।’ তাঁর এই মন্তব্যে বিতর্কের ঝড় উঠেছে গোটা দেশ জুড়ে। চলচ্চিত্র জগতের তারকা থেকে সঙ্গীত মহল— তাঁর এই মন্তব্যের তীব্র বিরোধিতা শুরু হয়েছে। অভিজিত্ যদিও তাঁর মন্তব্যে এ দিন অনড় ছিলেন। তিনি জানান, টুইটারে সীমিত শব্দ ব্যবহার করতে হয় বলে আরও বেশি কিছু লিখতে পারেননি। গরিব মানুষের এ ভাবে কুকুরের সঙ্গে রাস্তায় শুয়ে থাকা উচিত নয় বলে মত ওই গায়কের।

Advertisement

ঠিক যে ভাবে ১৩ বছর আগের এক রাতে ফুটপাথে শুয়েছিলেন আরও অনেকের সঙ্গে ওই পাঁচ জন। মুম্বইয়ের বান্দ্রা এলাকার আমেরিকান এক্সপ্রেস বেকারির সামনে। সেটা ২০০২-এর ২৮ সেপ্টেম্বর। ওই রাতে শহরেরই একটি পানশালা থেকে ফেরার সময় তাঁদের ঘাড়ের উপর উঠে গিয়েছিল সলমনের সাদা রঙের ল্যান্ড ক্রুজার। মারা গিয়েছিলেন এক জন। চার জন গুরুতর আহত হয়েছিলেন। সলমনের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে, তিনি মদ্যপ অবস্থায় বেপরোয়া ভাবে গাড়ি চালাচ্ছিলেন। এমনকী, তাঁর কাছে গাড়ি চালানোর বৈধ কোনও লাইসেন্সও ছিল না। পরে পরিবহণ দফতর আদালতে জানায়, এই ঘটনার প্রায় দু’বছর পর সলমন গাড়ি চালানোর লাইসেন্স পেয়েছিলেন।

ওই রাতে সলমন নিজেই গাড়ি চালাচ্ছিলেন বলে পুলিশের কাছে দায়ের করা এফআইআর-এ জানিয়েছিলেন তাঁর প্রহরার দায়িত্বে থাকা পুলিশকর্মী রবীন্দ্র পাটিল। এমনকী, সলমন যে মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালাচ্ছিলেন সে কথাও তিনি জানিয়েছিলেন। বার বার অনুরোধ করা সত্ত্বেও তারকা যে তাঁর কথা শোনেননি, সেই অভিযোগও করেন রবীন্দ্র। কিন্তু সলমন দাবি করেন, ওই রাতে তিনি বার-এ শুধু জল খেয়েছিলেন। মদ্যপান করেননি। এ দিন আদালতে সেই বার-এর বারটেন্ডার হাজির ছিলেন। তিনি বলেন, ‘‘এই নিয়ে আদালতকে যা জানানোর জানিয়েছি।’’ মামলা চলাকালীন যদিও রবীন্দ্রের মৃত্যু হয়।

তবে গত মার্চ মাসে এই মামলা ফের নতুন মোড় নেয়। সলমনের গাড়ির চালক অশোক সিংহ আদালতে জানান, সলমন নন, তিনিই ওই রাতে ল্যান্ড ক্রুজারটি চালাচ্ছিলেন। অশোকের এই দাবিকে অনেকেই সন্দেহের চোখে দেখেছিলেন। মামলার মুখ ঘোরাতে এটা সলমনের কারসাজি হতে পারে বলেও অনেকে মন্তব্য করেছিলেন। যদিও এ দিন বিচারক দেশপাণ্ডে মামলার রায় ঘোষণা করতে গিয়ে জানান, সলমনের বিরুদ্ধে ওঠা সমস্ত অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। তিনিই ওই রাতে মদ্যপ অবস্থায় বেপরোয়া ভাবে গাড়ি চালাচ্ছিলেন। অশোকের বয়ান যে আদালতকে বিভ্রান্ত করেছে, সে কথাও জানিয়েছেন বিচারক। রায়ে তিনি সলমনকে দোষী সাব্যস্ত করেন। এর পরেই কেঁদে ফেলেন পর্দার হিরো।

সেই রাতে যে চার জন আহত হয়েছিলেন, এ দিন তাঁদেরই এক জন কলিম মহম্মদ পাঠান বললেন, ‘‘সলমন যদি বড় কোনও শাস্তি পান, তবে কি আমাদের পেট ভরবে? ভরবে না। আমাদের ক্ষতিপূরণ চাই।’’ সেই ঘটনার পরে উত্তরপ্রদেশের গ্রামে ফিরে যান কলিম। গ্রামেই ব্যবসা করতে চান তিনি সেই ক্ষতিপূরণের পয়সায়। অন্য এক আহত, আবদুল্লাহ রউফ শেখ বলেন, ‘‘আমরা গরিব। ক্ষতিপূরণ দিলেই তা আমাদের জন্য ভাল হবে।’’ এই দু’জন ছাড়াও ওই রাতে জখম হয়েছিলেন মুন্না মালাই খান এবং মুসলিম শেখ। মারা গিয়েছিলেন নুরুল্লাহ মেহবুব শরিফ। এ দিন বাকিদের পরিবারের তরফেও ক্ষতিপূরণের দাবি করা হয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন