একবালপুর থেকে উদ্ধার নিখোঁজ মা ও দুই মেয়ের মৃতদেহ

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৩ এপ্রিল ২০১৪ ২২:০০
Share:

ইলেকট্রিক মিস্ত্রি শুনে ফ্ল্যাটের দরজা খুলে দিয়েছিল ১৪ বছরের মেয়েটি। ঘরে ঢোকার পরেই সেই মিস্ত্রিরা হাতুড়ির ঘা বসিয়ে দিল ওই কিশোরীর কপালে। পলকে আর্তনাদ করে লুটিয়ে পড়ল সে। দিদির অবস্থা দেখে পালাতে চেষ্টা করল ১২ বছরের বোনও। কিন্তু তাকেও জাপটে ধরে হাতুড়ির ঘা মারল আততায়ীরা। মৃত্যু নিশ্চিত করতে এর পর দু’জনকেই শ্বাসরোধ করা হয়। এর পর ঘরের ভিতরে আততায়ীরা ওত পেতে রইল দুই কিশোরীর মায়ের জন্য। কিছু ক্ষণ পরে বাইরে থেকে কাজ সেরে ফ্ল্যাটে ঢুকলেন ওই কিশোরীদের মা। আচমকাই তাঁকে ঘিরে ধরে মাথায় হাতুড়ির ঘা বসিয়ে দিল আততায়ীরা। মেয়েদের মতো লুটিয়ে পড়লেন তিনিও। এর পর তাঁরও শ্বাসরোধ করল আততায়ীরা।

Advertisement

গত ২৯ মার্চ একবালপুর থানা থেকে ঢিল ছোঁড়া দূরত্বে একটি বহুতলের ফ্ল্যাটে ঘটনাটি ঘটেছিল। রবিবার ওই এলাকারই একটি মণিহারি দোকানের মেঝে খুঁড়ে মা ও মেয়েদের দেহ উদ্ধার করা হয়েছে। পুলিশের দাবি, ফ্ল্যাটের এই খুনের পিছনে মূল কারণ ওই ফ্ল্যাটটির দখলদারি-ই।

পুলিশ জানায়, নিহতদের নাম পুষ্পা সিংহ (৩৭), প্রদীপ্তি সিংহ (১৪) এবং আরাধনা সিংহ (১২)। রবিবার কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (প্রশাসন) মেহবুব রহমান বলেন, “পুষ্পাদেবী ও তাঁর মেয়েদের খুন করা ও লাশ গুম করার অভিযোগে মহম্মদ সিকন্দর, মহম্মদ আমিন, আসিফ হামজা এবং এক কিশোরকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সিকন্দরের দোকানের মেঝে খুঁড়ে পুষ্পাদেবী ও তাঁর মেয়েদের দেহ উদ্ধার করা হয়েছে।”

Advertisement

পুলিশ জানায়, পুষ্পাদেবীর স্বামী প্রদীপ সিংহ কলকাতায় একটি রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থায় চাকরি করতেন। ২০১০ সালে তিনি ট্রেন দুর্ঘটনায় মারা যান। স্বামী মারা যাওয়ার পর ক্ষতিপূরণ হিসেবে পাওয়া টাকা থেকে ১২ লক্ষ টাকা সেলামি দিয়ে সিকন্দরের কাছ থেকে একবালপুরে একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নেন পুষ্পাদেবী। তার পর থেকে ওই ফ্ল্যাটের বাসিন্দা সিকন্দরের সঙ্গে পারিবারিক ঘনিষ্ঠতাও গড়ে উঠেছিল তাঁর। কিন্তু সম্প্রতি ফ্ল্যাট ছাড়া নিয়ে সিকন্দরের সঙ্গে পুষ্পাদেবীর বিবাদ শুরু হয়।

কী সেই বিবাদ?

সম্প্রতি সিকন্দর পুষ্পাদেবীর কাছ থেকে কয়েক লক্ষ টাকার বিনিময়ে ফ্ল্যাটের স্বত্ত্বাধিকার নিতে চায়। কিন্তু সেই দর পুষ্পাদেবীর পছন্দ হয়নি বলে সে পুলিশকে জানিয়েছে। জেরায় সিকন্দর দাবি করেছে, অন্য এক জনের কাছে বেশি দরে পুষ্পাদেবী স্বত্ত্বাধিকার বেচতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ফ্ল্যাটের দখল নিতে মরিয়া হয়ে উঠেছিল সে। পুলিশের অনুমান, পুষ্পাদেবীদের দেহ গুম করে নিজেকে স্বত্ত্বাধিকার বলে প্রমাণ করত সে। তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, মা ও মেয়েরা নিখোঁজ হওয়ার পরে সিকন্দর এলাকার লোকদের কাছে বলেছিল, ওই ফ্ল্যাটের অধিকার তাকেই দিয়ে গিয়েছেন পুষ্পাদেবী। এখন থেকে ওই ফ্ল্যাটের মালিকানা তারই বলে এলাকায় দাবি করছিল সিকন্দর।

পুলিশ সূত্রের খবর, অভিযোগ দায়েরের পর থেকে বার বার থানায় এসেছেন পুষ্পাদেবীর পরিজনেরা। সিকন্দরের সঙ্গে পুষ্পাদেবীর বিরোধের কথাও বলেছেন। কিন্তু তার পরেও সিকন্দরকে ধরতে এত সময় লাগল কেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে লালবাজারেরর একাংশই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন