ভোটপর্ব মিটতেই রাজনৈতিক সংঘর্ষে উত্তপ্ত হল পূর্ব মেদিনীপুরের দুই এলাকা। সোমবার রাতে পারিবারিক বিবাদ ঘিরে তৃণমূল–বিজেপি সংঘর্ষে উত্তপ্ত হল তমলুক শহরের পদুমবসান এলাকা। ওই দিনই গভীর রাতে কোলাঘাট থানার দেউলিয়া বাজারের কাছে বিজেপি-র শ্রমিক সংগঠনের অফিসে ভাঙচুর ও লুঠপাটের অভিযোগ উঠেছে। দু’টি ক্ষেত্রেই থানায় অভিযোগ দায়ের হয়েছে।
গত সোমবার পদুমবসান এলাকার বাসিন্দা তৃণমূল সমর্থক রামপদ জানা ও তাঁর বড় ছেলে বিজেপি সমর্থক অশোক জানার মধ্যে পারিবারিক বিষয় নিয়ে গোলমাল বাধে। গণ্ডগোলের জেরে ওই দিন রাতেই রামপদবাবু তাঁর ছেলে ও বউমাকে বাড়ি থেকে বের করে দেন বলে অভিযোগ। ঘটনার খবর পেয়ে পুরভোটে ১১ নম্বর ওয়ার্ডের জয়ী বিজেপি প্রার্থী বিশ্বজিৎ দত্ত কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে অশোক ও তাঁর স্ত্রীকে বাড়িতে ঢোকাতে যান। এ নিয়ে রামপদবাবুর সঙ্গে তাঁদের বচসা বাধে। অভিযোগ, তার জেরে বিজেপি কর্মীরা রামপদবাবুকে মারধর করে। সেই সময় রামপদবাবুর কাছ থেকে ফোনে ঘটনার খবর পেয়ে বাড়ি থেকে কিছু দূরে থাকা তাঁর ছোট ছেলে-সহ কয়েক জন তৃণমূলকর্মী সেখানে ছুটে আসে। তার পরই উভয় পক্ষের সংঘর্ষ বাধে।
বচসার জেরে বিশ্বজিৎবাবুকে চড় মারার অভিযোগ ওঠে এক তৃণমূল কর্মীর বিরুদ্ধে। গোলমালে উভয় পক্ষের তিন জন করে মোট ৬ জন আহত হন বলে অভিযোগ। আহতদের মধ্যে তিন তৃণমূল সমর্থক ও এক বিজেপি সমর্থককে তমলুক জেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তৃণমূলের পক্ষ থেকে বিশ্বজিৎবাবু-সহ ৬ জন বিজেপি সমর্থকের নামে ও বিজেপির পক্ষ থেকে ৭ জন তৃণমূল কর্মীর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হয়।
বিশ্বজিৎ দত্তের অভিযোগ, ‘‘অশোক তাঁর হয়ে পুরভোটে কাজ করছিল। তিনি অশোক ও তাঁর স্ত্রীকে বাড়িতে ঢোকাতে গিয়েছিলেন। পরিবর্তে রামপদবাবু তাঁকে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকেন। এর পর এক দল তৃণমূল কর্মী এসে চড়াও হয়ে তাঁকে মারধর করে।’’ তৃণমূলের জেলা সহ-সভাপতি চিত্তরঞ্জন মাইতির পাল্টা অভিযোগ, ‘‘রামপদবাবুর বড় ছেলে ও বউমাকে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়ার অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। বিশ্বজিৎবাবু-সহ বিজেপি কর্মীরা তাঁদের আক্রমণ করে। ঘটনায় তাদের তিন জন সমর্থক আহত হয়েছেন।’’
অন্য দিকে, কোলাঘাট থানার দেউলিয়া বাজারের কাছে বিজেপি-র শ্রমিক সংগঠনের একটি অফিস ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। বিজেপি নেতৃত্বের অভিযোগ, সোমবার গভীর রাতে তৃণমূলের লোকেরাই ওই অফিস ভাঙচুর করে, দলীয় নেতাদের ছবি ছিঁড়ে ও কিছু আসবাবপত্র লুঠ করে নিয়ে পালায় বলে অভিযোগ। মঙ্গলবার সকালে কোলাঘাট থানায় স্থানীয় তৃণমূল সমর্থক সহদেব হাজরা-সহ কয়েক জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করে বিজেপি। কোলাঘাটের বিজেপি নেতা তথা দলের জেলা কমিটির সদস্য উজ্জ্বল ভট্টাচার্যের অভিযোগ, ‘‘জাতীয় সড়কের ধারে শ্রমিক সংগঠনের ওই অফিস তুলে দেওয়ার জন্য তৃণমূল কর্মী সহদেব হাজরা বেশ কিছু দিন ধরেই দলীয় কর্মীদের হুমকি দিচ্ছিলেন। সোমবার রাতে তৃণমূলের লোকেরাই এই ঘটনা ঘটিয়েছে।’’ যদিও এই অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছে তৃণমূল।