জলসীমা পেরলেই গুলি, ভারতীয় মত্স্যজীবীদের হুশিয়ারি শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রীর

শ্রীলঙ্কার রাজনৈতিক পালাবদলের পর চিনের দিকে ঝুঁকে পড়া প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক মজবুত করতে তত্পর হয়েছে ভারত। গত মাসে সে দেশের নতুন প্রেসিডেন্ট মৈত্রীপালা সিরিসেনা নয়াদিল্লিতে এসে বৈঠক করে গিয়েছেন কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সঙ্গে। বৈঠক করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গেও। ভারতের সঙ্গে একযোগে কাজ করার বার্তা দিয়েছেন খোদ সিরিসেনা। চলতি মাসে শ্রীলঙ্কা সফরে যাওয়ার কথা নরেন্দ্র মোদীরও।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ০৭ মার্চ ২০১৫ ১২:০১
Share:

শ্রীলঙ্কার রাজনৈতিক পালাবদলের পর চিনের দিকে ঝুঁকে পড়া প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক মজবুত করতে তত্পর হয়েছে ভারত। গত মাসে সে দেশের নতুন প্রেসিডেন্ট মৈত্রীপালা সিরিসেনা নয়াদিল্লিতে এসে বৈঠক করে গিয়েছেন কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সঙ্গে। বৈঠক করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গেও। ভারতের সঙ্গে একযোগে কাজ করার বার্তা দিয়েছেন খোদ সিরিসেনা। চলতি মাসে শ্রীলঙ্কা সফরে যাওয়ার কথা নরেন্দ্র মোদীরও। কিন্তু এই বন্ধুত্বপূর্ণ আবহাওয়ার মধ্যেই যেন এক টুকরো কালো মেঘ। এক তামিল টেলিভিশনে দেওয়া সাক্ষাতকারে শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহ রীতিমতো হুমকি দিলেন ভারতীয় মত্স্যজীবীদের। নিজেদের এলাকায় মাছ ধরার ‘পরামর্শ’ দিয়ে তাঁর হুমকি, জলসীমা লঙ্ঘন করলে ভারতীয় মতস্যজীবীদের ‘গুলি করে মারা হবে’।

Advertisement

বিক্রমাসিংহের এই মন্তব্যের পর নড়চড়ে বসেছে ভারতের বিদেশমন্ত্রক। তবে হুমকির বদলে পাল্টা হুমকি না দিয়ে মতস্যজীবীদের বিষয়টিকে ‘স্পর্শকাতর’ আখ্যা দেওয়া হয়েছে ভারতের তরফে। আসন্ন শ্রীলঙ্কা সফরে বিষয়টি নিয়ে সে দেশের সঙ্গে কথা বলা হবে বলেও জানানো হয়েছে।

প্রায় ২৫ বছর পর ভারতের কোনও প্রধানমন্ত্রীর এই প্রথম শ্রীলঙ্কা সফর। সিরিসেনার আগে প্রেসিডেন্ট মাহিন্দা রাজাপক্ষের বিরুদ্ধে সংসদীয় গণতন্ত্র না ফিরিয়ে পরিবারতন্ত্রের অভিযোগ ছিল বহু দিনের। তার সঙ্গে যুক্ত হয় তাঁর আমলেই জাফনার যুদ্ধে এলটিটিই সুপ্রিমো প্রভাকরনের মৃত্যু। এর ফলে মারাত্মক ভাবে আঘাত পায় তামিল ভাবাবেগ। তামিল অধ্যুষিত ভারতের দক্ষিণের রাজ্যগুলিতে রাজাপক্ষে বিরোধী মিছিলও বের হয়। এই সব কারণে শ্রীলঙ্কার সঙ্গে ক্রমশ তিক্ত হতে থাকে ভারতের সম্পর্ক। এবং এর সুযোগ পুরোপুরি সুযোগ নিয়ে ভারতের দক্ষিণে প্রতিবেশী রাষ্ট্রটির সঙ্গে সম্পর্ক মজবুত করে চিন।

Advertisement

ঠিক কী বলেছেন বিক্রমাসিংহে?

তামিল টিভিতে দেওয়া এক সাক্ষাত্কারে তাঁর দাবি, “কেউ যদি আমার বাড়িতে বেআইনি ভাবে ঢোকার চেষ্টা করে, তবে তাকে বাধা দেওয়ার অধিকার আমার আছে। তাকে গুলি করে মারলে সেটা নিশ্চয়ই মানবাধিকার লঙ্ঘনের আওতায় পড়বে না।” ভারতীয় মত্স্যজীবীদের সতর্ক করে তিনি আরও বলেন: “আমাদের জলসীমায় ঢুকে কেন মাছ ধরবে অন্য দেশের লোক? এর ফলে আমাদের দেশের উত্তরাংশের মানুষ বঞ্চিত হচ্ছে। সেখানকার মত্স্যজীবীরা বারেবারেই প্রশ্ন করেছে, দেশের নৌবাহিনী কেন তাদের সাহায্য করছে না।” ভারতীয় মত্স্যজীবীদের প্রতি তাঁর পরামর্শ, “আপনারা আপনাদের জলসীমায় মাছ ধরুন। সীমা পেরলেই বিপদে পড়বেন।” শ্রীলঙ্কার সঙ্গে ভারতের চলতি সুসম্পর্কের কথা বলায় তাঁর দাবি, “এ বিষয়ে আলোচনা হতেই পারে। তবে সীমা লঙ্ঘন করলে আমাদের কিছু করার নেই।” এ বিষয়ে সম্প্রতি ইতালির নাবিকদের প্রসঙ্গ টেনে তাঁর যুক্তি, “ভারতে এসে দুই ইতালীয় নাবিক গুলি চালিয়েছিল। তখন কি ইতালির সঙ্গে সম্পর্কের কথা মাথায় রেখে তাদের ছেড়ে দিয়েছিল ভারত?”

শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রীর এই মন্তব্য সামনে আসার পর অস্বস্তিতে ভারতের বিদেশমন্ত্রক। মন্ত্রকের মুখপাত্র সৈয়দ আকবরুদ্দিন বলেছেন, “বিষয়টি অত্যন্ত স্পর্শকাতর। প্রধানমন্ত্রীর আসন্ন সফরে এটা নিয়ে আলোচনা হবে। শান্তিপূর্ণ ভাবেই এই সমস্যার সমাধান হবে বলে আশা করা হচ্ছে।” বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ এই মুহূর্তে রয়েছেন শ্রীলঙ্কায়। প্রধানমন্ত্রীর সফরের আগে দু’দিনের সফরে এসেছেন তিনি। বিক্রমাসিংহের মন্তব্য নিয়ে সে দেশের বিদেশমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর আলোচনা হবে বলে জানিয়েছে বিদেশমন্ত্রক।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন