অরূপ ভাণ্ডারী।
প্রতিবাদ করাতেই যে সালকিয়ার যুবক অরূপ ভাণ্ডারীর মৃত্যু হয়েছিল তা মেনে নিল সিআইডি-ও। ঘটনার তদন্ত শেষ করে মঙ্গলবার হাওড়ার মুখ্য বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে চার্জশিট পেশ করে এ কথা স্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিলেন তদন্তকারীরা।
তদন্তকারীদের বক্তব্য, সরস্বতী পুজোর ভাসানের দিন, অর্থাৎ, ২৮ জানুয়ারি রাতে ওই ঘটনায় ধৃত অভিযুক্তদের মধ্যে কয়েক জন রাস্তার দু’পাশে দাঁড়িয়ে থাকা দর্শনার্থীদের উদ্দেশে কটূক্তি ও নানা অঙ্গভঙ্গি করছিল। তারই প্রতিবাদ করেছিলেন অরূপ ও তাঁর বন্ধুরা। এরই বদলা নিতে বিসর্জন থেকে ফেরার সময় অরূপ ও তাঁর বন্ধু অভিজিৎ ঘোষকে আক্রমণ করে অভিযুক্তরা। তদন্তকারীদের দাবি, শুধু এক জায়গায় নয়, তিন জায়গায় তিন বার তাঁদের ওপর আক্রমণ করা হয়। অভিজিৎ নর্দমায় পড়ে যাওয়ায় কোনও রকমে বেঁচে গেলেও বাঁশ, লাঠি ও চেয়ার দিয়ে রাস্তায় ফেলে পেটানো হয় অরূপকে। গুরুতর আহত বছর আঠাশের ওই যুবককে কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করার পর ২ জানুয়ারি মৃত্যু হয় তাঁর।
এক প্রতিবাদী যুবককে এ ভাবে পিটিয়ে খুন করার ঘটনায় রাজ্যজুড়ে ব্যাপক আলোড়ন পড়ে। মৃত যুবকের পরিবারের লোকজন প্রথমে ৫ জনের নামে পুলিশে অভিযোগ দায়ের করেন। এই ঘটনায় অভিযুক্তদের সঙ্গে নাম জড়ায় এলাকার কয়েক জন তৃণমূল নেতা ও কাউন্সিলরের। অভিযোগ ওঠে ওই নেতাদের মদতেই এলাকায় দাপিয়ে বেড়াচ্ছিল অভিযুক্তরা। ঘটনার দু’দিন পর মৃত যুবকের বাড়ি ছুটে আসেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রতিবাদ করাতেই ওই যুবককে যে পিটিয়ে মারা হয়েছে এই তত্বকে কার্যত নসাৎ করে দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, দু’টি গোষ্ঠীর ঝামেলায় ওই যুবকের মৃত্যু হয়েছে। কারণ, এই ঘটনায় কোনও মহিলার খোঁজ পাওয়া যায়নি।
মুখ্যমন্ত্রীর এই বক্তব্যের সমর্থনে প্রচারে নামেন এলাকার তৃণমূল কর্মী ও নেতারা। তাঁরা এলাকায় প্রচার করতে শুরু করেন, কোনও ইভটিজিং বা মহিলাদের প্রতি কটূক্তির প্রতিবাদ করায় ওই যুবকের মৃত্যু হয়নি, দুটি গোষ্ঠীর সংঘর্ষে এই ঘটনা ঘটেছে। এরই মধ্যে হাওড়া সিটি পুলিশের কাছ থেকে তদন্তভার চলে যায় সিআইডি-র হাতে। তবে তার আগেই সিটি পুলিশের হাতে ধরা পড়ে রাজু তিওয়ারি নামে এক অভিযুক্ত। কয়েক দিন ফেরার থাকার পর হাওড়া আদালতে এসে আত্মসমর্পণ করে শুভম দুবে, সন্দীপ তিওয়ারি, বরুণ শর্মা। তল্লাশি চালিয়ে সিআইডি গ্রেফতার করে ওই ঘটনার মূল অভিযুক্ত আনন্দ প্রসাদ, লালবাহাদুর রাই ও অঙ্কিত তিওয়ারিকে। গ্রেফতার হওয়ার পর থেকে আদালতের নির্দেশে অভিযুক্তরা সকলেই জেল হেফাজতে রয়েছে। সিআইডি সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রথমে পাঁচ জনের নামে অভিযোগ থাকলেও আদালতে দেওয়া কয়েক জন প্রত্যক্ষদর্শীর গোপন জবানবন্দি অনুসারে লালবাহাদুর রাই ও অঙ্কিত তিওয়ারিকে পরে গ্রেফতার করা হয়।
হাওড়া আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, আদালতে অভিযুক্তদের হাজিরার দিন থাকায় এ দিন সিআইডি-র জমা দেওয়া চার্জশিট আদালতে জমা দেওয়া হয়। নিয়ম অনুয়ায়ী মামলা স্থানান্তরিত হয়ে জেলা দায়রা আদালতে যাওয়ার কথা থাকলেও বিপক্ষের আইনজীবীরা আদালতের কাছে আবেদনে জানান, যে চার্জশিটের প্রতিলিপি তাঁরা পেয়েছেন তাতে অনেক কাগজপত্র নেই। তাই মামলার দিন পিছনো হোক। আদালত এই আবেদন মঞ্জুর করে আগামী ২৭ তারিখ ওই মামলার দিন দেন।