দীপালি সাহা। —ফাইল চিত্র।
অবশেষে আদালতে আত্মসমর্পণ করলেন ‘বেপাত্তা’ তৃণমূল বিধায়ক দীপালি সাহা। যদিও পাঁচ লক্ষ টাকার ব্যক্তিগত বন্ড এবং ১০ হাজার টাকার নিরাপত্তা বন্ডের বিনিময়ে তাঁর জামিন মঞ্জুর করে আদালত।
গত ৭ মে রাজ্যে চতুর্থ দফার নির্বাচনে বিষ্ণুপুর লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত সোনামুখীর সাহাপুর বুথে দলবল নিয়ে হামলা চালানোর অভিযোগ উঠেছিল তাঁর বিরুদ্ধে। শুধু তাই নয়, সরকারি কাজে বাধা দেওয়া, সরকারি কর্মীদের উপর হামলা ও মারধর, দলবেঁধে হামলা চালানো-সহ বিভিন্ন জামিন অযোগ্য ধারায় তাঁর বিরুদ্ধে মামলা রুজু হয়েছিল। মাঝখানে কেটে গিয়েছে প্রায় দেড় মাস। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে তাঁর গ্রেফতারির দাবি জানানো হচ্ছিল। পুলিশ জানিয়েছিল তিনি পলাতক। অথচ সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ ছিল। সোমবার সকালে সমস্ত জল্পনার অবসান ঘটিয়ে বিষ্ণুপুর আদালতে আত্মসমর্পণ করেন সোনামুখীর ওই তৃণমূল বিধায়ক।
এই সময় বিধানসভা অধিবেশন চলছে। শাসকদলের বেশ কয়েক জন বিধায়কের বিরুদ্ধে মামলা রুজু হওয়ায় তাঁরা অধিবেশনে আসতে পারছেন না। ভোটের দিন উত্তর ২৪ পরগনার হাড়োয়ায় বুথমুখী ভোটারদের উপরে গুলি চালনার ঘটনায় নাম জড়ায় মিনাখাঁর তৃণমূল বিধায়ক ঊষারানি মণ্ডলের। জামিন প্রক্রিয়া না মেটা পর্যন্ত দীপালির পাশপাশি ঊষারানিও যাতে বিধানসভায় না আসেন দলীয় নেতৃত্ব সেই পরামর্শ দিয়েছিলেন। অন্য দিকে, কয়েক দিন ধরে বিধানসভায় অনুপস্থিত মণিরুল ইসলাম। এই নিয়ে গত শুক্রবার বিরোধীরা বিধানসভায় তুমুল হইচই বাধায়। তার পরই সপ্তাহের প্রথম কাজের দিন তৃণমূলের ওই বিধায়কের আত্মসমর্পণের ঘটনাকে হাতিয়ার করে শাসকদলের উপর আরও চাপ বাড়ানোর চেষ্টা করল বিরোধীরা। সিপিএম সাংসদ মহম্মদ সেলিম বলেন, “এটা শেষ নয়, শুরু। এর পর একে একে মণিরুল, অনুব্রতদেরও আত্মসমর্পণ করতে হবে।” বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ বলেন, “এক জন জনপ্রতিনিধির এ ভাবে পালিয়ে বেড়ানোটা ঠিক নয়। তিনি তো আর চোর, ডাকাত বা সমাজবিরোধী নন। কাজেই এত দিন পালিয়ে বেড়ানোটা খুবই দৃষ্টিকটু। অনেক আগেই ওঁর আত্মসমর্পণ করা উচিত ছিল।” একই সুর শোনা গিয়েছে প্রদেশ কংগ্রেসের প্রদীপ ভট্টাচার্যের গলাতেও। তিনি বলেন, “আত্মসমর্পণ ছাড়া অন্য কোনও উপায় ছিল না। দলের চাপের মুখে পড়েই তাঁকে আদালতের দ্বারস্থ হতে হয়েছে।”
নির্বাচনের দিন বিকেলে সাহাপুরের ওই বুথে দলবল নিয়ে চড়াও হন দীপালিদেবী। ভোটকর্মী-সহ বিরোধীদের পোলিং এজেন্টকে মারধর করে ব্যাপক ভাবে ছাপ্পা ভোট দেওয়ার অভিযোগ ওঠে তাঁর বিরুদ্ধে। এর পর বুথের প্রিসাইডিং অফিসার সুখেন্দু রজক বিধায়ক-সহ আরও ২০ জনের বিরুদ্ধে সোনামুখী থানায় অভিযোগ করেন। তাঁর অভিযোগের ভিত্তিতে ওই দিন রাতেই পুলিশ ১০ জনকে গ্রেফতার করে। পরে আরও এক জনকে গ্রেফতার করা হয়। ঘটনার পর থেকেই অধরা ছিলেন দীপালিদেবী। পুলিশের তরফে দাবি করা হয় তিনি ‘পলাতক’। বিরোধীরা প্রশ্ন তোলে, পুলিশ কি বিধায়ককে আড়াল করছে?
শেষ পর্যন্ত এ দিন সকাল সাতটা নাগাদ বিষ্ণুপুর আদালত চত্বরে এসে হাজির হন সোনামুখীর বিধায়ক। বেলা ১০টা নাগাদ বিষ্ণুপুরের অতিরিক্ত মুখ্য বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট পবিত্র সেনের এজলাসে তাঁর জামিনের আবেদন করা হয়। দীপালিদেবীর আইনজীবী আদালতকে জানান, এক জন জনপ্রতিনিধিকে জামিন দেওয়া না হলে, এলাকার উন্নয়নের কাজ ব্যাহত হবে। শুধু তাই নয়, এখন বিধানসভার অধিবেশন চলছে। বিধায়কের সেখানে উপস্থিত থাকাটা জরুরি বলেও আদালতকে জানান ওই আইনজীবী।
কিন্তু এত দিন কোথায় ছিলেন দীপালিদেবী? বিচারকের এই প্রশ্নের পরিপ্রেক্ষিতে বিধায়কের তরফে জানানো হয়, অসুস্থতার কারণে তিনি বাইরে ছিলেন। তাই আদালতে আসতে পারেননি। এর পরে বিচারক তাঁর জামিন মঞ্জুর করেন।