‘অভিষেক’ হল বটে, তবে জাঁকজমক হল না!
বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর আঙিনায় বহু আন্দোলনের সাক্ষী যন্তর মন্তরে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভা দেখে সে রকমটাই মনে হওয়া স্বাভাবিক। তৃণমূল যুবার উদ্যোগে দলীয় নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাইপো অভিষেকের নেতৃত্বে এ দিনের কেন্দ্র-বিরোধী সভা মেরেকেটে হাজারখানেক মানুষের সামনে ব্যাটন বদলের সাক্ষী হয়ে রইল। গোটা সভাই পরিচালনা করলেন অভিষেক। বক্তাদের সঙ্গে জনতার পরিচয় করালেন, চোস্ত হিন্দিতে বক্তৃতাও করলেন। সভায় শিশির অধিকারী, ডেরেক ও’ ব্রায়েন, কাকলি ঘোষদস্তিদার-সহ লোকসভা ও রাজ্যসভায় তৃণমূলের ২৮ জন সাংসদ উপস্থিত থেকে অভিষেককে মান্যতাও দিলেন। আর এই গোটা পর্বে তৃণমূলের একদা দু’নম্বর, দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায় রইলেন কার্যত পার্শ্বচরিত্রে।
যদিও এ দিনের বক্তৃতায় অভিষেককে একাধিক বার ‘পুত্রবত্’ বলে সম্বোধন করেছেন মুকুল। বলেছেন, “অভিষেক ও তার তরুণ সহকর্মীরা একার হাতে এই ঐতিহাসিক যুব সমাবেশ করেছে। আমি তাকে ধন্যবাদ তো দিচ্ছিই, পাশাপাাশি আশীর্বাদ করছি যাতে দেশের সর্বত্র সে তার এই আন্দোলন ছড়িয়ে দিতে পারে।” প্রত্যাশামতোই তৃণমূল যুবার এই সভায় সিবিআইয়ের মতো কোনও তদন্তকারী সংস্থাকে আক্রমণের পথে হাঁটেননি দলীয় নেতৃত্ব। বরং, সিপিএম বা কংগ্রেসের নামোচ্চারণ না করে শুধুমাত্র বিজেপি-র সাম্প্রদায়িকতা, মূল্যবৃদ্ধি, যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার উপর আঘাত হানার বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন তাঁরা। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর উদ্দেশে অভিষেক বলেন, “বক্তৃতায় আর স্লোগানে দেশ চলে না। কাজ করে দেখান। বক্তৃতা শুনলে সুভাষচন্দ্র বসু, রবীন্দ্রনাথ, বল্লভভাই পটেলের বক্তৃতা শুনব। আপনার নয়।” মোদীকে কটাক্ষ করে তিনি বলেন, “মূল্যবৃদ্ধি যে জায়গায় যাচ্ছে তাতে একটা আলুকে দশ টুকরো করে কেটে প্রতিটি টুকরো ১০ টাকা দামে কিনতে হবে।”
এরই পাশাপাশি, সারদা-কাণ্ডে রীতিমতো কোণঠাসা তৃণমূলের বিভিন্ন নেতানেত্রীর কথায় তাত্পর্যপূর্ণ ভাবে উঠে এসেছে দলনেত্রী মমতার ভাবমূর্তি কালিমালিপ্ত করার প্রয়াসের প্রসঙ্গও। মমতার স্বচ্ছ ভাবমূর্তির উল্লেখ করে অভিষেক নিজে যেমন বলেছেন, “আমাদের নেত্রী এখনও ৪০ টাকার হাওয়াই চপ্পল পরেন। ৩০০ টাকার শাড়ি পরেন। কিন্তু মোদী দিনে পাঁচ বার কুর্তা-পাজামা পাল্টান। ১০ কোটি টাকার গাড়ি চাপেন। আমাদের এই আওয়াজ ৭ নম্বর রেস কোর্স রোড পর্যন্ত পৌঁছে যাবে।” মুকুল বলেন, “আমাদের হাতে মিডিয়া নেই। আমরা মিডিয়া ব্যবহার করতে পারি না। আমাদের এখানে বিরোধীও নেই। কিন্তু সারা দিন গ্রামেগঞ্জে ঘোরার পরে বাড়ি ফিরে যখন টিভি চালাই, তখন দেখি মিডিয়াই একমাত্র বিরোধীপক্ষ।”
অভিষেক-মঞ্চেই ব্যাটন বদল হয়ে গেল দিল্লিতে পাশাপাশি দুই বাড়ির বাসিন্দার মধ্যে!