দখলে এসেছে মসুল বাঁধ, দাবি ইরাকি প্রশাসনের

মসুল বাঁধ পুনরুদ্ধার করল কুর্দ ও ইরাকি সেনার যৌথবাহিনী। সোমবার ইরাকের সরকারি টেলিভিশনের তরফে এমনটাই দাবি করা হয়েছে। কিন্তু ইসলামিক স্টেটের (আইএস) জঙ্গিদের দাবি, বাঁধটি এখনও তাদের দখলেই রয়েছে। পাশাপাশি, তাদের হামলায় কুর্দ ও ইরাকি সেনার যথেষ্ট ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করেছে ওই জঙ্গি সংগঠন। স্থানীয় সূত্রে খবর, ভারতীয় সময় অনুযায়ী এ দিন বিকেল পর্যন্ত লড়াই চলেছে।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ১৮ অগস্ট ২০১৪ ১৮:৫৯
Share:

মসুল বাঁধ দখলের পথে কুর্দ সেনা। ছবি: এএফপি।

মসুল বাঁধ পুনরুদ্ধার করল কুর্দ ও ইরাকি সেনার যৌথবাহিনী। সোমবার ইরাকের সরকারি টেলিভিশনের তরফে এমনটাই দাবি করা হয়েছে। কিন্তু ইসলামিক স্টেটের (আইএস) জঙ্গিদের দাবি, বাঁধটি এখনও তাদের দখলেই রয়েছে। পাশাপাশি, তাদের হামলায় কুর্দ ও ইরাকি সেনার যথেষ্ট ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করেছে ওই জঙ্গি সংগঠন। স্থানীয় সূত্রে খবর, ভারতীয় সময় অনুযায়ী এ দিন বিকেল পর্যন্ত লড়াই চলেছে।

Advertisement

চলতি মাসের ৭ তারিখ মসুলের ৫০ কিলোমিটার উত্তরে টাইগ্রিস নদীর উপরে নির্মিত মসুল বাঁধ ও জলবিদ্যুৎকেন্দ্রটি দখল করে আইএস জঙ্গিরা। বাঁধের উপরে তাদের পতাকা উড়তেও দেখা যায়। আইএস-এর দখলে আসার আগে এই জলবিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ সংযোগ বিছিন্ন করে দেওয়া হয়েছিল। বাঁধটি দখলের পরে ইঞ্জিনিয়ার নিয়ে এসে সেই সংযোগ পুনঃস্থাপন করে আইএস। পাশাপাশি, বিদ্যুৎকেন্দ্রটি সচল রাখতে স্থানীয় লোকদের নিয়ে দলও গঠন করে আইএস জঙ্গিরা।

বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা ছিল এই বাঁধটি যুদ্ধের প্রয়োজনে কাজে লাগাতে পারে আইএস জঙ্গিরা। ট্রাইগ্রিস নদীর উপরে ৩.২ কিলোমিটার দীর্ঘ এই বাঁধটি সাদ্দাম হুসেনের আমলে নির্মিত। অন্যান্য বাঁধের মতো সেচ, বিদ্যুৎ উৎপাদন ও বন্যা নিয়ন্ত্রণে উত্তর ইরাকে এই বাঁধটির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। উত্তর ইরাকের বড় অংশের বিদ্যুৎ সরবরাহ এই বাঁধের উপরে নির্ভরশীল। এর পিছনে প্রায় এক কোটি ২৫ লক্ষ কিউবিক মিটার জলধারণে সক্ষম একটি জলাধার রয়েছে। বাঁধটির লকগেট খুলে দিলে বা বাঁধটি ধ্বংস করা হলে ১০ ফুট উঁচু জলস্রোত নীচে নেমে আসবে। এতে ১৭ লক্ষ বাসিন্দার মসুল শহর সম্পূর্ণ প্লাবিত তো হবেই, পাশাপাশি, বাগদাদেও বন্যার আশঙ্কা থাকবে।

Advertisement

যুদ্ধের প্রয়োজনে বাঁধকে ধ্বংস করার নজির ইতিহাসে আছে। ১৯৩৮-এ জাপানি সেনার অগ্রগতি আটকাতে চিনা সেনা হোয়াংহো নদীর উপরে এক গুরুত্বপূর্ণ বাঁধ ধ্বংস করেছিল। এতে কয়েক লক্ষ চিনা নাগরিকের প্রাণ যায়। মসুল দখলের আগে আইএস জঙ্গিরা ফালুজা বাঁধের দখল নিয়েছিল। ইরাকি সেনা সেটি দখল করতে যাওয়ার সময়ে বাঁধটির লকগেট খুলে দেওয়া হয়। এতে এক দিকে ইরাকি সেনাকে যেমন আটকে দেওয়া যায়, অন্য দিকে, বেশ কয়েকটি গ্রাম ভেসে যায় জলের তোড়ে, প্রাণহানিও ঘটে। আমেরিকা ও ইরাকি প্রশাসনের আশঙ্কা মসুল বাঁধের ক্ষেত্রেও আইএস জঙ্গিরা একই কাজ করতে পারে। তাই উত্তর ইরাকে আইএস-এর অগ্রগতি ঠেকানোর পাশাপাশি এই বাঁধটি পুনরুদ্ধারে জোর দেওয়া হয়। মার্কিন প্রশাসন সূত্রে খবর, গঠনগত সমস্যার জন্য বাঁধটির ভিত এমনিতেই দুর্বল। বেশ কিছু জায়গায় ফাটলও ধরেছে। ২০০৭-এ মার্কিন সেনা বাঁধটির কয়েকটি জায়গায় মেরামতির কাজ করেছিল।

মসুল বাঁধটি পুনর্দখল করতে ইরাকি সেনা ও কুর্দ পেশমেরগা যোদ্ধাদের পাশাপাশি মার্কিন বায়ুসেনার বোম্বার, ফাইটার জেট ও ড্রোন অংশ নেয়। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সবুজ সঙ্কেত পাওয়ার পরে ভারতীয় সময় শনিবার সকাল থেকে মসুল বাঁধের আশেপাশে প্রায় ২৫ বার আক্রমণ চালায় মার্কিন বায়ুসেনা। এতে আইএস জঙ্গিদের ৩০টি সাঁজোয়া গাড়ি ধ্বংস হয়েছে বলে বায়ুসেনার দাবি। ইরাকি সেনার মুখপাত্র লেফ্টেন্যান্ট জেনারেল কোসিম আট্টা জানিয়েছেন, বাঁধটি সম্পূর্ণ দখলে চলে এসেছে। যদিও গত কাল কুর্দ প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছিল, বাঁধটির তিন কিলোমিটার দূরে যুদ্ধ চলছে। যদিও আইএস জঙ্গিরা এই দাবি অস্বীকার করেছে। স্থানীয় সূত্রে খবর, ইরাকি সেনা ও কুর্দ যোদ্ধারা বাঁধটির কাছাকাছি চলে এলেও এখনও সম্পূর্ণ দখলে নিতে পারেনি। বাঁধের আশেপাশে তীব্র লড়াই চলছে। কঠিন বাধার সম্মুখীন হতে হচ্ছে বলে কুর্দ প্রশাসনের তরফে স্বীকার করে নেওয়া হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন