আইএস-এর তাড়া খেয়ে তুরস্কে ঢোকার আপ্রাণ চেষ্টায় কুর্দ শরণার্থীরা। ছবি: রয়টার্স।
এ বার তুরস্কের সীমান্ত ঘেঁষা সিরিয়ার কোবানেতে বিমান হামলা চালাল আমেরিকা। কোবানে ছাড়াও বুধবার সিরিয়ার দেইর-আল- জওর এবং বাগদাদে হামলা চালায় মার্কিন বায়ুসেনা।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, এ দিন স্থানীয় সময় সকাল ১০টা নাগাদ তুরস্কের দিক থেকে দু’টি যুদ্ধবিমান এসে কোবানের কয়েকটি জায়গায় বোমাবর্ষণ করে। তুরস্ক অবশ্য এই হামলায় অংশ নেওয়া বা নিজেদের আকাশসীমা ব্যবহার করতে দেওয়ার কথা অস্বীকার করেছে। এমনিতেই তুরস্ক ইসলামিক স্টেট-এর (আইএস) বিরোধী জোটে যোগ দেওয়া নিয়ে দ্বিধায় রয়েছে। সামরিক অভিযানে অংশ নেওয়া দূর অস্ত্, নিজেদের ন্যাটোর ঘাঁটিকে সামরিক কাজে ব্যবহার করতে দিতেও রাজি হয়নি তারা। শুধু ত্রাণের সাহায্য করার কথা বলেছে।
কিন্তু সম্প্রতি তুরস্কের নীতিতে সামান্য পরিবর্তন লক্ষ করা গিয়েছে। মঙ্গলবার তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোগানের কথায় এর ইঙ্গিত মেলে। নিউ ইয়র্কে চলা রাষ্ট্রপুঞ্জের সম্মেলনে এ কথা শোনা যায়। কিছু দিন আগেই আইএস-এর হাতে বন্দি তুরস্কের কনস্যুলেটের ৪৯ জন কর্মী মুক্তি পেয়েছেন। কিন্তু তার পরেও তুরস্ক আইএস বিরোধী অভিযানে সামিল হতে চায়নি। কিন্তু সিরিয়ার উত্তরে কোবানে অঞ্চলের দিকে আইএস-এর জঙ্গিরা এগিয়ে যাওয়ায় সেখানে বসবাসকারী কুর্দরা ঘর ছাড়তে শুরু করেন। গতি শনিবারই প্রায় এক লক্ষ ৩০ হাজার কুর্দ সীমান্ত পেরিয়ে তুরস্কে প্রবেশ করেন। এই বিপুল সংখ্যক শরণার্থী শুধু ত্রাণকার্যের উপরেই চাপ বাড়াবে না তুরস্কে তুর্ক ও কুর্দের দীর্ঘ দিনের সামাজিক সমস্যাকে উসকে দেবে বলেও তুরস্কের আশঙ্কা ছিল। তাই শরণার্থীদের প্রবেশ আটকাতে এর মধ্যই প্রায় সব চেক পোস্ট বন্ধ করে দিয়েছে তুরস্ক। পাশাপাশি আজ ওই সীমান্তে আরও সেনা এবং ট্যাঙ্ক পাঠানো হয়েছে। কোবানে থেকে শরণার্থী আসা বন্ধ করতে এ বার সামরিক অভিযানে তুরস্ক অংশ নিতে পারে বলে অনেকে মনে করছেন। কারণ, ক্রমেই কোবানের কাছে এগিয়ে আসছে আইএস-জঙ্গিরা। ফলে সীমান্তে আটকে থাকা শরণার্থীর সংখ্যা বাড়ছে। এর মধ্যেই সীমান্তে ছোটখাটো বিক্ষোভও সামলাতে হয়েছে।
মার্কিন সেনার সেন্ট্রাল কম্যান্ড জানিয়েছে, দেইর-অল-জওর আইএস-এর দু’টি গাড়ির উপরে হামলা চলে। এ নিয়ে শুধু সিরিয়াতেই ১৬ বার আক্রমণ চালানো হয়েছে। পাশাপাশি, বাগদাদের উত্তর-পশ্চিমে আইএস-এর উপরে হামলা করা হয়। এই হামলায় আইএস-এর একটি সাঁজোয়া গাড়ি ধ্বংস হয়েছে। শুক্রবার ব্রিটিশ পার্লামেন্টে আইএস বিরোধী অভিযান নিয়ে ক্যামের সরকার আলোচনা করবে। এখানে সামরিক অভিযানে ব্রিটেন অংশ নেবে কি না তা স্পষ্ট হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এ দিনই নেদারল্যান্ডসের পার্লামেন্টে আইএস-বিরোধী অভিযান নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা। এই অভিযানে অংশ নিতে ডাচেরা চারটি এফ-১৬ যুদ্ধবিমান পাঠাতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। এ দিকে রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ সম্মেলনে ওবামার বক্তৃতা করার কথা। সেখানে তিনি সিরিয়া ও ইরাকে মার্কিন বিমান হামলার সমর্থনে কথা বলবেন। সিরিয়ায় যে আরও হামলা চলবে তার স্বপক্ষেও যুক্তি পেশ করতে চলেছেন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা।