‘দিদি’কে ঠুকেই বাজিমাত বাবুলের

কালো টি-সার্টের উপর ছাই রঙা ব্লেজার। চোখে সানগ্লাস। বেশ কয়েক দিনের না কাটা দাড়িতে দিব্বি মানিয়েছিল তাঁকে। দুপুর তখন প্রায় পৌনে দু’টো। ধর্মতলায় ভিক্টোরিয়া হাউসের সামনে বিজেপি-র সভামঞ্চে এলেন তিনি। মঞ্চে তখন ভাষণ দিচ্ছেন বসিরহাট দক্ষিণ কেন্দ্রের বিজেপি বিধায়ক শমীক ভট্টাচার্য। শমীকের ভাষণ শেষ হওয়ামাত্রই মাইক্রোফোনের কাছে পৌঁছে গেলেন তিনি।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ৩০ নভেম্বর ২০১৪ ১৮:৩৬
Share:

মঞ্চে আক্রমণাত্মক বাবুল। ছবি: দেবাশিস রায়।

কালো টি-সার্টের উপর ছাই রঙা ব্লেজার। চোখে সানগ্লাস। বেশ কয়েক দিনের না কাটা দাড়িতে দিব্বি মানিয়েছিল তাঁকে।

Advertisement

দুপুর তখন প্রায় পৌনে দু’টো। ধর্মতলায় ভিক্টোরিয়া হাউসের সামনে বিজেপি-র সভামঞ্চে এলেন তিনি। মঞ্চে তখন ভাষণ দিচ্ছেন বসিরহাট দক্ষিণ কেন্দ্রের বিজেপি বিধায়ক শমীক ভট্টাচার্য। শমীকের ভাষণ শেষ হওয়ামাত্রই মাইক্রোফোনের কাছে পৌঁছে গেলেন তিনি।

সঞ্চালক অসীম সরকার তাঁকে তখন আটকানোর চেষ্টা করছেন, ‘তুমি নও, এখনও তোমার সময় আসেনি!’ কিন্তু কে শোনে কার কথা!

Advertisement

‘না, না, আমারই সময়।’ বলে তাঁকে এক পাশে সরিয়ে দিয়ে জনতার মুখোমুখি হলেন আসানসোল কেন্দ্রের সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়। রবিবারের ধর্মতলায় বিজেপির সভায় তিনি অন্যতম তারকামুখ।

তার পরের দশ মিনিট ভাষণ নয়, বলে বলে আপার কাট মারলেন বাবুল। ‘হীরক রাজার দেশ’ থেকে ‘শোলে’— কখনও গাইলেন ‘আহা কী আনন্দ, আকাশে বাতাসে’, কখনও বা আওড়ালেন গব্বরের ডায়ালগ— ‘যো ডর গয়া সমঝো ও মর গয়া।’

‘লাইন ভেঙে’ আগে মঞ্চে ওঠার জন্য হাত তুলে বিশাল জনতার কাছে শুরুতেই মাফ চেয়ে নিলেন। নিজস্ব ভঙ্গিমায় জনতাকে জানালেন, বিকেল ৪টের মধ্যেই দিল্লি পৌঁছতে হবে। কারণ, কিশোর কুমারের স্মরণসভায় তাঁর অনুষ্ঠান রয়েছে যে! পর ক্ষণেই জানালেন, আজ ভাষণ নয়, সব কথাই যেন গান হয়ে যাচ্ছে।

তবে এ দিন ‘হিট’ করে গেল বাবুলের ‘দিদি’ ডাক। বারে বারেই বললেন, “আরে... দিদি!” কখনও বললেন, “দিদি, যেখানেই থাকুন এই আওয়াজ আপনার কানে ঠিক পৌঁছবে।”

কোন আওয়াজ?

২০১৬-র মধ্যে তৃণমূলকে নির্মূল করার অঙ্গীকার করে গেলেন তিনি। সেই সঙ্গে প্রতিশ্রুতি দিলেন, তিন বছরের তৃণমূলী এই স্বৈরাচারী শাসন ভেঙে নতুন বাংলা গড়ে তোলা হবে।

এ দিন প্রথম থেকেই রাজ্যের শাসক দলের প্রতি বেশ আক্রমণাত্মক ছিলেন বাবুল। সারদা কাণ্ড থেকে খাগড়াগড় বিস্ফোরণ— কিছুই বাদ যায়নি। তাঁর অভিযোগ, ৩৪ বছরে সিপিএমের আমলে বাংলার অবনতি হয়েছে। বিগত তিন বছরে তৃণমূল তাকে তলানিতে নিয়ে এসেছে। তিনি বলেন, “লোকজন সরকারের হাত পুড়ল বলে চেঁচাচ্ছে। সরকারের নতুন করে হাত পোড়ার কি কিছু আছে?” মুখ যে অনেক আগেই পুড়েছে, তা এ দিন বারে বারে মনে করিয়ে দিয়েছেন তিনি। জানালেন, সভা করা থেকে বিজেপিকে আটকাতে অনেক রকম চেষ্টা করা হয়েছে। আগামীতেও হয়তো হবে। কিন্তু লক্ষ লক্ষ বাংলার মানুষকে আটকানো সম্ভব নয়। কারণ, “২০১৬-তেই তৃণমূলের শেষ ঘণ্টা বাজতে চলেছে” বলে আত্মবিশ্বাসী তিনি। জানালেন, সেই শুরুর শুরু এ দিনের সভা।

রসিকতার ঢঙেই জানালেন, তৃণমূল নেতাদের তো দড়ি দিয়েও বাঁধা যাবে না। তার থেকে বরং ৫০০ মিটার দড়ি কিনে তিনি ‘দিদি’-র কাছে দিয়ে আসবেন। তা হলে হয়তো দেখা যাবে শাসক দলের নেতা-মন্ত্রীদের কাছা খুলে সেই দড়ি পরতে হচ্ছে।

“আরে... দিদি!” মঞ্চ ছাড়ার আগে তুরুপের তাসটা ছাড়লেন। “কালীঘাটে বসে সমস্ত কালি নিজের গায়ে মাখার দায়িত্ব নিয়েছেন!”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন